করোনা সঙ্কটে ইতিমধ্যেই আশার আলো দেখিয়েছে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। এবার দুই মার্কিন সংস্থা মডার্না ও ফাইজারও সুসংবাদ দিলো। তাদের দাবি, চলতি বছরের শেষেই তাদের তৈরি ভ্যাকসিন নিতে পারবেন সাধারণ মানুষ। সোমবার আলাদাভাবে দেয়া বিবৃতিতে দু’টি প্রতিষ্ঠানই এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে, সবার আগেই ভ্যাকসিন পরীক্ষা সফলতার সাথে শেষ করেছে রাশিয়া। আগামী দু’ সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এই ভ্যাকসিন সবার ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে দেশটি।
জানা গিয়েছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার মত মডার্না ফার্মা ও ফাইজারও পৌঁছে গিয়েছে করোনা ভ্যাকসিন তৈরির শেষ ধাপে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩০ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের উপর এই ভ্যাকসিনের চ‚ড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মডার্না শুরু করেছে এই পরীক্ষা। আর ফাইজারকে সহযোগিতা করছে বায়োএনটেক। প্রথম পর্যায়ে সাফল্য পেতেই মডার্নার শেয়ারের দাম ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফাইজার ও তার সহযোগী বায়োএনটেকের শেয়ার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ১ দশমিক ৬ ও ৪ দশমিক ২ শতাশং।
ভ্যাকসিনগুলো তৈরি করা হয়েছে গবেষণাগারে কৃত্রিমভাবে তৈরি এমআরএনএ দিয়ে। এমআরএনএ হল একটি জেনেটিক কোড, যার নির্দেশে কোষগুলি প্রোটিন তৈরি করে। এই প্রোটিন করোনা জীবাণুর প্রোটিনের মত দেখতে, করোনা জীবাণুর বিরুদ্ধে শরীরে প্রতিরোধী ক্ষমতা তৈরি করছে তারা। মোট স্বেচ্ছাসেবীর একাংশের শরীরে এই ভ্যাকসিন সরাসরি প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং বাকিদের শরীরে প্রয়োগ করা হচ্ছে নিষ্ক্রিয় একটি ওষুধ। দুটি ডোজ দেয়ার পর তারা দেখবেন, কাদের শরীরে কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিল।
মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা মর্ডানা গত মার্চ মাস থেকেই এই কাজে লিপ্ত রয়েছে। ১৬ ই মার্চ তারা দাবি করে যে তাদের করোনা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মোট ৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবককে ‘ভ্যাকসিন’-এর ডবল ডোজ দেয়া হয়। সংস্থাটি দাবি করছে, প্রথম পর্যায়ের সেই ট্রায়াল সফল হয়েছে। জানা গিয়েছে এই ভ্যাকসিন দেয়ার পর স্বেচ্ছাসেবকদের করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা বেড়েছে। অপর মার্কিন সংস্থা ফাইজারও ‘ভ্যাকসিন’ তৈরির কাজে অনেকটাই এগিয়েছে। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে তারা মোটা অংকের চুক্তিও করে ফেলেছে এই ভ্যাকসিন নিয়ে। ব্রাজিলেও জোরকদমে চলছে ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা।
এদিকে, রুশ সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার মিলিটারি ও সরকারি গবেষকদের দ্বারা প্রস্তুত করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বর্তমানে দ্বিতীয় দফার ট্রায়ালে রয়েছে। ১০ আগস্ট বা তার আগেই রাশিয়ার গ্যামেলিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন বাজারে ব্যবহার করার অনুমোদন পাওয়া যাবে। এই ভ্যাকসিন চ‚ড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে গেলে সবার আগে করোনার ফ্লন্টলাইন স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
বিশ্বে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের যে সম্ভাবনা রাশিয়ায় দেখা দিয়েছে তাকে ১৯৫৭ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের দ্বারা বিশ্বের প্রথন স্যাটেলাইট লঞ্চের সঙ্গে তুলনা করেছেন রাশিয়ার অর্থ দফতরের প্রধান কিরিল দিমিত্রিভ। এই অর্থ দফতরই ভ্যাকসিন গবেষণায় অর্থ সরবরাহ করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক ব্যবহারের কোনও বিজ্ঞানভিত্তিক ডেটা প্রকাশ করেনি রাশিয়া। ৩ আগস্টের পরে যে কোনও সময় ভ্যাকসনটি লঞ্চ করা হতে পারে। সূত্র : টিওআই, বøুমবার্গ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন