শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

কাল ঢাকা ও চট্টগ্রামে হেফাজতের বিক্ষোভ

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সন্ত্রাস নির্মূলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবেÑআল্লামা শাহ আহমদ শফী
চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিদেশী, অমুসলিম ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বদের টার্গেট করে ইসলামের নামে গুলশান, শোলাকিয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একের পর এক সন্ত্রাসী হামলা ও নৃশংস হত্যাকা- এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক জুমার খুতবায় অবৈধ হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে আগামীকাল (শুক্রবার) রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে ঈমান-আক্বিদাভিত্তিক অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। একই সাথে সংগঠনটি বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে সন্ত্রাসবিরোধী জাতি গঠন এবং শান্তির ধর্ম ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা সকলের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে স্কুল-কলেজসহ শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করারও দাবি জানাবে।
হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী গতকাল এক বিবৃতিতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শুক্রবারের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে শরিক হওয়ার জন্য দেশের সর্বস্তরের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদী জনতার প্রতি আহ্বান জানান। বিবৃতিতে তিনি বলেন, দেশ থেকে সন্ত্রাস উচ্ছেদ করতে হলে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইনসাফ ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, খুন-খারাবি, ধর্ষণ, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ, ঘুষ, দুর্নীতি, ত্রুটিপূর্ণ বিচার, উন্নয়ন কর্মকা-ে বৈষম্য, বিভক্তির রাজনীতি এবং ইসলাম ও মুসলিম জাতিসত্তাবিরোধী নানা হস্তক্ষেপ ও দমন-পীড়ন আমাদের জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
দেশে কার্যকর শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে হুমকি-ধমকি, আইন-আদালত ও বন্দুকের ভয় দেখানোর পরিবর্তে সর্বক্ষেত্রে ন্যায় ও ইনসাফের চর্চা, আইনের নিরপেক্ষ প্রয়োগ, ঘুষ-দুর্নীতি উচ্ছেদসহ মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ ও রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ইসলামী চেতনাবোধ ও সংস্কৃতিবিরোধী নানা পদক্ষেপ বন্ধ, ইসলামী শিক্ষাকে সংকোচন করার নীতি পরিহার এবং ধর্মীয় বিষয়ে বাধাদান ও হস্তক্ষেপের প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার যৌক্তিক সমাধানে না এলে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ভেতরে একটা চাপা ক্ষোভ বিরাজমান থেকেই যাচ্ছে। জনমনে বিরাজিত এসব ক্ষোভকে পুঁজি করেই তরুণ-যুবকদের বিভ্রান্ত করে, ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী চক্র বাংলাদেশে সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে আমাদের স্বাধীনতা ও জাতিসত্তার পরিচিতিকে ধ্বংস করে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও সম্পদ লুটে নেয়ার চক্রান্ত উচ্ছেদ করা কঠিন হয়ে যাবে।
হেফাজত আমির বলেন, সন্ত্রাস ও অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। এর সুফল পেতে হলে রাষ্ট্রীয় শক্তি যাদের হাতে, তাদের সর্বস্তরে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নিজেরা অন্যায়ের মধ্যে ডুবে থেকে কিভাবে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব? তিনি বলেন, সঠিক ইসলামী শিক্ষা ও ধর্মীয় কর্মকা-কে তারাই দাবিয়ে রাখতে চায়, যারা অন্যায়-অবিচারে লিপ্ত। কারণ, তারা ভালোভাবেই জানেন ও বোঝেন যে, ধার্মিক মানুষ কখনোই অন্যায়-অবিচার ও অধিকার হরণ সহ্য করে না।
হেফাজত আমির আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কোনো কোনো উক্তি আমাদের মধ্যে আশা জাগায়। কিন্তু সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকা-ে আমরা তার বিপরীত চিত্র খুঁজে পাই। এ পর্যায়ে হেফাজত আমির উদাহরণ দিয়ে বলেন, গত ২৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, ‘জুমার খুতবা নির্ধারণ করা হয়নি’। এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকেও একই কথা বলা হয়েছিল। অথচ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরও আমরা পত্রিকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেরিত খুতবা না পড়ার কারণে ইমাম গ্রেফতার, বরখাস্ত ও নাজেহালের খবর দেখি।
তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই গণভবনের এক অনুষ্ঠানে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সন্তানদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা দিন। তারা যাতে সঠিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা পায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা সব ধর্মই শান্তির কথা বলে’। অথচ স্কুল-কলেজে পাঠ্যবই থেকে ইসলামী চেতনাবোধের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ বিষয়ক লেখাসমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে নাস্তিক্যবাদ ও হিন্দুত্ববাদের বিষয় সংযোজিত বই পাঠ্যসূচিতে অক্ষুণœ রেখে এবং ধর্মহীন শিক্ষানীতি বহাল রেখে সন্তানদের কিভাবে ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া সম্ভব?
হেফাজত আমির প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দেয়া এই দু’টি বক্তব্য যথাযথভাবে কার্যকর করার জন্য আহ্বান জানান। বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী ঢাকা ও চট্টগ্রামে সন্ত্রাসবিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের পূর্বঘোষিত ২৯ জুলাইয়ের তারিখ পরিবর্তন প্রসঙ্গে বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে দিন ঢাকার পুরাতন জেলখানা থেকে কেরানীগঞ্জের নতুন জেলখানায় কয়েদি স্থানান্তরের কারণে কর্মসূচি স্থগিত রাখার জোরালো অনুরোধ আসায় ৫ আগস্ট আমরা নতুন তারিখ পুনর্নির্ধারণ করি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন