ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করলে তার সামরিক বাহিনী সুবিধামত যে কোন সময়ে তাকে হত্যা করতে পারে বলে বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। একাত্তরে ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্রোর মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকের সময় বেগম মুজিব বঙ্গবন্ধুকে এ কথা বলে সতর্ক করেন। এর আগে একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধুকে অনেকে অনেক রকম পরামর্শ দিলেও সঠিক পরামর্শটি দিয়েছিলেন তার সহধর্মিনীই। তিনি বঙ্গবন্ধুকে একটি কথাই বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু যেন তার নিজের মনে যা আছে তাই ওই ভাষণে বলেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা এম. এ. ওয়াজেদ মিয়া, বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা এবং সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের বর্ণনায় এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
এম.এ.ওয়াজেদ মিয়া এ বিষয়ে তার ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ গ্রন্থে বলেন, ঐদিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারো সঙ্গে কোন কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘এতদিন ধরে যে আলাপ আলোচনা করলে, তার ফলাফল কি হলো কিছুতো বলছো না। তবে, বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা কর, তবে, একদিন ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী তাদের সুবিধামত যে কোন সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এদেশের জনগণও তোমার উপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।’
‘কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বললেন, ‘আলোচনা এখনও চলছে। এই মুহূর্তে সব কিছু খুলে বলা সম্ভব না।’ এই পর্যায়ে শাশুড়ি রেগে গিয়ে নিজের খাবারে পানি ঢেলে দ্রুত উপরের তলায় চলে যান। তিনি না খেয়ে সারা দিন শুয়ে থাকলেন, কারো সঙ্গে কথাও বললেন না।
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে এদিন মা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকাশ্য রাজনীতিতে কখনোই না এলেও তিনিই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সেই সময়ে খ্যাতিমান ছাত্রনেতা। তিনি ৭ মার্চের সভাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের আগে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। একজন তাকে বললেন জনগণ কিন্তু সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা ছাড়া মানবে না। বঙ্গবন্ধু তাকে বললেন, তুমি তোমার কাজ কর। আমি তাদের নেতা, আমি তাদের পরিচালিত করবো, তারা আমাকে নয়।’
ইয়াহিয়া খানকে নিয়ে বেগম মুজিবের এ আশংকায়ে অমূলক ছিল না পরবর্তী সময়ে কিন্তু তা প্রমাণ হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া যখন ভুট্টোর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন সেসময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসি দেয়ার আবারও প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর আগে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায়ও বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার একটি পরিকল্পনা আঁটা হয়েছিল। বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছিলেন। অধ্যাপক আবু সাইয়িদের বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ফ্যাক্টস এন্ড ডকুমেন্টস’ গ্রন্থে সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন