উচ্চ আদালতে নির্দেশনা অমান্য ও নিজেদের মর্জিমত কাজ করে চলছেন সিলেটে সরকারের শীর্ষ দুই কর্মকর্তা। তারা হলেন সিলেট পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন ও অপরজন সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) এস এম সাজ্জাদ হোসেন। এসব কর্মকান্ডে তারা একদিকে হাতিয়ে নিচ্ছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা অন্যদিকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন সাধারণ মানুষদের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত বুধবার বিকেলে আলমপুরস্থ বিভাগীয় কার্যালয়ে টানা ৩য় বারের মতো কানাইঘাটের লোভাছড়া পাথর কোয়ারি থেকে জব্দকৃত প্রায় শত কোটি টাকার পাথরের নিলাম করেন। অথচ গত সোমবারই উচ্চ আদালত থেকে পাথর নিলাম প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। সেই নির্দেশনা অমান্য করেছেন পরিবেশ অধিদফতরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নিজেই।
সূত্র জানিয়েছে, লোভাছড়া নদীর দু’পাশসহ কানাইঘাট ব্রিজ পর্যন্ত রক্ষিত পাথরের প্রথম নিলামের সর্বোচ্চ দরদাতা ছিলেন নজরুল ইসলাম। ক্ষমতা অপব্যবহার করে দরদাতার প্রায় দেড় কোটি টাকার পে-অর্ডারও জমা করে নেন এমরান হোসেন। এখানেই শেষ নয় গত বুধবার পুনরায় ২য় দফা টেন্ডার আহবান করে সেটি আবার বাতিল করে পুনরায় টেন্ডার আহবান করেন। এ ঘটনায় সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে নজরুল ইসলামের দায়েরকৃত রিটের প্রেক্ষিতে আদালত নিলাম স্থগিতসহ আবেদন নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এতে আগামী ৭ দিন পাথর নিলাম প্রক্রিয়া বন্ধের নির্দেশ রয়েছে। এ রিট শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন দুদকের প্রধান আইনজীবী খোরশেদ আলম খান। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও তাকে পাথর বুঝিয়ে না দিয়ে আবার পুনঃনিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছেন। বিচারপতি শহিদুল করিমের আদালত বুধবার ভার্চুয়াল কোর্টের শুনানি শেষে নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত নিলাম স্থগিত করেন। কিন্তু তা অমান্য করে নিলাম প্রক্রিয়া চলমান রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট পরিবেশ অধিদফতরের পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশনা পেয়েছেন তবে নিলামও করেছেন বলে স্বীকার করেন তিনি। এতে আদালতের নির্দেশনা অমান্য নয় কি না জানতে চাইলে বলেন, আদালতের নির্দেশনাকে বাস্তবায়ন করতে করণীয় ঠিক করতেই আমি সর্বোচ্চ স্থানে পাঠিয়েছি।
অন্যদিকে আদালত অমান্যের একই অভিযোগ উঠেছে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এম সাজ্জাদ হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে। গত ৭ জুলাই তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার নোটিশ করাও হলেও বেপরোয়া বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সাজ্জাদ।
সূত্র জানায়, ১৯৫১ সালের ২১মে ভারত থেকে আসা মোহাজিরদের পুনর্বাসনের জন্য সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলার ছৈলাখালে ৩২ হাজার ৭২ দশমিক ৩৬ একর জমি গেজেটের মাধ্যমে অধিগ্রহণ করা হয়। কিন্তু স্থানীয় মোহাজির বা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরকে না জানিয়ে শর্ত অমান্য করে গোপনে জমি নিয়ে নেয়া হয় বন বিভাগের নামে। বন বিভাগের বেআইনী গেজেট বাতিলের জন্য হাইকোর্টে রিট করেন মোহাজির প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম রফিক। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বনবিভাগের যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। অপরদিকে আদেশের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) গঠিত একটি কমিটি ২০১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জমির উপর সীমানা চিহ্নিত করে একাধিক সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। কিন্তু গত ২৭ জুলাই বিকেলে স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত সাইনবোর্ড গুড়িয়ে দেয়। এর পরদিনই এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ করা হয় স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজুমস সাকিব জানান, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত করছেন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা। মোজাহির প্রতিনিধি মো. রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, আদালতে নিষেধাজ্ঞার পরও মিথ্যা বিবরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে শতাধিক মামলায় আমাদের আসামি করে হয়রানি করছেন বনের অসাধু কর্মকর্তারা। এছাড়া সবুজায়নের নামে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চালিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা। জোরপূর্বক বেআইনীভাবে আমাদের জমি ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা ভাগবাটোয়ারা করছেন ডিএফও। এ ব্যাপারে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস এস সাজ্জাদ হোসেন দাম্ভিক সুরে বলেন, আমি আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে থাকি তবে আদালত অমান্যের মামলা করে দেন।
এদিকে দরদাতা নজরুল ইসলাম ও মোহাজির প্রতিনিধি রফিকুল ইসলাম রফিকের আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম কাফি বলেন, পরিবেশ অধিদফতরের দায়িত্ব ছিলো নজরুল ইসলামের আবেদন নিষ্পত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া। আদালতও এমন নির্দেশ দিয়েছিলেন। এদিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মোজাহিরদের জমিতে কোন কার্যক্রম চালাতে পারবে না। কিন্তু বন বিভাগ প্রকাশ্যে সেই নির্দেশনা অমান্য করে, জনমনে আদালতের প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস নষ্টের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন