খোরশেদ আলম সুজন। সজ্জন, ধর্মপরায়ণ, প্রাণবন্ত এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী রাজনীতিবিদ। তুখোর বক্তা। দেখা মিলবে জনতার কাতারে। নাগরিক অধিকার আদায়ে রাজপথের আন্দোলনে সবসময়ই সোচ্চার। লড়াকু এই নেতাই হলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) প্রশাসক। ছাত্রলীগ থেকে আওয়ামী লীগে তৃণমূল হয়ে চট্টগ্রাম মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতা। দীর্ঘ ৫০ বছরের বর্ণাঢ্য ও পরিচ্ছন্ন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে জড়িত সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে, নাগরিক সেবা ও জনস্বার্থ রক্ষাসহ চট্টগ্রামবাসীর ন্যায্য দাবি-দাওয়া নিয়ে রাজপথে ব্যানার ফেস্টুন হাতে সারাবছর আন্দোলন-কর্মসূচি, ত্রাণচোরদের ক্রসফায়ারে দেয়ার দাবি, করোনাকালে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার অধিকার আদায়ে অবিচল সংগ্রামী। তিনি গড়েছেন নাগরিক উদ্যোগ নামক সামাজিক আন্দোলনের ডিজিটাল প্রযুক্তিভিত্তিক সংগঠন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শেগড়া আপসহীন সৈনিক সুজন। ‘চট্টল বীর’ সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নিখাদ অনুসারী নেতা হিসেবে তার অনন্য অবস্থান। অথচ নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সবসময়ই বঞ্চিত ও পোড় খাওয়া। সংসদ সদস্য, সিটি মেয়র পদে এবারসহ বিভিন্ন সময়ে তিনি ছিলেন মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে মনোনয়ন বঞ্চিত ও অভিমানী হয়েও মাঠে সক্রিয়। নেতা-কর্মীদের কাছে আস্থা ও শ্রদ্ধার পাত্র। এবার চসিক প্রশাসকের গুরুত্বপূর্ণ পদে তার প্রাপ্য মূল্যায়ন হলো। এরফলে দলে এমনকি দলের বাইরেও প্রশংসিত হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।
বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উন্নয়ন, নাগরিক সেবায় ও সমস্যা-সঙ্কট নিরসনে তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখবেন এমনটি প্রত্যাশা নাগরিকমহলে।
সাবেক চট্টগ্রাম সিটি মেয়র এম মনজুর আলম নবনিযুক্ত চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে অভিনন্দন জানিয়ে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। প্রায় ৭০ লাখ নগরবাসীর সেবা ও চট্টগ্রামের উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেই তাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। নগরবাসীর প্রতি দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রী তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেবেন। নাগরিক সেবায়, উন্নয়নে সহযোগিতায় এগিয়ে আসবো।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের নেতৃত্বে চসিকের বর্তমান পর্ষদের পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদকালে গতকাল ছিল শেষ কার্যদিবস। আজ দায়িত্বভার গ্রহণ করবেন নবনিযুক্ত চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। তিনি অনধিক ১৮০ দিবস দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। তবে চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ পুনঃনির্ধারণে আরও বিলম্বসহ কোনো ব্যত্যয় ঘটলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং সরকারের সিদ্ধান্ত ও সন্তুষ্টি সাপেক্ষে বর্ধিত সময়ে তিনি প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের সুযোগ পেতে পারেন। গত ২৯ মার্চ চসিক নির্বাচনের সিডিউল থাকলেও করেনা মহামারীর কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রয়েছে।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার : ১৯৭০ সালে ছাত্রলীগে যোগদান করেন খোরশেদ আলম সুজন। নগরীর কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগকে সংগঠিত করেন। চবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি, পরে ১৯৮২-৮৪ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি চবিতে সমাজতত্তে¡ স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি সায়েন্সে ভর্তি হন। এ সময় ১৯৮৬ সালে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন সুজন। তিনি চট্টগ্রামে সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী আন্দোলনের আহ্বায়ক ছিলেন। ১৯৯১ সালে তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য উপকমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক আন্দোলনকালে তিনি বিভিন্ন সময়ে কারাবরণ করেন।
শ্রমিক অধিকার, চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষা, এসএসএ-বিরোধী, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের পথচলায় মহিউদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন সুজন। ভোক্তা ও নাগরিক স্বার্থরক্ষায় বিভিন্ন ইস্যুতে ধারাবাহিক আন্দোলনে তিনি চট্টগ্রামবাসীর অকুণ্ঠ সমর্থন লাভ করেন। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘ আন্দোলনের পর এখন চসিক প্রশাসক হিসেবে নাগরিক সেবা ও চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব পেলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন