কূটনৈতিক সংবাদদাতা : জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা’র (জাইকা) প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা’র আগামী ৬ ও ৭ আগস্ট দুই দিনের পূর্ব নির্ধারিত সফর স্থগিত হয়েছে বলে জানা গেছে। গুলশান হামলা পরবর্তী এই সফরে জাইকা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের অন্যদের সঙ্গে নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনার কথা ছিলো। সূত্র জানায়, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হলে জাইকা প্রেসিডেন্ট ঢাকা আসবেন। ঢাকায় জাপান দূতাবাসের যেসব কূটনীতিক ও স্টাফ রয়েছেন তাদের গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাড়ানো হয়েছে ২ দিন। এদিকে জাপান টুডের এক খবরে বলা হয়েছে বিদেশে নিজ দেশের সাহায্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম দেয়ার পরিকল্পনা করছে।
গত ১ জুন গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় যে ১৭ বিদেশি নিহত হয় তাদের সাতজনই জাপানি নাগরিক। ওই ঘটনার পর থেকেই এদেশে কর্মরত জাপানিদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে জাপান। বন্ধু বাংলাদেশের পাশে থাকার ঘোষণা দিলেও সে উদ্বেগ কাটেনি। ফলে আর্টিজান হামলার পর জাপানিরা ছুটিতে গিয়েছিলেন, তাদের ছুটির মেয়াদ কয়েকবার করে বাড়ানো হয়েছে।
সম্প্রতি, বাংলাদেশ সরকারের কাছে এদেশে কর্মরত জাপানিদের নিরাপত্তা চেয়েছে জাপান। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপ পর্যালোচনা করেই তবে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ফেরানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। জানা গেছে, জাইকার ঢাকা অফিস, মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রকল্প, জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূতের বাসভবন, জাপানীজ স্কুলসহ বিভিন্ন স্থানে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
এর আগে গত বছর অক্টোবরে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও নিহত হবার পর জাপানীদের বাংলাদেশে অবস্থানের ওপর সতর্কতা জারি করে জাপান।
প্রসঙ্গত, জাপান বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র। এদেশে প্রায় অর্ধশত উন্নয়ন প্রকল্প চালাচ্ছে জাইকা। দেশটির অর্থায়নে বর্তমানে বাস্তবায়নাধীন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেল, মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কাঁচপুর, মেঘনা-গোমতী সেতু নির্মাণ, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে আরেকটি রেলসেতু নির্মাণে সমীক্ষা, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ ও ভেড়ামারা বিদ্যুৎকেন্দ্র।
জাপান টুডের এক খবরে বলা হয়েছে, ঢাকায় সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জাপানি নিহত হওয়ায় বিদেশে কর্মরত জাপানের সহায়তাকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার বুলেটপ্রুফ গাড়ি ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য সরঞ্জাম দেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ বিষয়ে জাপানের সিনিয়র উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেইজি কিহারা বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলার টার্গেটে পরিণত হতে পারেন জাপানিরা। তাই আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে যে, কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া নিরাপত্তা আসবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কাছে তিনি এ সংক্রান্ত একটি অর্ন্তবর্তী রিপোর্ট জমা দিয়েছেন প্যানেল মিটিংয়ে। সেখানে সেইজি কিহারা ওই মন্তব্য করেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ সহ উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সহায়তা অব্যাহত রাখা উচিত জাপানের। তাই নিরাপত্তা ইস্যুতে সুদৃঢ় ও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত অন্যরা পরামর্শ দেন গোয়েন্দা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও জরুরি ভিত্তিতে যোগাযোগের বিষয়ে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও বলেছেন, এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে এ মাসের শেষের দিকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন