আফজাল বারী : বিএনপির নয়া কমিটির ঘোষণা যেকোন সময়। চলছে শেষ সময়ের শেষ যাচাই। নতুন নাম অন্তর্ভুক্ত না করা হলে কমিটি আসছে ৪৭২ সদস্য বিশিষ্ট। ৪২ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত হবে ৪৩০ জনের নাম। নয়া কমিটির ক্ষেত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে চেয়ারপার্সনের ক্ষমতাবলে হাতে গোনা কয়েকজনের বেলায় এ নীতি শিথিল করা হয়েছে।
দীর্ঘ অপেক্ষার এই কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত আছেন এমন এক নেতা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, এবারের ‘মেগা’ কমিটিতে পুরনোদের কিছু বাদ যাচ্ছে। অগ্রাধিকার পাচ্ছে নতুনরা। বলা চলে তিনযুগ পর বিএনপি নতুন প্রজন্মের হাতে গড়াচ্ছে।
সূত্রের বিশ্লেষণ, নয়া কমিটি নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হবার মতো বেশ কিছু উপসর্গ যুক্ত হয়েছে। এরমধ্যে সিনিয়র নেতাদের সন্তান-স্বজন, নেতাদের মামলা পরিচালনায় আইনজীবী, সাবেক ছাত্রনেতা (যারা রাজপথ ভুলে গেছেন) এবং কথিত ‘ভাইয়া’র সুপারিশ ব্যধি অন্যতম।
এ নিয়ে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য বলেন, উত্তরসূরী তার পূর্বসূরীর পেশাকে বেছে নিতেই পারে। ডাক্তারের সন্তান ডাক্তার, রাজনীতিবিদের সন্তান রাজনীতিক হবার বাসনা থাকতেই পারে। এমনটা স্বভাবিক। তবে ডাক্তারের তার জন্য কমপক্ষে দুইযুগ অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু রাজনীতিবিদের সন্তান রাজনীতিক হতে সময় লাগছে মাত্র কয়েকদিনের তদ্বির। এমনচিত্রের দেখা মিলতে যাচ্ছে বিএনপির নতুন কমিটিতে। দলের সিনিয়র অনেক নেতার ছেলে-মেয়ে ইতোমধ্যে চলতি কমিটিতে নির্বাহী সদস্য হিসেবে স্থান করে নিয়েছেন। অনেক নেতার স্বজনরা স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত আছেন। এরা স্থানীয় পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের কোন না কোন পদের আবদার করাটা অযৌক্তি নয়। কিন্তু দলের প্রায় অর্ধশত নেতা তাদের উত্তরসুরীকে এখনই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ দিতে শীর্ষ নেতার কাছে তদবির করছেন। ইতোমধ্যে অন্তত তিন ডজন নেতার সন্তান কমিটিতে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। প্রবীণ নেতাদের আবদার তাদের তো সময় শেষ শূন্যস্থান পূরণে উত্তরসূরীকে পদ দেয়া চাই।
এদিকে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ বিএনপির সিনিয়র নেতার শত শত মামলায় আইনী লড়াইয়ে অংশ নেয়ার দাবি করে অর্ধশতাধিক আইনজীবী এবার জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান করে নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছেন কোনদিনই মামলার ধার্য তারিখে আদালত চত্বরেই হাজির থাকেননি। সাবেক ছাত্র নেতাদের একটি বড় সংখ্যা এবার নড়ে চড়ে বসেছেন। রাজপথে অতীতে সরব থাকলেও ৮/১০ বছর যারা নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন তারা তদবির করেছেন। এ ক্ষেত্রে আবারো মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের অভিযোগও রয়েছে।
একই সূত্র জানান, জিয়া পরিবারের সদস্য এবং দলীয় নেতাদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছে সেসব চিকিৎসক, দলের অনুদানদাতা ব্যক্তি থেকে শুরু করে অনেক খাত আছে যারা একবারের জন্য শরিক হয়েছিলেন তারাও পদের আবদার করেছেন। এসবের পক্ষে সিনিয়র নেতাদের জোরালো তদবিরও রয়েছে। আর এসবের কারণে দলের রাজপথে আন্দোলনকারী ত্যাগী, পরীক্ষিত, যোগ্য এবং সরকারের নানান নির্যাতদের শিকার নেতাদের নাম বাদের তালিকায় চলে গেছে।
আলাপকালে আরো জানা যায়, দলীয় প্রধান, মহাসচিবের কাছে হাজারো আবদার জমা পড়ে। তাতে বলা হয়, আমি বা আমরা মামলায় জর্জরিত। দলীয় দফতরের তথ্য মতে, ৩৮৬ সদস্যের চলতি কমিটিতে ২৫৮ জনের নামে কোন মামলা নেই। একই সাথে কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতার নামেই শতাধিক মামলা রয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই বেশি হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন। তবে তৃণমূলের সেই নির্যাতিত নেতা-কর্মীকে যে কেন্দ্রে গুরুত্ব দিতে হবে সে কথা বলার মতো তেমন কেউই নেই। সবাই আছে নিজের স্বজন নিয়ে।
বিএনপির অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, নয়া কমিটিতে যাতে ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন হয় সে দিকে খেয়াল রেখে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে কমিটি তৈরির পক্ষে মত দিয়েছেন লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমান। এরপরও যোগ্যকে মূল্যায়ন করতে বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটিগুলো আরো সময় নিয়ে করা হতে পারে।
গত ১৯ মার্চ বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর পেরিয়ে গেছে সাড়ে চার মাস। এ পর্যন্ত তিন দফায় মহাসচিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নেতা মনোনীত করা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন