বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

নির্ধারণ হয়নি মূল্য

১২ বছরে এনটিটিএন

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০২০, ১২:০১ এএম

সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়া চালিয়ে আসছে। এরই অংশ হিসেবে দেশে ইন্টারনেটের মহাসড়ক নির্মাণের জন্য ২০০৯ সালে ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) লাইসেন্স প্রদান করে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে (সরকারি তিনটি, বেসরকারি দুইটি) এই মহাসড়ক নির্মাণের দায়িত্ব দেয়া হয়। তাদের মাধ্যমে সব জেলা শহরে ইন্টারনেট অবকাঠামো পৌঁছেছে, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে। কিন্তু প্রায় ১২ বছরেও এই ট্রান্সমিশনের মূল্য নির্ধারণ করেনি টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি) এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। মূল্য নির্ধারিত না থাকায় নিম্নমানের সেবা ও ইন্টারনেটের অতিরিক্ত মূল্যের দায় একে অপরের ওপর চাপাচ্ছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) ও এনটিটিএন অপারেটররা। যদিও এনটিটিএন অপারেটররা বলছে- সরকার মূল্য নির্ধারণ করে দিলে তারা স্বাগত জানাবেন। মূল্য নির্ধারণের জন্য তারা নিজেরাই বিটিআরসিকে তাগাদা দিয়েছেন।

এনটিটিএনগুলোর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের অভিযোগ, সক্রিয় মাত্র দুটি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান (গতবছল নতুন একটি লাইসেন্স পেয়েছে) ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ পরিবহনে একচেটিয়া বাজার দখল করে আছে। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই দুটি অপারেটর থেকেই সেবা নিতে হয়। বিকল্প না থাকায় প্রতিষ্ঠান দুটি ইচ্ছেমতো ট্রান্সমিশন চার্জ নিচ্ছে। সরকার ট্রান্সমিশন চার্জ বেঁধে না দেওয়ায় তারা নিজেরাই ব্যান্ডউইথ পরিবহন চার্জ আরোপ করছে। অন্যদিকে, এনটিটিএন অপারেটরগুলোর দাবি, তাদের চার্জ যৌক্তিক।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এনটিটিএনের সংখ্যা কম হওয়া এবং ব্যান্ডউইথ পরিবহনে (ট্রান্সমিশন) ইচ্ছেমতো চার্জ আরোপ করায় ইন্টারনেটের দাম কমছে না বলে অভিযোগ করেছেন ইন্টারনেট সেবাদানের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।
ফাইবার অ্যাট হোম এবং সামিট কমিউনিকেশনস লিমিডেটের পর গত বছর বাহন লিমিটেড নামের আরেকটি কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি দুইটি কোম্পানি বাংলাদেশ রেলওয়ে এবং পাওয়ার গ্রিডে সেবা তাদের আওতাধীন এলাকার ভেতরে সীমাবদ্ধ। অপর সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডও (বিটিসিএল) সেভাবে সেবা দিতে পারছে না।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সাধারণ সম্পাদক মো. এমদাদুল হক বলছেন, ভ‚গর্ভস্থ ক্যাবল সেবার বিস্তারের অভাবের কারণেই সারা দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বিস্তৃত হচ্ছে না। ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের স্বল্পতার কারণে প্রত্যন্ত এলাকায় আমরা ব্রডব্যান্ড সেবা খুব একটা নিয়ে যেতে পারিনি। কারণ ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্কের খরচ এতো বেশি, সেখানে নিয়ে যখন গ্রাহক পর্যায়ে দেয়া হবে, তখন খরচ অনেক বেশি পড়ে যায়। যার কারণে এখনো শহর এলাকাতে ৮০ শতাংশ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে আইএসপি ও পিএসটিএন ভিত্তিক গ্রাহক রয়েছে ৮৫ লাখের কিছু বেশি। এমদাদুল হক বলেন, ব্যান্ডউইথ সংগ্রহ থেকে গ্রাহকের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছাতে অন্তত ১৬টি উপাদান ব্যবহৃত হয়। তাই কেবল ব্যান্ডউইথের মূল্য কমালেই হবে না, বরং ট্রান্সমিশনের খরচও কমাতে হবে।

ফাইবার অ্যাট হোমের গভর্নমেন্ট রিলেশন্স এন্ড রেগুলেটরি বিভাগের প্রধান আব্বাস ফারুক বলেন, বর্তমানে ৬টি এনটিটিএন অপারেটর বাজারে রয়েছে। আমাদের মতো ছোট দেশের জন্য অনেক বেশি। আমাদের ব্যবসা মূলত টেলিকমিউনিকেশনের জন্য রাস্তা অর্থাৎ ফাইবার অবকাঠামো তৈরি করা। এই সড়ক বিভিন্ন টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানকারী অপারেটররা (মোবাইল, আইএসপি, আইআইজি, আইজিডবিøউ ইত্যাদি) ব্যবহার করে সেবা দিয়ে থাকে। আমাদের নেটওয়ার্ক একটি ‘কমন’ নেটওয়ার্ক অর্থাৎ সব অপারেটরদের ব্যবহারের জন্য তৈরি। আর আমাদের মূল্য আমরা যথার্থ নিচ্ছি কি-না তা দেখভাল করে বিটিআরসি।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে একটি এসটিএমের দাম ছিল সাড়ে ১৩ লাখ, এখন সেটি ২২ হাজার। ২০১১ সালে ১জি’র দাম ছিল ৮ লাখ, এখন ১ লাখ, ২০১৩ সালে ১০জি’র দাম ছিল ২৫ লাখ, এখন সাড়ে ৫ লাখ। এই যে মূল্য কমে গেছে এটা অবশ্যই এনটিটিএন অপারেটরদের কল্যাণে। সবাই যতোবেশি এনটিটিএনে আসবে, ততোবেশি এই মূল্য কমে যাবে।

মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে আব্বাস ফারুক বলেন, আমরা চাই সরকার এনটিটিএন সেবার মূল্য নির্ধারণ করে দিক। সরকার যে মূল্য নির্ধারণ করে দিবে আমরা সেই মূল্যে সেবা দিতে বাধ্য। কিন্তু তার আগে অবশ্যই আমাদের বিনিয়োগ, খরচ এসব বিষয় যাচাই-বাছাই করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল্যে ট্রান্সমিশন সেবা দিতে পারবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রেলওয়ে, পিজিসিবি, বিটিসিএল এদের কারোরই এনটিটিএন মূল ব্যবসা না। এটা তাদের ঐচ্ছিক। কিন্তু আমাদের মূল্য ব্যবসাই হলো ট্রান্সমিশন।

নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির বিষয়ে আব্বাস বলেন, ফাইবার এট হোমের সারাদেশে সকল জেলা ও উপজেলায় ৫০ হাজার কিলোমিটার ফাইবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ১৮শ’ কিলিমিটার ম্যাশ নেটওয়ার্ক। আর ৬টি এলাকায় সব বিল্ডিংয়ে নেটওয়ার্ক রয়েছে।
সামিট কমিউনিকেশন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী আরিফ আল ইসলাম বলেন, আমরা ট্রান্সমিশন চার্জ মোটেও বেশি নিচ্ছি না। একটি যৌক্তিক হারেই নেওয়া হচ্ছে। আইএসপি অপারেটররা যদি ব্যান্ডউইথের ভলিউম বেশি নেন তাহলে খরচ কম পড়বে। আর যারা অল্প পরিমাণে নেন তাদের হয়তো চার্জ গড়ে বেশি হয়ে যায়। ট্রান্সমিশনের দাম বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে আরিফ আল ইসলাম বলেন, দাম বেঁধে দেওয়া হলে আমরা অনেক খুশি হবো। দুই বছর ধরে আমরা সরকারের কাছে এটা চাইছি।’ তিনি উল্লেখ করেন, নিশ্চয়ই অন্যান্য দেশের সঙ্গে মিল রেখেই এটি করা হবে। তিনি ভারতের উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমাদের দেশে ব্যান্ডউইথ ট্রান্সমিশন চার্জ ভারতের চেয়ে কোথাও ৫০, কোথাও ৩০ ভাগেরও কম।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোন কিছু নির্ধারণ করে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এটার মূল চালিকাশক্তি প্রতিযোগিতা। এটা চালু থাকলে মার্কেট ফোর্সই নির্ধারণ করবে মূল্য কি হবে, কি হবে না। যদি মার্কেট ফোর্স নিয়ন্ত্রণ হারায় তাহলে সরকার নিয়ন্ত্রণ করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন