শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্কে বৈরিতা বাড়ছে

আল কায়েদা আইএস তালিবান এই তিন ইস্যু ছাড়াও ভারত ও ইরানের সাথে মাখামাখি সুখকর নয় ইসলামাবাদের জন্য

প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : সাম্প্রতিককালে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে বৈরিতা বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আল-কায়েদা ও আইএসের কারণে এই দুই প্রতিবেশীর মধ্যে বিরাজমান সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও দু’দেশের মধ্যে বৈরিতা বৃদ্ধির আরো কয়েকটি কারণ রয়েছে। গত মাসে আফগানিস্তানের তোরখাম (খাইবারপাস) সীমান্তে সামরিক যান মোতায়েন করে পাকিস্তান। আফগানিস্তানও পাক আগ্রাসন রুখতে সেখানে সামরিক বাহিনী পাঠিয়েছিল। তখন উভয় দেশের সেনাবাহিনী সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থান নেয়ায় ওই অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে গিয়েছিল। পাকিস্তান-আফগানিস্তান সম্পর্ক খারাপের আরেকটি কারণ হচ্ছে, ভারত-ইরান সম্পর্ক। এটা দুই দেশের ডুরান্ড লাইন বিতর্কের চেয়েও বেশি।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাবুল সফরে যান। সেখানে ভারতের সহায়তায় নির্মিত আফগান পার্লামেন্ট ভবন উদ্বোধন করেন।
এরপর তিনি ঘানিকে তিনটি এমআই-২৫ অ্যাটাক হেলিকপ্টার উপহার দেন। কাবুলের সঙ্গে দিল্লির এই সখ্য ভালো লাগেনি ইসলামাবাদের।
এরপর মোদি ইরান যান এবং চাবাহার বন্দরের ব্যাপারে ইরানের সঙ্গে চুক্তি করেন। ওই চুক্তিতে আবার আফগানিস্তানকেও সঙ্গে রাখে ইরান এবং ভারত। ভারত-ইরান-আফগানিস্তানÑ এই তিন দেশ মিলে ট্রানজিট চুক্তি করে, যেটা পাকিস্তান মোটেও ভালো চোখে দেখছে না। পাকিস্তান মনে করে, আফগানিস্তানের সঙ্গে পণ্য পরিবহনের ব্যাপারে তারা যে দরকষাকষি করতো, এই চুক্তির মাধ্যমে তা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে।
আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের বৈরিতা বৃদ্ধির আরেকটি কারণ হচ্ছে, দেশটির সেনাবাহিনী এবং ন্যাটোবাহিনীর ওপর পাকিস্তানে আশ্রিত তালিবানের হামলা। পাকিস্তান তালিবানকে আইএসআইর মাধ্যমে সহায়তা দেয় বলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান অভিযোগ করে আসছে।
কাবুল অভিযোগ করে, মোল্লা ওমর মারা যাওয়ার পরও তালিবানের প্রতি পাকিস্তানের আচরণে এতোটুকু পরিবর্তন আসেনি। আফগানিস্তান শুধু এই ইস্যুতে গত এপ্রিলে কিউসিজির একটি সভা বাতিল করেছিল। তখন আফগানিস্তানে হামলা চালায় তালিবানের আরেক বন্ধু জঙ্গি সংগঠন হাক্কানি নেটওয়ার্ক। সীমান্ত পেরিয়ে এসব সন্ত্রাসবাদী হামলা দুই দেশের সম্পর্ক অবনতির অন্যতম কারণ। খবরে বলা হয়, দুই দেশের এই যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণ হচ্ছে, পাকিস্তান তোরখাম সীমান্তে নতুনভাবে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ করছে। এর পাশাপাশি একটি ফটকও তৈরি করেছে।
পাকিস্তান নিয়ম করেছে, ওই ফটক দিয়ে তল্লাশি এবং পাসপোর্ট দেখিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করতে পারবে আফগানিস্তান। বিনা তল্লাশিতে কোনো কার্গোকে পাকিস্তানে প্রবেশ করতে কিংবা পাকিস্তান থেকে বের হতে দেয়া যাবে না। উল্লেখ্য, তোরখাম সীমান্তে রয়েছে ডুরান্ড লাইন ক্রসিং। এই ক্রসিংকে পাকিস্তানের সীমান্ত হিসেবে কখনোই স্বীকৃতি দেয়নি আফগানিস্তান। এর ওপর সীমান্তের এই জায়গায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর মর্টার নিক্ষেপ করে আফগানিস্তানকে উত্তেজিত করে দিয়েছিল। এসব ছাড়াও দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা বৃদ্ধিতে আরো কয়েকটি ফ্যাক্টর কাজ করছে। তন্মধ্যে আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তিনি ভারতঘেঁষা না হওয়ায় ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নত হচ্ছিল। আফগানিস্তানের আগের প্রেসিডেন্ট ছিলেন হামিদ কারজাই, যিনি ছিলেন ভারতঘেঁষা।
এক্ষেত্রে আশরাফ ঘানি আফগানিস্তানের দায়িত্ব নেয়ার পরই পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে কাজ শুরু করে দেন। ২০১৪ সালের নভেম্বরে ঘানি দায়িত্ব নেয়ার পর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান রাহিল শরিফ তার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি আফগান ন্যাশনাল আর্মি ক্যাডেটদের পাকিস্তানে প্রশিক্ষণের জন্যও পাঠান। পাকিস্তানের অনুরোধে তেহরিক-ই-তালেবান জঙ্গিদের ধরার জন্য পদক্ষেপও নেন। মোট কথা, ঘানির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক এতটাই ভালো হয়েছিল যে, ভারতের অস্ত্রশস্ত্র দেয়ার প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিল আফগানিস্তান। অপরদিকে, আশরাফ ঘানি পাকিস্তান থেকে কিছু পাওয়ার আশা করেছিলেন। কারণ, তিনি পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি আবদার মেনে নিয়েছিলেন।  ঘানি আশা করেছিলেন, পাকিস্তান তালেবানের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু পাকিস্তান তা না করে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-যুক্তরাষ্ট্র-চীনÑ এই চারপক্ষীয় (কিউসিজি) শান্তি সংলাপ শুরু করে। পাকিস্তানের এই উদ্যোগ স্থবির হয়ে পড়ে মোল্লা ওমরের মৃত্যুতে।
ফলে জুলাইর শেষদিকে অনুষ্ঠেয় এই চারপক্ষীয় সংলাপ ভেস্তে যায়। কারণ, নতুন তালিবানপ্রধান মোল্লা আখতার মনসুরকে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে রাজি করানো যায়নি। পাকিস্তান চেয়েছিল চারপক্ষীয় আলোচনায় তালিবান নেতাদের এনে আফগানিস্তানের ওপর পাকিস্তানের প্রভাব বজায় রাখতে। চারপক্ষীয় সংলাপ ভেস্তে যাওয়ার জন্য পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে দায়ী করেছে। কিন্তু আফগানিস্তানের পক্ষ থেকে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছিল সংলাপ ভেস্তে যাওয়ায়। ইনডিয়ান এক্সপ্রেস।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন