শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অর্থ সন্ত্রাসীরা জঙ্গিদের চেয়ে ভয়ঙ্কর-খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

প্রকাশের সময় : ৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : দেশের বহুল আলোচিত জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসের চেয়ে অর্থ সন্ত্রাসীরা বেশি ভয়ঙ্কর বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশে ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, এখন জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাই কথা বলছে, কিন্তু অর্থ সন্ত্রাসীদের কথা কেউ বলছে না। সন্ত্রাসীরা একজন খুন করে পালিয়ে যায়। আর এই অর্থ সন্ত্রাসীরা কোটি মানুষ মেরে বসে থেকে রক্ত খায়।
গতকাল বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়ন শক্তিশালীকরণ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এসব অর্থ সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে সরকারও নীরব। আসলে এরাই সরকারকে পাহারাদারের মতো ঘিরে রেখেছে। এর থেকে সরকারকে মুক্ত করতে হবে। এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয় সরকারকে আরো ক্ষমতাশীল করা দরকার। তা না হলে এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব না।
একমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়ে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, এখনো দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিস্তর পার্থক্য। মাদরাসা শিক্ষা, ইংলিশ মিডিয়াম এবং বাংলা মিডিয়ামের আলাদা কারিকুলামে আলাদা শিক্ষা। এটি থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা সরকারের আছে কিন্তু বাস্তবতা খুঁজে পাচ্ছি না।
তিনি বলেন, এখনই সময় দেশের সব ইতিহাস নিয়ে একটি আদর্শিক বই লিখতে হবে। যেটি সব মাধ্যমে পড়াতে হবে। কোনো স্কুল না পড়ালে তার বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট ব্যবস্থা। কারণ আর ছাড় দেয়ার উপায় নেই।
জনগণের ক্ষমতায়ন হলেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই ডেপুটি গভর্নর বলেন, স্থানীয় সরকারকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তবেই এসডিজি অর্জনে অনেকটা এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের পর সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। সরকারের দায়িত্ব আস্তে আস্তে জনগণের ক্ষমতায়ন করা, তবেই খুব সহজেই এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব। জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারলেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন করা সম্ভব। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে সাধারণ মানুষকে ব্যবসা-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, জঙ্গিবাদ দমন না হলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। টেকসই উন্নয়নে দারিদ্র্য, ক্ষুধা এবং বৈষম্য দূর করতে হবে। অথচ দেশের উন্নয়নে মানুষের কল্যাণে আগে যে অর্থ ব্যয় করা হতো, এখন সেই অর্থ অস্ত্র কেনার কাজে ব্যবহার হচ্ছে।
তিনি বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়ন বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হলে এর নীতি, কৌশল ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং তথ্যের মাধ্যমে দেশ পরিবার ও সামাজিকভিত্তিক গবেষণাগার তৈরি করতে হবে। এ জন্য সবার প্রথমে দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করে মানবসক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে বলে মত দেন।
তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে। কারণ, ব্যবসা-বাণিজ্যে জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন করতে পারব না।
বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ (বিইউপি) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদের নির্বাহী পরিচালক ড. নিলুফার বানু। স্বাগত বক্তব্যে তিনি বলেন, মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোলের (এমডিজি) আটটি লক্ষ্যমাত্রার ভেতর বাংলাদেশ সাতটি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দারিদ্র্য কমেছে। স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বর্তমান অবস্থান থেকে দেশকে আরো এগিয়ে নিতে সরকার টেকসই উন্নয়নের জন্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য এবং ক্ষুধা পুরোপুরি দূর করতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) ঘোষণা করা হয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে বিআইডিএসের প্রফেসরিয়েল ফেলো ড. মো: আসাদুজ্জামান বলেন, এসডিজি অর্থ সংস্থানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে আকর্ষণীয় সুদে ট্যাক্স ফ্রি বন্ড ছাড়তে হবে। তাহলে সরকারের অর্থের চিন্তা করতে হবে না, জনগণই অর্থের সংস্থান করবে।
রূপালী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আহমেদ আল কবীর বলেন, বিগত কয়েক বছরে অভাবনীয় উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজির জন্য আলাদা কোনো বাজেট করার প্রয়োজন নেই। সব মন্ত্রণালয় সঠিকভাবে কাজ করলেই এসডিজি অর্জন করা সম্ভব হবে।
গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান ড. রেজাউল করিম। এতে অন্যদের মধ্যে কৃষিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন