করোনার দারিদ্রের হার বাড়ায় পুষ্টি নিরাপত্তা হুমকীর মুখে পড়েছে। অপুষ্টির কারণে শিশুদের এক তৃতীয়াংশের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যহত হচ্ছে। জাতিসংঘের ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এর সহযোগিতায় প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ আয়োজিত বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পুষ্টি সংবেদনশীল সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক ওয়েবিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক প্রফেসর মিজানুল হক কাজল সোমবার (২৪ আগস্ট) এ তথ্য জানান।
বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক পরিচালিত করোনার অর্থনৈতিক প্রভাব ও বাংলাদেশের করণীয় শীর্ষক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন-এর ন্যাশনাল পোভার্টি অ্যান্ড সোস্যাল প্রোটেকশান অ্যাডভাইজর মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল বলেন, করোনার কারণে বাংলাদেশে ৯৫ ভাগ পরিবারের আয় কমেছে এবং ৫১ ভাগ পরিবারের আয় শূণ্য শতাংশের কাছাকাছি নেমে এসেছে। তিনি জানান ৩ শতাংশ পরিবারের কোনো খাবার নেই, ১৬ শতাংশ পরিবারের ১-৩ দিনের খাবার আছে এবং ২২ শতাংশ পরিবারের ৩০ দিন বা তার অধিক সময়ের খাবার আছে। এ পরিস্থিতিতে সামাজিক সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার ২০১৫ সালে জাতীয় সামাজিক সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল গ্রহণ করে এবং এই কৌশলে বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা পুনগঠন করার লক্ষ্যে জীবন-চক্র প্রদ্ধতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে তিনি সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলের কিছু দূর্বলতাও তুলে ধরেন। সেগুলো হচ্ছে- দূর্বল নজরদারি ও পর্যবেক্ষনের কারণে উপকারভোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দ্বৈততা পরিহার সংক্রান্ত ত্রুটি, যে পরিমাণ অর্থ বা ভাতা প্রয়োজন তা দরিদ্র মানুষের কাছে সঠিকভাবে পৌছানো যাচ্ছে না, বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতার অপ্রতুলতা।
পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ এর সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন পিআইবি পরিচালক (অধ্যয়ন ও প্রশিক্ষণ) মো. ইলিয়াস ভূইয়া। আলোচনায় অংশ নেন এফএও’র মিটিং দ্যা আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের চীফ ট্যাকনিকাল অ্যাডভাইজর নাওকি মিনামিগওসি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ফুড প্ল্যানিং অ্যান্ড মনিটরিং ইউনিটের পরিচালক (গবেষণা) ফিরোজ আল মাহমুদ।
পিআইবি মহাপরিচালক জাফর ওয়াজেদ বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সুষম খাদ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে পুষ্টিহীন জনসংখ্যার হার কমলেও এখনো অসংখ্য শিশু পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। তিনি বলেন, জনগণকে পুষ্টিকর খাবার দিতে না পারলে বিকলাঙ্গ ভবিষ্যৎ ও বিকলাঙ্গ সমাজ গড়ে ওঠবে।
নাওকি মিনামিগওসি বলেন, পুষ্টি সংবেদনশীল খাদ্য ব্যবস্থা বিষয়ক সেকেন্ড কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বাস্তবায়নের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা। তিনি খাদ্য নিরাপত্তার চারটি দিক তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে-খাদ্যের পর্যাপ্ততা, প্রাপ্যতা, খাদ্যের যথার্থ ব্যবহার এবং এ তিনটি বিষয় নিশ্চিত করা।
আলোচনায় অংশ নেন মিটিং দ্যা আন্ডার নিউট্রেশন চ্যালেঞ্জ প্রকল্পের জাতীয় পুষ্টি বিশেষজ্ঞ ওয়াজিয়া খাতুন, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমদ, দৈনিক প্রথম আলোর বিশেষ সংবাদদাতা শিশির মোড়ল, এগ্রিকালচারাল রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি আশরাফ আলী, এসএটিভি’র বিশেষ প্রতিনিধি সালাহউদ্দিন আহমদ বাবলু, কালের কণ্ঠের ডেপুটি চিফ রিপোর্টার ও হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফ, দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাউসার রহমান, দ্যা ফিনানশিয়াল এক্সপ্রেসের স্টাফ রিপোর্টার কামরুন নাহার শোভা, দৈনিক ভোরের কাগজের সিনিয়র রিপোর্টার সেবিকা দেবনাথ, দৈনিক বাংলাদেশ পোস্টের বিশেষ সংবাদদাতা নুরুল ইসলাম হাসিব, চ্যানেল২৪ এর সিনিয়র রিপোর্টার ফয়জুল সিদ্দিকী, এবং বাংলাদেশ প্রতিদিন-এর সিনিয়র রিপোর্টার নিজামুল হক বিপুল।
ওয়েবিনারে স্বাস্থ্য ও কৃষি বীটের মোট ৩৫ জন সংবাদকর্মী অংশ নেন। ওয়েবিনারে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন পিআইবি সিনিয়র প্রশিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ আবদুল মান্নান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন