বিশেষ সংবাদদাতা : ঘনীভূত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ানো হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ফিলিং স্টেশন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি ও সিএনজির মূল্য বৃদ্ধি থামাও’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি মাসুদ খান এ ঘোষণা দেন। গত সেপ্টেম্বরে সিএনজির মূল্য ২৬ শতাংশ বাড়ানোয় পরিবহন ভাড়া দেড় গুণ বেড়েছে দাবি করে তিনি বলেন, এবার বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৩ শতাংশ। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে পরিবহন ভাড়া আবার বেড়ে দ্বিগুণের বেশি দাঁড়াবে। একই সঙ্গে পণ্য পরিবহন খরচ বেড়ে পণ্যর দামও বাড়বে। গ্যাসের দাম বাড়াতে গত মার্চে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে প্রস্তাব পাঠায় গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাদের প্রস্তাবের ওপর আগামী ৭ থেকে ১৮ আগস্ট গণশুনানি হবে। গত এপ্রিলে তেলের মূল্য কমানোর সময় সিএনজির মূল্য কমানো হয়নি জানিয়ে মাসুদ বলেন, তেলের মূল্য কমানো হলেও তেলে চলা পরিবহন ভাড়া কমেনি। সিএনজিতে চলা ও তেলে চলা পরিবহন খাতের মধ্যে সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা ব্যাহত হচ্ছে। এই সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা না থাকায় সিএনজির দাম বাড়ালে পরিবহন খাত তেলের দিকে যাবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ সিএনজি ফিলিং স্টেশন অ্যান্ড কনভার্শন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি বলেন, আমরা মূল্যবৃদ্ধির শুনানিতে যাব, মূল্যবৃদ্ধি না করতে সুপারিশ করব। তবে মূল্য বৃদ্ধি করলে অনির্দিষ্টকালের জন্য সিএনজি ফিলিং স্টেশন বন্ধ করা হবে। দেশে উৎপাদিত গ্যাসের ৫%-এর কম ব্যবহার করে সিএনজি খাত সরকারকে মোট গ্যাস মূল্যের ২২% এর বেশি রাজস্ব দিচ্ছে উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন, এতে দেশীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে। তাই দাম বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারকে যুক্তিসঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সিএনজির দাম বাড়লে সবকিছুর দাম বাড়বে মন্তব্য করে কলামনিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, সরকার যেভাবে দাম বাড়াতে চাচ্ছে তা যৌক্তিক নয়। সরকারকে কা-জ্ঞানসম্পন্ন হতে হবে। তিনি বলেন, অপরিকল্পিত ব্যয়ের বোঝা জনগণ কেন বহন করবে। সিএনজি দাম বাড়ানোর পর তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টির জন্য এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে দাবি করে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, সরকার সিএনজির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে আয় বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং যারা নতুন ব্যবসায় নামছে তাদের ব্যবসা যেন লাভজনক হয় সেজন্য। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, বাংলাদেশে গ্যাস শেষ হয়ে যাচ্ছে- এই অজুহাতে দাম বাড়াতে চাচ্ছে। দেশে গ্যাস নেইÑ এটি ঠিক নয়। বঙ্গোপসাগরে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না অভিযোগ করে কূপ খননে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কোম্পানি বাপেক্স-এর সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) সঙ্গে দাম সমন্বয় করতে সিএনজি’র দাম বাড়াতে চাচ্ছে মন্তব্য করে বদরুল ইমাম বলেন, সরকারের বিরোধিতা করতে চাই না, তাদের অদক্ষতার বিষয়টি তাদের উপলব্ধি করাতে চাই। সভায় বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি রমেশ চন্দ্র ঘোষ সিএনজির দাম না বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বলেন, আমরাও চাই না সিএনজির দাম বৃদ্ধি হোক। দাম বৃদ্ধির এই প্রভাব সবার ওপরে পড়ে। এম এম আকাশের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম শামসুল আলম ও ঢাকা মেট্রোপলিটন সিএনজি অটোরিক্সা ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি বরকত উল্লাহ বুলু। উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে সিএনজি স্টেশন আছে ৫৯০টি এবং রূপান্তরিত গাড়ি তিন লাখ এবং থ্রি হুইলার ৫ লাখ। ২০১৫ সালে প্রতি ইউনিট সিএনজি ৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করা হয়। গত ছয় বছরে এর দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন