রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দুর্ভোগের শেষ নেই

প্রকাশের সময় : ২ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৪ পিএম, ১ আগস্ট, ২০১৬

ইনকিলাব রিপোর্ট : উজান থেকে গড়িয়ে আসা পানিতে প্লাবিত হচ্ছে ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা। বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ, টঙ্গী খাল ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এতে করে টঙ্গী, গাজীপুর, নরসিংদী, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ডেমরা, কেরানীগঞ্জ ও ঢাকার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি নদীর পানি কমতে শুরু করায় সেখানকার কয়েকটি জেলার বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে বাঁধে ভাঙ্গন, রাস্তায় ভেঙ্গে যাওয়া, অনেক ব্রিজ ও কালভার্ট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় সেখানকার প্লাবিত মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। সেই সাথে রয়েছে খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির অভাব। রয়েছে জ্বালানি সঙ্কট। অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে থাকায় সড়ক পথে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। আবার নৌপথেও ত্রাণ যেতে দেরি হচ্ছে নদীতে স্রোত বেশি থাকার কারণে। বানভাসী মানুষের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় সরকারি ত্রাণ সহায়তা একেবারেই অপ্রতুল। শুধুমাত্র কুড়িগ্রামেই সাড়ে ৬ লাখ মানুষ ত্রাণের জন্য হাহাকার করছে। সেখানকার ৫৫টি আশ্রয় কেন্দ্র, বাঁধের রাস্তা ও উঁচু স্থানে আশ্রিতরা এখনও ঘরে ফিরতে পারেনি। ফলে খোলা আকাশের নিচে তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। দেশের বন্যাকবলিত ১৮টি জেলার মধ্যে ১০টি জেলার ৪৩টি বন্যাদুর্গত উপজেলায় মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। বন্যায় গত ৭ দিনে এসব জেলায় অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা কমপক্ষে ৪ হাজার। স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শুধুমাত্র পানিতে পড়েই মৃত্যু হয়েছে ৩৬ জনের। বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, বজ্রপাত, সাপের কামড়, পানিতে ডুবে মৃত্যু, চর্মরোগ, চোখের প্রদাহ, আঘাত এবং জ্বরে আক্রান্ত রোগির সংখ্যাই বেশি বলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে জানা যায়।
গতকাল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকেও দেশের বন্যা পরিস্থিতি আলোচনা হয়েছে। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক মন্ত্রীকে নিজ নিজ এলাকায় বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, ‘ত্রাণসামগ্রী নিয়ে কোনো টালবাহানা সহ্য করা হবে না। কোনো জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তা ত্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেললে শাস্তি পেতে হবে। গতকাল তিনি মানিকগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে যেতে তিনি একথা বলেন। তিনি বলেন, সারা দেশে ১৬টি জেলা বন্যাকবলিত হয়েছে। আরো কয়েক দিন হয়তো এই পানি থাকবে। এসব জেলার দুর্গতদের জন্য নগদ সাড়ে ছয় কোটি টাকা ও ১৩ হাজার টন ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এদিকে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ীÑ ব্রহ্মপুত্র, যমুনা-সুরমা ও কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি সমতলে হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে গঙ্গা স্থিতিশীল রয়েছে। তবে পদ্মা অববাহিকার নদীগুলোর পানি সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদ-নদী সংলগ্ন গাইবান্ধা, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া এবং ধরলা নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে। একইসাথে পদ্মা নদী সংলগ্ন রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও শরিয়তপুর জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত থাকবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর-পশ্চিম এবং পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থিত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এটি উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি করছে। এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্র বন্দরের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সঙ্কেত দেখানো হয়েছে। লঘুচাপের কারণে সাগর ফুলে উঠেছে। এতে করে উজানের পানি মেঘনা নদী দিয়ে সাগরে নামতে পারছে না। ফলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা দেখছেন না দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা। বরং লঘুচাপের প্রভাবে অধিক বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা থাকায় নদ-নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে বানের পানিতে হাজার হাজার একর খেতের ফসল, সবজি তলা পানিতে ডুবে যাওয়ায় কৃষি নির্ভর অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষক পড়েছে মাথায় হাত। আর সবজি সঙ্কট দেখা দেয়ায় বাজারে সকল কাঁচা তরিতরকারির দাম বেড়ে গেছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জানিয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় এ পর্যন্ত ৪২৯টি অবকাঠামো এবং ১০৭ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাউবো মাঠ প্রশাসন থেকে জরুরিভিত্তিতে এসব বাঁধ ও স্থাপনা মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৩৩৮ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ব্যপারে পাউবো মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সরকার অর্থ না দিলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি বলেন, এমনিতেই পাউবো জরুরি কাজের জন্য বছরে বরাদ্দ পায় মাত্র সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা। অথচ প্রয়োজন যেখানে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা। সেখানে এই জরুরিভিত্তিতে অর্থ বরাদ্দ না করলে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি সামাল দেয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানায়- কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ৩২ সেন্টিমিটার, গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৪১ সেন্টিমিটার, চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি বিপদমীসার ৪২ সেন্টিমিটার, বাহাদুরাবাদে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৫ সেন্টিমিটার, সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭৪ সেন্টিমিটার, কাজিপুরে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার, আরিচাতে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার, সিংড়ায় গুর নদীর পানি বিদপসীমার ১৭ সেন্টিমিটার, বাঘাবাড়িতে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১০৬ সেন্টিমিটার, এলাসিনে ধলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার ১৩৭ সেন্টিমিটার, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার, তরাঘাটে কালিগঙ্গা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার, জাগিরে ধল্লেশরী নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার, গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার, ভাগ্যকূলে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার, সুরেশ্বরে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, জারিয়া জাঙ্গাইলে কংস নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস নদীর পানি বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
শরীয়তপুরে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত
শরীয়তপুর জেলা সংবাদদাতা : প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই শরীয়তপুরের নতুন নতুন এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন সড়কে পানি উঠায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বন্যার পানিতে ডুবে এ পর্যন্ত ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার জাজিরা পৌরসভার দক্ষিণ বাইকশা গ্রামের জসিম খানের মেয়ে সুমাইয়া (৫) ও জাজিরা উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের চরধুপুরিয়া গ্রামের আলী হোসেন মোল্যার এক মাত্র ছেলে জয় (৬) পানিতে ডুবে মারা যায়।
পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় আরো নতুন ২ ইউনিয়নসহ শরীয়তপুর জেলার ১৮ ইউনিয়নের ৭৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেই সাথে পদ্মার ভাঙন অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের মানুষ সর্বশান্ত হচ্ছে। বেকার হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর পরিবারের মানুষেরা। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে মৌসুমী সবজি বাগান, সেই সাথে ডুবে নষ্ট হচ্ছে শীতের আগাম সবজির বীজতলা। ইতিমধ্যেই জাজিরা নড়িয়া সড়ক, নশাশন নড়িয়া সড়কসহ ৩টি সড়কে পনিতে ডুবে গেছে।
এদিকে পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে জাজিরা, নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় সাড়ে ৩ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়েছে। জাজিরার বড়কান্দি, পালেরচর ও কুন্ডেরচর ইউনিয়নের আরো তিন শতাধিক পরিবার ভাঙনের ভয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরভাগা ও উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ২শ’ পরিবার তাদের বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে। পদ্মার ভাঙনে হারিয়ে গেছে উত্তর তারাবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্টেশন বাজার, এসডিএস নির্মিত বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র, দুটি মসজিদসহ বেশকিছু বাড়ি-ঘর।
শিবচরে দুর্ভোগ চরমে
মাদারীপুর জেলা ও শিবচর উপজেলা সংবাদদাতা : মাদারীপুরের শিবচরের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী হয়ে পড়ছে হাজার হাজার মানুষ। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য সঙ্কটের পাশাপাশি গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে পানিবন্দী মানুষরা। অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে শিবচর উপজেলার মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন চরজানাজাতের চারটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ মানবেতর জীবন-যাপন করছে।
অপরদিকে, পদ্মা নদী ও আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে প্রায় তিন শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় আশ্রয় সঙ্কটে পড়েছে নদী ভাঙনকবলিত মানুষরা। বন্যা ও নদী ভাঙনকবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি, খাবার ও আবাসস্থলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গত শনিবার থেকে দুর্গতদের মধ্যে সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মার শিবচর উপজেলার পদ্মার চরে অবস্থিত চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি, মাদবরেরচর ও বন্দরখোলা ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের ৪টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে ঘরের মধ্যেই মাচা (উঁচুস্থান) তৈরি করে বসবাস করছেন। অপরদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মা ও আড়িয়াল খাঁ নদীতে ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় দুই শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। চরাঞ্চল ছাড়াও আড়িয়াল খাঁ নদের তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৫ হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আড়িয়াল খাঁ নদের ভাঙনে সন্ন্যাসীরচর, বহেরাতলা উত্তর, বহেরাতলা দক্ষিণ ও শিরুয়াইল শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বন্যা ও নদী ভাঙনকবলিত এলাকার ফসলি মাঠ, টিউবওয়েল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
চরভদ্রাসনে শিশু ও বৃদ্ধের মৃত্যু
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা : ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরহরিরামপুর ইউনিয়নে গত দু’দিনে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু ও এক বৃদ্ধ মারা গেছে। এ নিয়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা দুই। সোমবার দুপুর ২টায় ওই ইউনিয়নের ছমির বেপারী ডাঙ্গী গ্রামের ফরহাদ ফকিরের শিশু পুত্র তাইম (২) উঠানের পানিতে পড়ে মারা গেছে। পরিবারের সদস্যরা প্রায় আধঘণ্টা পর শিশুটির লাশ বাড়ির উঠোন থেকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পারভেজ চৌধুরী, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মানস বোস শোকাহত শিশুটির পরিবারে সাক্ষাৎ করে নগদ ৫ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
এছাড়া গত রোববার দুপুর ১২টায় ওই ইউনিয়নের চরশালেপুর পূর্ব গ্রামের মৃত সাদী বেপারীর ছেলে মুদি ব্যবসায়ী আলী বেপারী (৭৪) দোকানে যাওয়ার পথে কলা গাছের ভেলা থেকে পড়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়। প্রায় একঘণ্টা পরে তীব্র খর¯্রােতে পার্শ্ববর্তী ধঞ্চে ক্ষেতের সাথে লাশটি ভাসতে দেখে এলাকাবাসী উদ্ধার করেন। উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটিকে নগদ ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আমির হোসেন খান জানান, “বন্যায় ইউনিয়নের অধিকাংশ পরিবার পানবন্দী অবস্থায় চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। তাই দুর্গত পরিবারগুলোকে তিনি আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান”।
এদিকে চরভদ্রাসন উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের নতুনডাঙ্গী বেড়িবাঁধ সড়কের প্রায় ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে গত রোববার দিবাগত রাত ৯টায় ভেঙে বন্যার পানি আশপাশের ৫টি গ্রাম প্লাবিত করেছে। এ সময় স্রোতের তোড়ে ৪টি বসতভিটে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর জোর চেষ্টায় ক্ষতিগ্রস্ত বসত ঘরগুলো ভেঙে এনে পাশের বেড়িবাঁধ সড়কে আশ্রয়ন গড়েছে। ওই বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ার ফলে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী জয়দেব সরকারের ডাঙ্গি গ্রাম, চরহোসেনপুর, চরঅমরাপুর, বেপারী ডাঙ্গী ও খালাসী ডাঙ্গী গ্রামের শত শত বসতবাড়ি ও ফসলি মাঠ। ফলে বন্যাকবলিতরা পরিবারের গরু-ছাগল, শিশু, বৃদ্ধদের নিয়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।
তলিয়ে গেছে ফুলবাড়ী বড়পুকুরিয়া সড়ক
ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা : ভারী বর্ষণ ও বড়পুকুরিয়া খনির কারণে ভূমি অবনমন হয়ে তলিয়ে গেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী-বড়পুকুরিয়া সড়কটি। ফলে চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে বড়পুকুরিয়া এলাকাসহ ১০ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।
গতকাল সরেজমিনে এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বড়পুকুরিয়া বাজার থেকে দক্ষিণ দিকে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ওই রাস্তায় চলাচলকারীরা জানায়, ভারি বর্ষণ ও খনির কারণে ভূমি অবনমন হওয়ায় এই রাস্তাটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। অনেক জায়গায় বড় বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে বড়পুকুরিয়ার পাতিগ্রাম, জিয়াগাড়ী, পাথরাপাড়া, বাঁশপুকুর, শিবকৃষ্ণপুর, হামিদপুর, ধুলাউদাল,পলাশবাড়ীসহ ১০ গ্রামের মানুষকে।
হামিদপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মন্ডল বলেন, হামিদপুর ইউনিয়নটি পার্বতীপুর উপজেলার অন্তর্গত হলেও ভৌগোলিক কারণে ফুলবাড়ী পৌর শহরের একেবারে সন্নিকটে। এ কারণে এই ইউনিয়নের বাসিন্দারা হাট-বাজারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ফুলবাড়ী পৌর শহরের উপর নির্ভরশীল। আর এই সড়কটি হচ্ছে এই এলাকার যাতায়াতের প্রধান সড়ক। এই সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় হামিদপুর ইউনিয়নের ১০ গ্রামের মানুষের চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। একই কথা বলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম ও সাবেক ইউপি সদস্য জাবেদ আলী।
গাইবান্ধায় পৌনে ৪ লাখ মানুষ বন্যাকবলিত
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা : ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার ঘাঘট নদীর পানি ২২.১৩ সে. মি. এবং ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ২০.২৭ সে. মি. বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ফলে গাইবান্ধা জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিকে গোটা ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদ চত্বর এবং কাতলামারির ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এখনো বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ৪টি উপজেলার ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
এছাড়া সোমবার সকালে বাঁধভাঙা বন্যার পানির তোড়ে ফুলছড়ির কালিরবাজার সড়কের পশ্চিম ছালুয়া গ্রাম সংলগ্ন ব্রিজটি ভেঙে গেছে। এ নিয়ে ফুলছড়ি উপজেলা সদরের উড়িয়া-কালির বাজার, কাঠুর-কালিরবাজার, হাজিরহাট-উদাখালি এবং সিংড়িয়া-কালিরবাজার সড়কের ৫টি ব্রিজ ধসে গেছে। গাইবান্ধা-ফুলছড়ি সড়কে গোদার বাজারের রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ফুলছড়ি উপজেলা সদরের সাথে গাইবান্ধাসহ গোটা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের সিংড়িয়ার রতনপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে আলাই নদীর তালুককানুপুর ও সদর উপজেলার চুনিয়াকান্দির সোনাইল বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধভাঙা পানির তোড়ে সদর উপজেলার বোয়ালি, বাদিয়াখালী, সাঘাটার পদুমশহর, ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ও উদাখালীর পানিবন্দী মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বন্যাকবলিত ১৩ হাজার ৩শ’ পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়ে বিশুদ্ধ পানি, টয়লেট এবং গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কটে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এছাড়া রান্না করার কোনাে ব্যবস্থা না থাকায় তারা খাদ্য সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সরকারি উদ্যোগে যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে তা চাহিদার চেয়ে নিতান্তই অপ্রতুল। সিভিল সার্জন ডা: নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, বন্যাকবলিত ৪টি উপজেলায় ৬৫টি মেডিকেল টিম স্বাস্থ্যসেবায় কর্মরত রয়েছে।
জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
জামালপুর জেলা সংবাদাতা : যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করেছে, তবে জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনো অপরিবর্তিত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ২১ সেন্টিমিটার কমলেও এখনো বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দী রয়েছে সাত উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার পানির ¯্রােতে দাঁতভাঙ্গা বেইলি ব্রিজের এপ্রোচ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অপরদিকে রেললাইনের ওপর থেকে পানি নেমে যাওয়ার ফলে জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশন ও জামালপুর-সরিষাবাড়ী রেল স্টেশন পর্যন্ত গতকাল (সোমবার) থেকে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে।
টানা এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি থাকার পর গত ৩ দিন ধরে পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ২১ সেন্টিমিটার কমে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে এখনো প্রবাহিত হওয়ায় জামালপুর সদর, ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ, সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জ উপজেলার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। বসতঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় গবাদি পশু নিয়ে বিভিন্ন বাঁধ এবং উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে বন্যাদুর্গতরা। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইসলামপুরের ১৪টি ফ্লাট সেন্টারে ১ হাজার ৯১২টি পরিবার এবং দেওয়ানগঞ্জের ৬টি ফ্লাট সেন্টারে ৩৭০টি পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের তীব্র সঙ্কট চলছে। নতুন করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জেলার ৭৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ১৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমির ফসল। এছাড়াও বন্যার পানিতে রেললাইন তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার রাত থেকে জামালপুর-সরিষাবাড়ী-বঙ্গবন্ধু পূর্বপাড় পর্যন্ত লাইনে রেল যোগাযোগ এখনো বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে সরিষাবাড়ীর ভাটারা ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া এলাকায় বন্যার পানিতে সড়ক ভেঙে যাওয়ায় জামালপুর-সরিষাবাড়ী সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন।
সিরাজগঞ্জে ৪৬৩টি বিদ্যালয় প্লাবিত
সিরাজগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : এবারের বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার চরাঞ্চল, নিম্নাঞ্চল ও যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকার প্রায় ৪৬৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। ৪১৯টি বিদ্যালয়ে সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। ঐসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় বন্যায় প্লাবিত বিদ্যালয় ৫৫টি এবং পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৫৫টি বিদ্যালয়, কাজিপুরে প্লাবিত ২৯টি এবং পাঠদান বন্ধ ২৯টি বিদ্যালয়, শাহজাদপুর প্লাবিত ১৩০টি এবং পাঠদান বন্ধ ১৩০টি বিদ্যালয়, চৌহালীতে প্লাবিত ১১৩টি ও পাঠদান বন্ধ ১১৩টি বিদ্যালয়, উল্লাপাড়ায় প্লাবিত ৫১টি ও পাঠদান বন্ধ ১৩টি বিদ্যালয়, কামারখন্দে প্লাবিত ১৪টি ও বন্ধ ১৪টি বিদ্যালয়, তাড়াশ প্লাবিত ৬টি বিদ্যালয় এবং বেলকুচিতে প্লাবিত ৬৫টি ও পাঠদান বন্ধ ৬৫টি বিদ্যালয়।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শহীদুল ইসলাম জানান, বন্যাকবলিত এলাকার উঁচু স্কুলগুলো বানভাসি মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। সেই সাথে ৩ আগস্ট থেকে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বন্যায় প্লাবিত স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের সে পরীক্ষা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
শেরপুরে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা : শেরপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সদর উপজেলার কামারেরচর, চরপক্ষীমারী, চরমুচারিয়া, বলায়েরচর ও বেতমারাী ঘুঘুরাকান্দি শ্রীবরদীর ভেলুয়া, খড়িয়া কাজিরচর ও নকলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় শেরপুর সদর উপজেলার কুলুরচর বেপারীপাড়ায় ঘরসহ এক শিশু নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় হাতেম আলীর ছেলে মমিন নামের এক শিশু ঘটনাস্থলেই মারা যায়। বন্যায় সবজি, আমন ধানের বীজতলা, পাট ও আউশ ধান আবাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দী মানুষ তাদের গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবার পানি সঙ্কটসহ পানিবাহিত রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি।
অভ্যন্তরীণ নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
আরিচা সংবাদদাতা : মানিকগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমলেও আরিচার কাছে পানি বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কালিগঙ্গা, ইছামতি ও ধলেশ্বরী শাখা নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শিবালয়, ঘিওর, দৌলতপুর ও হরিরামপুর চারটি উপজেলার অধিকাংশ বাড়ি-ঘরে পানি উঠেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছে এসব অঞ্চলের লোকজন। খাবারের পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে অনেকেই।
বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের গেজ রিডার আলমগীর হোসেন জানান, যমুনার আরিচা ঘাট পয়েন্টে ১০.১৩ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়। এ পয়েন্টে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ৯.৪৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ৬৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মানিকগঞ্জের অভ্যন্তরীণ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ৩০টি ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পরেছে। ইতোমধ্যে জেলার বন্যাকবলিত এলাকার ২২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া ২৬টি মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ও বন্যার কারণে বন্ধ রয়েছে। এদিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উথলী-পাটুরিয়া সংযোগ রাস্তার একাংশ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
সরকারি হিসাবে জেলায় বন্যাকবলিত মানুষের সংখ্যা প্রায় এগারো হাজার বলা হলেও বাস্তবে এর সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি হবে। আর ত্রাণের যে পরিমাণ বরাদ্দ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তের তুলনায় তা খুবই অপ্রতুল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন