শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে কাজ থাকলে কেউ বিদেশ যাবেন না

আইওএম গবেষণা প্রতিবেদন জীবিকার অভাব, অপর্যাপ্ত উপার্জন, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সেবার অভাব, সামাজিক সুরক্ষার অভাবে বিদেশ যান কর্মজীবীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২০, ১২:০০ এএম

দেশে জীবিকা নির্বাহের ভালো সুযোগ পেলে ৯৯ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী বিদেশ না গিয়ে বাংলাদেশেই থাকতেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয়ে ‘বাংলাদেশ: সার্ভে ওন ড্রাইভারস অফ মাইগ্রেশন অ্যান্ড মাইগ্রেন্টস্ প্রোফাইল’ নামের এই প্রতিবেদনটি গতকাল বুধবার একটি অনলাইন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা। প্রতিবেদনে বলা হয়, যে পাঁচটি প্রধান কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে অভিবাসন করেন তা হলো: জীবিকার অভাব (বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক খাতে), অপর্যাপ্ত উপার্জন, অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সেবার অভাব ও সীমিত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা।

গবেষণা প্রতিবেদন সম্পর্কে আইওএম জানায়, ১১ হাজার ৪১৫ জন সম্ভাব্য অভিবাসীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে ২০১৯ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম ৬৪ জেলার ওপর এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয়েছে বলে দাবি করে সংস্থাটি। কাজের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া ওই ব্যক্তিরা ২০২০-এর জুনের মধ্যে অভিবাসনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। অভিবাসনের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে নিবন্ধন করার ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য অভিবাসীদের নিয়মিত এবং অনিয়মিত এই দুই খাতে ভাগ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গবেষণার অধিকাংশ উত্তরদাতা পুরুষ (৮৯ শতাংশ) এবং অংশগ্রহণকারীদের গড় বয়স ২৭। ৬৪ শতাংশের বয়স ২০ এর কোটায়। অংশগ্রহণকারীদের প্রায় অর্ধেকই বিবাহিত। অধিকাংশ উত্তরদাতা কর্মক্ষম এবং শিক্ষার কিছু স্তর পার করেছেন। উত্তরদাতাদের শিক্ষার সর্বোচ্চ স্তরের কথা বিবেচনা করলে; ৪১ শতাংশ মাধ্যমিক স্তর সম্পন্ন করেছেন, ২৭ শতাংশ উচ্চবিদ্যালয় স্তর এবং ২৬ শতাংশ প্রাথমিক স্তর সম্পন্ন করেছেন। উত্তরদাতাদের মধ্যে ৩ শতাংশ শিক্ষার কোনও স্তরেই প্রবেশ করেননি।
আইওএম’র জরিপে অংশ নেওয়া ৪০ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী অভিবাসনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কর্মহীন ছিলেন। ৯০ শতাংশ উত্তরদাতা জানান, তাদের ব্যক্তিগত কোনও উপার্জন নেই বা থাকলেও তা অপর্যাপ্ত।
আইওএম জানায়, অভিবাসীরা বিশ্বের দক্ষিণের দেশগুলো ছেড়ে উত্তরের দেশগুলোতে অভিবাসন করে এই বহুল প্রচলিত ধারণাকেও তুলে ধরে প্রতিবেদনটি। উপাত্ত থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই চিত্র ভিন্ন। বরং, বাংলাদেশে অভিবাসন মূলত দক্ষিণ থেকে দক্ষিণে ঘটে। অধিকাংশ অভিবাসী মধ্যপ্রাচ্য কিংবা এশিয়ার অন্যান্য দেশে অভিবাসন করে থাকেন। মাত্র ১ দশমিক ৪ শতাংশ ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। অধিকাংশ উত্তরদাতা জানান, তারা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে চান। বেশিরভাগ যেতে চান সউদী আরব।

গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৮৫ শতাংশ সম্ভাব্য অভিবাসী তাদের অভিবাসনের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে টাকা দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নিয়মিত এবং অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা প্রায় একই পরিমাণ অর্থ দিয়েছেন। নিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা গড়ে ২ লাখ ৪৩ হাজার ৬৫১ টাকা (২,৮৭১ মার্কিন ডলার) দিয়েছেন; যেখানে অনিয়মিত সম্ভাব্য অভিবাসীরা গড়ে দিয়েছেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৪৮৮ টাকা (২,৭০৫ মার্কিন ডলার)। অভিবাসনের জন্য অভিবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া সর্বোচ্চ অর্থের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টাকা (১৮,৮৫৭ মার্কিন ডলার)।

২০১৯ সালের হিসেব অনুযায়ী ৭৮ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে অবস্থান করেছেন। প্রতিবছর এদেশে ২২ লাখেরও বেশি তরুণ শ্রমশক্তিতে যুক্ত হন। কিন্তু স্থানীয় শ্রমবাজার এই কর্মসংস্থানপ্রার্থীদের জায়গা দিতে পারছে না।
সম্ভাব্য অভিবাসীদের জিজ্ঞেস করা হয় কী কী পরিবর্তন করা হলে তারা দেশে থাকবেন? প্রায় সবাই (৯৯ শতাংশ) শতাংশ উত্তর দেন, উন্নত কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তারা দেশেই থাকবেন। গবেষণায় অংশ নেওয়া উত্তরদাতাদের ৩৮ শতাংশ উল্লেখ করেন আইনের উন্নতি হলে তারা দেশে থাকবেন। ৩৬ শতাংশ উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং ২৯ শতাংশ আরও সুলভ স্বাস্থ্যসেবার কথা উল্লেখ করেছেন দেশে থাকার জন্য। প্রায় অর্ধেক অংশগ্রহণকারী জানান, তারা দেশে থাকবেন যদি তাদের আরও বেশি পড়াশোনার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হয়।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানান, এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের কারণগুলোর বিস্তারিত তুলে এনেছে। উন্নত নীতিমালা ও অনুশীলন তৈরিতে প্রতিবেদনটি আমাদের সহায়তা করবে। আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, এই প্রতিবেদনটি বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের আর্থসামাজিক চালিকাশক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে সহযোগিতা করবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও দক্ষতায় বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে উচ্চস্তরের আলোচনা ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন