অর্থনৈতিক রিপোর্টার : নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) ব্যাপক উন্নয়নের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ এবং বৃক্ষরোপণ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা। সভায় এটিসহ মোট ৭টি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রী বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছন। পরে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান। সংবাদ সম্মেলনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, অনুমোদিত প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১ হাজার ৪৩০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সংবাদ সম্মেলনে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী জানান, একনেকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনে রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ এবং বৃক্ষরোপণ প্রকল্পে ১৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
তিনি জানান, বিটুমিনের (পিচ) রাস্তা সামান্য বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে বিটুমিনের বদলে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে ফের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কংক্রিটের সড়ক দীর্ঘস্থায়ী। আলাদা স্থানে ছোট ছোট কংক্রিটের ব্লক তৈরি করতে হবে। এরপর ব্লকগুলো সড়কে বসিয়ে দিতে হবে। এম এ মান্নান জানান, এর আগেও বলেছেন, এবারও কংক্রিটের রাস্তা নির্মাণের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্ষা-বাদলে বিটুমিনের রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়, কিন্তু কংক্রিটের রাস্তা অনেক ভালো। কংক্রিটের ব্লক নির্মাণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
একনেক বৈঠকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ‘রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ এবং বৃক্ষরোপণ’ প্রকল্পটি ১৯১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। এ প্রকল্পের অন্যতম প্রধান কার্যক্রম ৯ হাজার ২৬০ মিটার বিটুমিনাস কার্পেটিং রোড সংস্কার। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিটুমিনের পরিবর্তে কংক্রিটে যেতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এর আগে ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট একনেকের বৈঠকে পর্যায়ক্রমে দেশের সব রাস্তাঘাট কংক্রিট দিয়ে নির্মাণের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
বিদ্যমান রাস্তাঘাট নির্মাণ পদ্ধতির প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাস্তাঘাটের কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। একই সঙ্গে রাস্তাঘাট কংক্রিট দিয়ে নির্মাণ করতে হবে। ইট-শুড়কির ওপরে বিটুমিন ও পিচের ঢালাইয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ হওয়ার কারণে পাঁচ বছর না যেতেই তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় কংক্রিটের রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে। এতে জনভোগান্তিও কমবে।
অনুমোদিত প্রকল্প গুলো হচ্ছে, ২৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলায় পাঁচটি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি স্থাপন প্রকল্প, ৯৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নারী কারারক্ষীদের জন্য আবাসন নির্মাণ প্রকল্প, ৩৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জামালপুর ও শেরেপুর জেলার পল্লীঅবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ঢাকা মহানগরীতে ১১টি মাধ্যমিক এবং ছয়টি মহাবিদ্যালয় (সরকারি) স্থাপন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো, হাজী ১৫৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প এবং ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব তারিক-উল-ইসলাম, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা, সাধারণ অর্থনৈতিক বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন