শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মন্ত্রী-এমপির তদবিরে হিমশিম খাচ্ছে কমিটি

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

৪৮০০ হজযাত্রী কোটা বণ্টনে ধীরগতি : ৩৭টি এজেন্সি এখনো মুনাজ্জেম নেয়নি
শামসুল ইসলাম : চার হাজার আটশ’ হজযাত্রীর কোটা বণ্টনে ধীরগতিতে এজেন্সিগুলোর মাঝে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৮ জুলাই সউদী হজ মন্ত্রণালয় সরকারি কোটার অব্যবহৃত ৪ হাজার ৮০০ হজযাত্রীর কোড পরিবর্তন করে বেসরকারি কোডে স্থানান্তর করেছে।
এতে চলতি বছর প্রাক-নিবন্ধনকৃত প্রায় ৪০ হাজার বেসরকারি হজযাত্রীর মধ্য থেকে উল্লিখিত হজযাত্রীদের কোটা বিভিন্ন হজ এজেন্সির মাঝে সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের প্রক্রিয়া চলছে। ৪ হাজার ৮শ’ হজযাত্রীর কোটা হজ এজেন্সিগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ দেয়ার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের জোর সুপারিশসহ লিখিত আবেদন ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা পড়েছে। সরকার গঠিত ৯ সদস্যবিশিষ্ট হজ ২০১৬ ব্যবস্থাপনা তদারকি ও সমন্বয় কমিটির নেতৃবৃন্দ মন্ত্রী-এমপিদের তদবিরে হজযাত্রী কোটা বণ্টনে বর্তমানে হিমশিম খাচ্ছেন। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামীকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশকোনাস্থ হজ অফিসে হজ ব্যবস্থাপনার (২০১৬) কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। প্রধানমন্ত্রী হাজী ক্যাম্পে অবস্থানরত হজযাত্রীদের সাথে কুশল বিনিময় করবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। আগামী ৪ আগস্ট বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট ও ৫ আগস্ট সাউদিয়ার প্রথম হজ ফ্লাইট জেদ্দার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবে। চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজযাত্রী হজে যাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার ২শ’ জন বাকি সব বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন।
গত রোববার ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের দফতরে হজ ব্যবস্থাপনা তদারকি ও সমন্বয় কমিটি আহ্বায়ক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সউদী-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি আলহাজ বজলুল হক হারুণ এমপির নেতৃত্বে কমিটির সদস্যগণ হজের সার্বিক বিষয়সহ হজযাত্রী কোটা বণ্টনে দীর্ঘ আলোচনায় মিলিত হয়েও বণ্টন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেননি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আলোচনা সভায় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ আশকোনাস্থ হজ অফিসের পরিচালক হজ আবু সালেহ মোস্তফা কামালের হজযাত্রীদের হজ ভিসার ডিও ইস্যুর ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা এবং ২-১ দিন পর্যন্ত ডিও’র ফাইল স্তূপ করে ফেলে রাখার কড়া প্রতিবাদ জানান। হজ ব্যবস্থাপনা তদারকি ও সমন্বয় কমিটি আহ্বায়ক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ও সউদী-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি আলহাজ বজলুল হক হারুন এমপির হজযাত্রীদের হজ ভিসার ডিও লেটার তাৎক্ষণিকভাবে ইস্যু করার জন্য জোর তাগিদ দেন। আলহাজ বজলুল হক হারুণ এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি দিকনিদের্শনায় সুষ্ঠু ও সুন্দর হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। তিনি বলেন, আল্লাহর মেহমান হজযাত্রীদের সেবা প্রদানে কারো গাফলতি বরদাশত করা হবে না। উল্লেখ্য, পরিচালক হজ আবু সালেহ মোস্তফা কামাল একটি চিঠিতে হজ এজেন্সিগুলোতে লিখিতভাবে এক আদেশে বলেন, হজযাত্রীদের ভিসার ডিও লেটার ইস্যু করতে কমপক্ষে দু’দিন সময় লাগবে। পরিচালক হজ ভিসার ডিও ইস্যুতে গড়িমসি করায় বিমানের প্রথম দিকের হজ ফ্লাইট ও সাউদিয়ার প্রথম দিকের হজ ফ্লাইট খালি যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে ভুক্তভোগী হজ এজেন্সিগুলো হজ ভিসার ডিও লেটারের জন্য ৮-৯ ঘণ্টা করে অপেক্ষা করে চরম হয়রানির শিকার হন। হজ অফিস থেকে গতকাল একাধিক হজ এজেন্সির মালিক ডিও লেটার ইস্যুতে চরম হয়রানির বিষয়টি পত্রিকা অফিসে ফোন করে জানান। পরে রোববার ধর্মমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে গভীর রাত পর্যন্ত সভা করেও হজযাত্রী কোটা বণ্টনের কার্যক্রম সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি।
গত ২৮ জুলাই অব্যবহৃত ৪ হাজার ৮০০ হজযাত্রীর কোড পরিবর্তন হয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে এলেও তা ত্বরিত বণ্টনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ শাখায় এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এ ব্যাপারে কোনো সন্তোষজনক জবাব মিলছে না। গতকালও হজযাত্রী কোটা বণ্টনের কাজ সম্পন্ন হয়নি। অব্যবহৃত হজযাত্রী কোটা বণ্টনের কার্যক্রম সম্পন্ন না হওয়ায় সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলো সউদী আরবে গিয়ে মুনাজ্জেম কার্ড সংগ্রহ করে সউদী হজ মন্ত্রণালয়ে স্ব স্ব হজ এজেন্সির হজ কার্যক্রমের ফাইল ক্লোজ করতে পারছে না। এ নিয়ে মক্কায় অবস্থানরত আড়াইশ’ হজ এজেন্সির মালিক চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। গতকাল মক্কা থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সূত্রমতে, গতকাল পর্যন্ত মক্কায় ৩৭টি হজ এজেন্সি মুনাজ্জেম কার্ড সংগ্রহ করেনি। এসব এজেন্সিগুলো হচ্ছে আল-নূর ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং ১৬৬৯-১৬০ জন হজযাত্রী), ফারহান এভিয়েশন সার্ভিসেস (মুনাজ্জেম নং-১৭৮১-১৮১ জন হজযাত্রী), লাব্বায়েক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-১৮৩৭-২১৮ জনহজযাত্র), প্যান ব্রাইট ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-২০১৩-১৭৩ জন হজযাত্রী), চিটাগাং এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিঃ (মুনাজ্জেম নং-২০৩৯-১৬৩ জন হজযাত্রী), হলিউড ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লিঃ (মুনাজ্জেম নং-২১৩১-১৭৩ জন হজযাত্রী), ওয়ার্ল্ড ভিউ (মুনাজ্জেম নং-২৩৪২-১৭২ জন হজযাত্রী), আর আর ট্রাভেলস লিঃ (মুনাজ্জেম নং-৪০২৯-১৮৩ জন হজযাত্রী), ফারুক ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৪০৩৭-১৫২ জন হজযাত্রী), আজমল ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৪১০৮-২৬৮ জন হজযাত্রী), এক্সেলিসি শিউর ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৪১১৩-১৯৮ জন হজযাত্রী), এয়ার ট্যুরস ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৪১৫৮-১৯৯ জন হজযাত্রী), কন্টিনেন্টাল এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৫০০৯-১৭৬ জন হজযাত্রী), কক্সবাজার ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৫০১০-২১৮ জন হজযাত্রী), ইমন ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৫০৪১-১৭৩ জন হজযাত্রী), স্বজন ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৫০৪১-১৫০ জন হজযাত্রী), বেস্ট ফ্লাই ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৫১৫০-১৯১ জন হজযাত্রী), আল-মদিনা হজ এন্ড ট্রাভেলস সার্ভিস (মুনাজ্জেম নং-৫১৬৯-১৭২ জন হজযাত্রী), হাজী এয়ার মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৫১৯৮-২০৬ জন হজযাত্রী), সেনাটোর এয়ার ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৫৪৬৬-১৯৭ জন হজযাত্রী), লাব্বায়েক হজ সার্ভিসেস (মুনাজ্জেম নং-৫৪৯৮-১৯২ জন হজযাত্রী), এস এম ফারহাদ এয়ার ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৫৬৮০-১৮৮জন হজযাত্রী), সাউথ এশিয়ান ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৫৭০৬-১৫০ জন হজযাত্রী), জাবালে নূর ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৫৭৬৩-১৮৭জন হজযাত্রী), হাজরে আসওয়াদ ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৫৭৬৫-২৭৫ জন হজযাত্রী), গোল্ডজয় ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৬৪০৬-১৯৮ জন হজযাত্রী), সিটি নিয়ন ট্রাভেলস (মুনাজ্জেম নং-৬৯৩৮-১৫৬ জন হজযাত্রী), আদিব এয়ার ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৬৯৪৯-১৬০ জন হজযাত্রী), ফোর এস ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস লিঃ (মুনাজ্জেম নং-৮০৩৬-১৬০ জন হজযাত্রী), সমকাল এয়ার সার্ভিস (মুনাজ্জেম নং-৮২১৪-২৮৪ জন হজযাত্রী), ডোলা ফকির এয়ার সার্ভিস (মুনাজ্জেম নং-৯০৫১-২৭৬ জন হজযাত্রী), শোভা ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৯২৫৭-১৯২ জন হজযাত্রী), এম এম ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৯২৭০- ১৭৩ জন হজযাত্রী), পেনাং ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস (মুনাজ্জেম নং-৯৪১৫-১৬৪ জন হজযাত্রী), আরব বাংলা ওভারসীজ (মুনাজ্জেম নং-৯৪২২-১৮৭ জন হজযাত্রী), ব্রিটানিয়া এভিয়েশন (মুনাজ্জেম নং-৯৪৪৯-১৭২ জন হজযাত্রী), শুভ ইন্টারন্যাশনাল (মুনাজ্জেম নং-৯৫২২-২৯৯ জন হজযাত্রী)। হাব সভাপতি আলহাজ মোঃ ইব্রাহিম বাহার গতকাল রাতে ইনকিলাবকে বলেন, হজযাত্রীর কোটার চাহিদা অনেক বেশি। ৪৮০০ অব্যবহৃত হজযাত্রীর কোটা বন্টনে হিমশিম খেতে হচ্ছে হজ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে। এক প্রশ্নের জবাবে হাব সভাপতি বলেন, ৩৭টি হজ এজেন্সি এখনো মুনাজ্জেম নেয়নি। মক্কায় বসে প্যান ব্রাইট ট্রাভেলসের রুহুল আমিন মিন্টুরা উল্লেখিত ৩৭টি এজেন্সির মাঝে সিন্ডিকেট করে কোটা নেয়ার অপতৎপরতায় লিপ্ত । হাব সভাপতি বলেন, তবে সউদী হজ মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় আড়াইশ’ হজ এজেন্সি তাদের হজ কার্যক্রমের ফাইল গতকালও ক্লোজ করেনি। এসব হজ এজেন্সি হজযাত্রী কোটার জন্য আবেদন করে থাকলে কম-বেশি করে তাদের মাঝে হজযাত্রী কোটা বন্টন করা উচিত বলে হাব সভাপতি উল্লেখ করেন। হজ ব্যবস্থাপনা ৯ সদস্য কমিটির একজন সদস্যকে কোটা বন্টনের বাছাইয়ের দায়িত্ব দেয়ার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর করা হলে হাব সভাপতি তা নাচক করে দেন। তিনি বলেন, ৯ সদস্য কমিটি হজযাত্রী কোটা বন্টনে স্বচ্ছতার পরিচয় দেয়ার চেষ্টা করছে। হজ অফিস থেকে হজযাত্রীদের হজ ভিসার ডিও ইস্যুতে অহেতুক বিলম্ব ও হয়রানির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন, হজযাত্রীদের ডিও ইস্যুতে কালক্ষেপণ করা হলে বিমান ও সাউদিয়ার একাধিক হজ ফ্লাইট খালি যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য হজ অফিসের পরিচালক হজ আবু সালেহ মোস্তফা কামালকেই দায়-দায়িত্ব বহন করতে হবে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম ও দ্বিতীয় হজ ফ্লাইটের সরকারি হজযাত্রীরা গতকাল হজ অফিস থেকে তাদের ল্যাগেজ নিয়ে গেছেন। আজ মঙ্গলবার থেকে সরকারি হজযাত্রীরা হাজী ক্যাম্পের ডরমেটরিতে উঠতে শুরু করবেন। গতকাল পর্যন্ত ৫৫ হাজার ৪শ’ ৯ জন হজযাত্রীর ভিসা লজমেন্টের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ১৮ হাজার ২শ’ ৯৯ জন বেসরকারি হজযাত্রীর মোফার জন্য সউদী হজ মন্ত্রণালয়ের তথ্যাদি প্রেরণ করা হয়েছে। ২৭শ’ সরকারি হজযাত্রীর মোফার জন্য তথ্যাদি সউদী হজ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ২ হাজার সরকারি হজযাত্রীর হজ ভিসা পাওয়া গেছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আইটি এ তথ্য জানিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন