স্টাফ রিপোর্টার : আন্দোলন-সংগ্রামে বিএনপির মূল উদ্দেশ্য কী তা স্পষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। তাঁরা বলেছেন, মানুষ সরকারের সঙ্গে নেই। বিএনপির পেছনেও নেই। কিন্তু কেবল ক্ষমতার পরিবর্তন বা নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করলে কোনো লাভ হবে না।
গতকাল (শনিবার) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতন্ত্র ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন’ শীর্ষক সেমিনারে এ সব মতামত তুলে ধরেন বিশেষজ্ঞরা। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র। সরকারের এ অবস্থান থেকে বোঝা যায়, গণতন্ত্র থেকে সরে গেছে তারা। কোন্্ পথে হাঁটবে বিএনপি। গণতন্ত্র, নির্বাচন নাকি ক্ষমতা। তা স্পষ্ট করতে হবে জনগণের কাছে। কারণ, ক্ষমতার পরিবর্তন হয়, জনগণের হয় না। তাই জনগণ এখন জানতে চায়, কী করবে, কী পরিবর্তন আনবে তারা।
বক্তারা বলেন, দেশের এ অবস্থা পরিবর্তনে সংস্কার অথবা বিপ্লবের প্রয়োজন। ব্যাপক জনসমর্থন ছাড়া সংস্কার বা আন্দোলন সম্ভব নয়। আর মানুষ এখন আর ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতা প্রত্যাশী কাউকেই বিশ্বাস করেন না।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সংবিধানে বলা আছে জনগণই রাষ্ট্রের ক্ষমতার মালিক। এর চেয়ে ডাহা মিথ্যা কথা আর নেই। কারণ এদেশের মানুষ কখনোই ক্ষমতার মালিক হয়নি। এদেশে গণতন্ত্র ও রাজনীতি মানেই দুই দলের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।
তিনি বলেন, জনগণ রাষ্ট্রের মালিক এখন আর তা বিশ্বাস করার উপায় নেই। মানুষ কারো ওপর আর আস্থা রাখতে পারছেন না। নেতাকর্মীরাও দলের আদর্শ ও সিদ্ধান্তের প্রতি সন্দিহান। সে কারণে আর আন্দোলন হয় না। জনগণকে তালাক দেয়ার অধিকার না দিলে স্বেচ্ছাচার চলবে।
তিনি বলেন, মানুষ আর ভিক্ষা চান না। কোনো দলের (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) আদর্শ নেই। এখন ঘরের ভেতর মিটিং করতেও পারমিশন লাগে। দেশটাকে ক্রীতদাস বানানোর জন্য স্বাধীন করিনি।
ইংরেজি দৈনিক ‘নিউ এজ’-এর সম্পাদক নুরুল কবির বলেন, বর্তমান সরকারের জনসমর্থন নেই। মানুষ একদিনের জন্যও এই সরকারকে চায় না। কিন্তু মানুষ বিএনপির পেছনেও নেই। কারণ বিএনপি মানুষের এই মনোভাব বুঝতে ব্যর্থ। বিএনপি কী চায়, সেটাও তারা মানুষকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই এখন দাবি সুনির্দিষ্ট করে বিএনপিকে মাঠে নামতে হবে।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহাবুব উল্লাহ বলেন, বিএনপিকে এখন সেই কর্মসূচি রূপরেখা তৈরি করতে হবে। জানাতে হবে, তাদের পরিকল্পনা কী? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, সহিংসতা না করে তারা আন্দোলন করে সফল হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রের অকার্যকর প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে কার্যকর করবে, সংসদকে কীভাবে কার্যকর করবে তা বলতে হবে। পেটের মধ্যে চেপে রেখে আন্দোলন হবে না। এদেশের মানুষ বার বার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয়নি। তাই এখন আর নির্বাচনের (বিশ্বাসযোগ্য) কথা বলে লাভ নেই।
তিনি বলেন, এদেশের সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু মানুষের অবস্থার পরিবর্তন হয় না। নির্বাচন হয়ে থাকে শুধু ক্ষমতার পরিবর্তনের জন্য। নির্বাচনের কথা বলাও হয়ে থাকে এই একটি কারণে। কিন্তু মানুষের কথা না বলে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু নির্বাচনের কথা বললে লাভ হবে না। মানুষের অবস্থা পরিবর্তনের রাজনীতি করলে তাদের সমর্থন পাওয়া যাবে। আর মানুষ যখন কথা বলতে শুরু করবে, তখন সরকার শুনতে বাধ্য হবে।
বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, গণতন্ত্রের নামে স্বৈরাচার চলছে। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, গণতন্ত্র কী জনগণের ক্ষমতায়ন নাকি, ক্ষমতার প্রতি জনগণের অনুমোদন?
তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণতন্ত্রের সন্ধান পাওয়া কঠিন। দেশের সর্বোচ্চ আইন (সংবিধান) যারা মানেন না, তাদের গণতান্ত্রিক দল বলবেন কেন? দেশে সামরিক অথবা বেসামরিক স্বৈরশাসন চলে আসছে।
বিএনপি-আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এক রোগীকে আরেক রোগী চেপে ধরে কান্নাকাটি করলে রোগ সারে না, ডাক্তার লাগে। এ জন্য দেশে রাজনৈতিক বিকল্প শক্তি দরকার।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বড় দুই দলের কাছে গণতন্ত্র মানে ক্ষমতা বা গদির পরিবর্তন। সেটা যে কোনো প্রক্রিয়াতে হলেই হলো। ক্ষমতার প্রত্যাশী বিএনপি সেই রাজনীতিই করছে। মানুষের রাজনীতি করছে না। যে কারণে আন্দোলন করতে গিয়ে তারা বারবার একা হয়ে যাচ্ছে।
গতকাল (শনিবার) সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট (সিএফএসডি) আয়োজিত মুক্ত আলোচনায় আলোচকেরা এসব কথা বলেন। সিএফএসডির প্রেসিডেন্ট আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবির, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক বিএনপি নেতা শমসের মবিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, সাবেক মন্ত্রী ইকবাল মাহমুদ টুকু, শামা ওবায়েদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন