প্রধানমন্ত্রীর বেসরকরি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা এই বাংলাদেশ পেয়েছি। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশে ছিলো ফরেন এক্সেস শূণ্য শতাংশ। যা ছিলো সব পাকিস্তানীদের দখলে। সেই সময় ৯৫ শতাংশ ইন্ডাস্ট্রির মালিক ছিলো পাকিস্তানীরা। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর সহযোগিতায় দেশেও জনগণ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে এবং দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয়করণ করে। যার ফলেও বর্তমানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
# জাতীয় শোক দিবসে এফবিসিসিআই’র আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল
# বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনৈতিক মুক্তি নয়, অর্থনৈতিক মুক্তিতে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন- আমির হোসেন আমু
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র (এফবিসিসিআই) আয়োজনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শনিবার (২৯ আগস্ট) অনলাইনের মাধ্যমে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সালমান এফ রহমান এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, এম এ কাশেম, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, মীর নাসির হোসেন, এ কে আজাদ এবং আব্দুল মাতলুব আহমেদ।
এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার। তা তিনি পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই উপলব্ধি করতেন। বঙ্গবন্ধু কখনোই পাকিস্তানে বিশ্বাস করেনি। বঙ্গবন্ধু শুধু রাজনৈতিক মুক্তি চেয়েছিলেন তা নয় তিনি অর্থনৈতিক মুক্তিতে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। এটা যদি আমরা তার রাজনীতি ও অর্থনীতির দিকে তাকাই তাহলে স্পষ্টভাবে উপলদ্ধি করতে পারবো। বঙ্গবন্ধু যখন সুযোগ পেয়েছেন তখনই তিনি বাঙালি জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ১৯৫৬ সালে আওয়ামীলীগ এ দেশে ক্ষমতায় এসেছিলো তখন কোয়ালিশন সরকারের মন্ত্রী সভায় তিনি শিল্প বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। এরপর বর্তমানে যে কক্সবাজারে পর্যটন কেন্দ্র তা তিনি স্থাপন করেছেন। আজকের যে কৃষি তার জন্য তিনি কৃষিতে জোর দিয়ে জুট, সার করারখানা সৃষ্টি করেছেন। তেমনি ভাবে তিনি যেভাবে সুযোগ পেয়েছেন তিনি বাঙালি জাতিকে প্রস্তুত করতে চেয়েছেন।
আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও সরকারের সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু না হলে আজও আমরা পাকিস্তানের দাসত্ব করতাম। বঙ্গবন্ধু নিজে কখনো ভাবতে পারতেন না স্বাধীনতার পরে তাকে কেউ হত্যা করতে পারে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রের চারটি মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সব সময় গণমানুষর জন্য স্বাধীনতা ও অর্থনেতিক মুক্তি চেয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রের চারটি মূল স্তম্ভ গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষ ও জাতীয়তাবাদকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সব সময় গণমানুষর জন্য স্বাধীনতা ও অর্থনেতিক মুক্তি চেয়েছেন। পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত শোষক ও শোষিত শ্রেণী তিনি সব সময় শোষিতে শ্রেণীর পক্ষে নিয়েছেন। তিনি নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে সস্ত্র বাঙ্গালীতে পরিণিত করে বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে।
শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থে সকল ধরনের উন্নয়নের বীজ বপন করে গেছেন বঙ্গবন্ধু। এখন তার সুফল পাচ্ছে দেশের জনগণ। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আশির দশকের বাংলাদেশ বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থানে পৌঁছতে পারতো এবং এতদিনে উন্নত দেশের কাতারেও নাম লেখাতো। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট-এর পর ২১ বছর জাতির পিতার হত্যার বিচার পাওয়া যায়নি। এ কারণে প্রাতিষ্ঠানিক শাসন এবং চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ে এবং দুর্নীতির ক্যান্সার সমাজে ছড়িয়ে পড়ে। তবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জননেত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০২১, ২০৪১ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর মাধ্যমে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ সালে এবং পরবর্তীতে ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব প্রহণের পর তিনি যুদ্ধাপরাধীর বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার, এমডিজি অর্জন, এসডিজি-২০৩০, অষ্টম পঞ্চ বার্ষিকী পরিকল্পনা মধ্যম আয়ের দেশ ২০২১ সালের লক্ষ্য থাকলেও, ২০১৮ সালের ১৭ মার্চে এ স্বীকৃতি পায় বাংলাদেশ। এসব কিছুর নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ বাংলাদেশকে পিছিয়ে দিয়েছে মূল্যবোধের, অর্থনৈতিক, সামাজিক, মৌলিক ও মানবিক দিক থেকে।
এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু পুরো বিশ্বের এক নন্দিত নাম। যিনি আমাদের এনে দিয়েছে মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, বাংলা ভাষা। তারই স্বপ্ন পূরণ করতে প্রধানমন্ত্রী মাদক, দূর্নীতি ও সন্ত্রাসের বিরোদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে এবং তা বাস্তবায়নও করে চলছে।
এছাড়াও সাবেক সভাপতিদের বক্তব্যে এম এ কাশেম বলেন, সোনার বাংলার গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু যখন এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনি তার সরলতা নিয়ে কিছু অপশক্তির লোকেরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। কিন্তু তাকে হত্যা করেও তার স্বপ্নকে দাপিয়ে রাখা যাবে না।
মীর নাসির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু না হলে দেশ স্বাধীন হতো না। তিনি বাঙ্গালী জাতির জন্য যা করেছে তা সারা জীবনেও এই ঋণ শোধ করতে পারবে না।
এ কে আজাদ বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র অবস্থাতেই রাজনীতিতে সক্রিয় থেকে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। একজন ভিশনারী নেতৃত্ব হিসেবে তিনি সবসময়ই মানুষের মুক্তি ও কল্যাণের জন্য নিবেদিত ছিলেন।
কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, ১৮ শতকে বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে কিন্তু সেই সময়ে কেউ বাঙ্গালীকে স্বাধীনতা দিতে পারে নাই। বঙ্গবন্ধু সেই স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। তিনি কখনো নিজেকে নিয়ে ভয় পেতেন না। যার কারণেই তিনি এই বাংলাদেশ উপহার দিতে পেরেছেন।
আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কারণেই দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সৈন্যদেরকে দেশ থেকে তাদের দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। বর্তমানেও ভারতের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে ভালো বাসেন এবং তার জন্মবার্ষীক ও মৃত্যুবার্ষীক পালন করে থাকে।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম রেজনু বলেন, ১৯৭৫ সালের কিংবদন্তি নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ঐক্যবধ্য করেছেন। ব্যবসায়ী মহলকে একটি কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করে গিয়েছেন। সেই সাথে তারা নানা প্রকার নির্যাতন, লাঞ্চনার শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশর অর্থনৈতিক উন্নয়নে এসব বর্ষিয়ান নেতাদের অবদান অপরিসীম। শেখ ফজলে ফাহিমের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এফবিসিসিআিই এর নাম ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চাকাকে আরও গতিশীল করতে এফবিসিসিআই কাজ করে যাচ্ছে এবং আগামীতেও করে যাবে।
এফবিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম রেজনুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এ সভায় দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, শিল্পপতি ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ অনলাইন সভায় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতিরা, পরিচালকরা এবং সারা দেশের জেলা চেম্বার এবং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সদস্যসহ ২০০ জন ব্যাক্তিবর্গ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। আলোচনা শেষে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এফবিসিসিআই-এর সিনিয়র সহ-সভাপতি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন