চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে নিখোঁজের চার দিন পর সন্ধান মিলেছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র জুনায়েদ হোসেন আকিব (২৫) এবং তার গাড়িচালক মো: মোস্তফার (৩০)। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ভোরে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে উঠে আকিব। তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় মধ্যরাতে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়। এসময় তাকে বিধ্বস্ত দেখা গেছে বলে আত্মীয়ের বরাত দিয়ে জানিয়েছেন আকিবের ভগ্নিপতি এস এম আবুল মঞ্জুর। একই সময়ে গাড়িচালক মোস্তফাও চট্টগ্রাম নগরীর কুসুমবাগে আকিবের বাসায় ফেরত আসেন।
নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) কামরুজ্জামান বলেন, আকিব ও মোস্তফার অনুসন্ধানে আমরা কাজ করছিলাম। বুধবার রাতেই তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে সক্ষম হই। তবে ভোরে দু’জন ফিরে এসেছে। তারা কোথায় গিয়েছিল, তাদের কেউ অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল কি না তা জিজ্ঞাসাবাদ করলে বুঝতে পারব। আকিবকে চট্টগ্রামে এনে আমাদের হেফাজতে নেব। মোস্তফাকেও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান কামরুজ্জামান।
আকিবের ভগ্নিপতি এস এম আবুল মঞ্জুর জানান, বুধবার রাত ২টার দিকে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাঁচলাইশ জোন) জাহাঙ্গীর আলম তাকে ফোন দিয়ে বলেন, আকিবকে ফোন করার জন্য। মঞ্জুর দুই দফা ফোন দেয়ার পর আকিব রিসিভ করেনি। তৃতীয়বার ফোন দেয়ার পর আকিব রিসিভ করেন। আকিব আমাকে জানায়, তাকে চোখ বেঁধে কেউ ফেলে গেছে। সে অন্ধকার রাস্তার মধ্যে হাঁটছে। আশপাশে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। এসময় আমি খুলশী থানায় যোগাযোগ করি। তারা প্রথমে নারায়ণগঞ্জ সেন্টারের কাছাকাছি তার অবস্থান শনাক্ত করে। এরপর ভোর ৪টার দিকে পুলিশ বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের পাশে তার অবস্থান জানতে পারে। এর ঘণ্টাখানেক পর আকিব নিজেই বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ভেতরে আমাদের এক আত্মীয়ের বাসায় যায়। মঞ্জুর জানান, প্রায় একই সময়ে মোস্তফাও চট্টগ্রাম নগরীতে আকিবদের বাসায় গিয়ে উপস্থিত হয়। এসময় তাকেও বিধ্বস্ত দেখা গেছে। পুলিশ আপাতত মোস্তফার সঙ্গে কোনো ধরনের কথা না বলার জন্য অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে দুপুরে চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কার্যালয়ে গাড়িচালক মোস্তফা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, তাকে ও জুনায়েদকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। তবে তারা কারা ছিলেন তিনি তাদের চিনতে পারেননি। জুনায়েদ ও তাকে দু’টি আলাদা ঘরে রাখা হয়েছে। তার ঘরটি অন্ধকার ছিল। তাকে কোনোপ্রকার মারধর করা হয়নি বলে তিনি জানান। তবে কারা তাকে নিয়ে গিয়েছিল, তিনি তা বুঝতে পারেননি। তাকে কেউ কিছু জিজ্ঞেসও করেনি। জুনায়েদের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন গাড়িচালক মোস্তফা। এ সময় মোস্তফার সঙ্গে ছিলেন জুনায়েদের ভগ্নিপতি এস এম আবুল মঞ্জুর।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজামউদ্দিন বলেন, চালক মোস্তফাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আর জুনায়েদকে চট্টগ্রামে আনা হচ্ছে। তিনি বলেন, দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আসল রহস্য উদঘাটন করা যাবে। কারা তাদের নিয়ে গিয়েছিল আবার কেন তাদের ছেড়ে দিলো তা এখনো স্পষ্ট নয়। সোমবার দুপুরে নগরীর কুসুমবাগ আবাসিক এলাকা থেকে নিজের প্রাইভেট কারে বন্ধু রাব্বিকে নিয়ে বের হন আকিব। বিকেলে নগরীর ওয়াসা মোড়ে রাব্বিকে নামিয়ে দেয়া হয়। এরপর গাড়ি ও চালক মোস্তফাসহ নিখোঁজ হয়ে যান আকিব।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে এস এম আবুল মঞ্জুর জানিয়েছিলেন, সোমবার বেলা ৩টার দিকে নগরীর গরীবউল্লাহ শাহ মাজারের পাশে বিআরটিসি কাউন্টারের অদূরে কুসুমবাগ আবাসিক এলাকার প্রবেশমুখে প্রাইভেট কারটি অবস্থান করছিল। এসময় পাশে দাঁড়ানো একটি পাজেরো জিপের সঙ্গে প্রাইভেট কারটির ধাক্কা লাগে। বাগি¦ত-ার একপর্যায়ে পাজেরো গাড়ির লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত কারটি মেরামতের আশ্বাস দিয়ে আকিবদের খুলশীর দিকে নিয়ে যায়। এর পর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তবে বুধবার রাতে নগরীর খুলশীতে ডায়াবেটিক হাসপাতালে তাদের গাড়িটির সন্ধান পায় পুলিশ।
আকিব গত এপ্রিল মাসে ঢাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ অনার্স শেষ করেন। বাবা মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন চৌধুরীর মৃত্যুর কারণে তিনি চট্টগ্রামে ফিরে আসেন। নিখোঁজের ঘটনায় তার ভগ্নিপতি এস এম আবুল মঞ্জুর সোমবার রাতে খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন