ইনকিলাব ডেস্ক : ভয়াবহ ভাঙন, তীব্র স্রোত ও নাব্যতা সংকটের কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর কারণে ঘাটে যাত্রীরা প্রচ- দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের রিপোর্ট-
আরিচা সংবাদদাতা জানান, দু’দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ পাটুরিয়া- দৌলতদিয়া নৌ-রুটে স্বাভাবিক ফেরি সার্ভিস চালু করতে পারেনি। ফলে এ রুটে রাজধানী ঢাকার সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সড়ক যোগযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘাটে অপেক্ষামাণ যানবাহন পারপার বন্ধ রয়েছে। বাস ও কোচের যাত্রীরা লঞ্চ ও নৌকাযোগে নদী পারাপার হচ্ছেন। আবার অনেক যানবাহন বিকল্প পথে যাতায়াত করছে। পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে দৌলতদিয়া এলাকার ৪টি ফেরিঘাটই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে ফেরি কর্তৃপক্ষ গত রোববার সকাল ৯টা থেকে উক্ত নৌ-পথে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়। জানা গেছে, নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাটসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ভাঙন রোধের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। কিন্তু ফেরিঘাট মেরামত ও নির্মাণে দায়িত্বশীল বিভাগ বিআইডব্লিউটিএ এত দ্রুত ফেরিঘাট নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে তা বুঝে উঠতে পারেনি।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নিজামউদ্দিন পাঠান জানান, তাদের পক্ষ থেকে পর্যায়ক্রমে ঘাট রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নদীভাঙনের কারণে সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে রোববার থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি সার্ভিস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে তারা ফেরিঘাট পুনঃস্থাপনের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সোমবার ৩ নম্বর ঘাটটি পুনঃস্থাপন করা হলেও বাস-ট্রাকের মতো ভারী যানবাহন ওঠানামা করতে পারছে না। বর্তমানে এ ঘাট দিয়ে ছোট ফেরির মাধ্যমে প্রাইভেটকার ও হালকা যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। মঙ্গলবারের মধ্যে হয়তো ২ ও ৩ নম্বর ঘাটটি পুনঃস্থাপন করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা ফেরি সেক্টরের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ মোহাম্মদ নাসিম জানান, ফেরি সার্ভিস চালু হতে অনন্ত আরো দু-একদিন সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিবহন মালিকদের এই রুট ব্যবহার না করে যমুনা সেতু ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শিবচর সংবাদদাতা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট হয়ে যানবাহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অব্যাহত হারে পানি কমায় এ রুটের পদ্মা নদীতে নাব্যতা সংকট দেখা দিয়ে ফেরি চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফেরিগুলো লোড ম্যানেজমেন্ট করে কোনমতে চলছে। এর সাথে তীব্র ¯্রােতে ফেরি চলতেও বিলম্ব হচ্ছে। ফলে ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ছে এরুটে।
সরেজমিনে একাধিক সূত্রে জানা যায়, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট বন্ধ থাকায় শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট হয়ে যানাবহনের চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু এ রুটে এসেও যাত্রী ও পন্যবাহী যানবাহনগুলো চরম বিপাকে পড়ছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে পার হতে হচ্ছে যাত্রীবাহী যানগুলোকে আর পণ্যবাহী ট্রাকগুলো আটকে পড়ছে সিরিয়ালে। যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপে কাঁচামালবাহী ট্রাকগুলোও দীর্ঘ সময় পার করেও সিরিয়াল পাচ্ছে না। মুলত গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মা নদীতে ২০ সে.মি. পানি কমে বর্তমানে কাওড়াকান্দি পয়েন্টে বিপদসীমার ৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এনিয়ে গত ৫ দিনে এরুটের পদ্মায় পানি হ্রাস পায় ৭৪ সে.মি.। এর সাথে প্রচুর পরিমাণ নদীভাঙনের পলি আসায় পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে নৌ চ্যানেলের। দ্রুত পানি কমায় এরুটের লৌহজং টার্নিংসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা দিয়েছে তীব্র নাব্য সংকট। এতে করে এরুটের দীর্ঘ ড্রাফটের রো রো ফেরিগুলো পড়েছে গভীর সংকটে। লোড ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে রো রো ফেরিগুলো বর্তমানে শুধু বাস ও হালকা যানবাহন নিয়ে চলতে গিয়েও ডুবোচরে ধাক্কা খাচ্ছে। নাব্যতা ধরে রাখতে ২ টি ড্রেজার কাজ শুরু করলেও তীব্র ¯্রােতের কারনে তা ব্যহত হচ্ছে। ¯্রােতের গতিবেগের কারনে চলমান ফেরিগুলোরও দীর্ঘ সময় লাগছে। একদিকে নৌ পথের বেহাল দশা অপরদিকে পাটুরিয়া বন্ধের কারনে বাড়তি চাপে এ রুটের উভয় ঘাটে যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে যাত্রীবাহী বাস ফেরিতে উঠতে পারলেও ট্রাকগুলো আটকে পড়ছে অনির্ধারিত সময়ের জন্য।
বিআইডব্লিউটিসির মেরিন কর্মকর্তা আহমেদ আলী বলেন, দ্রুত পানি কমায় নাব্যতা সংকট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ২টি ড্রেজার ড্রেজিং করছে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) সংবাদদাতা জানান, তীব্র ¯্রােত ও ভাঙনের কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে গত ৭২ ঘণ্টা পার হলেও নৌ চলাচল স্বাভাবিক করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। চারটি ঘাটের তিনটি সম্পূর্ণ বন্ধ আর ৩নং ঘাটটি সীমিত আকারে চালু রাখা হয়েছে। এতে ঘাট এলাকায় পারাপারের অপেক্ষায় থাকা যাত্রাী ও চালকদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। বিআইডব্লিউটিসি’র রাজস্ব আয় কমে গিয়েছে একেবারেই।
গত শনিবার থেকে দৌলতদিয়ার ৪টি ফেরিঘাটের মধ্যে ৩টি সম্পূর্ণ ও ১টির আংশিক ভাঙ্গনের কারণে এ অবস্থার শুরু হয়েছে। একমাত্র ৩নং ঘাটটির ২টি র্যামের মধ্যে ১টি দিয়ে কোনরকমে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু রো-রো (বড়) ফেরিগুলো চালানো সম্ভব হচ্ছে না। এখান দিয়ে শুধুমাত্র দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের ৬টি ছোট ফেরি চলাচল করছে। ফেলিগুলোতে শুধুমাত্র ব্যক্তিগত গাড়ি ও সাধারণ যাত্রীদের পারাপার করা হচ্ছে।
সরেজমিন দৌলতদিয়া ঘাটে দেখা যায়, যশোর থেকে ছেড়ে এসে লম্বা সিরিয়ালে ৯ টন পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক নিয়ে আটকে আছেন চালক উজ্জল হোসেন। ৩ দিন শত চেষ্টা করেও তিনি ফেরির নাগাল পাননি। খরচের টাকাও প্রায় শেষ। ইতিমধ্যে পেঁয়াজগুলোতে পচন ধরতে শুরু করেছে। এভাবে অন্তত অর্ধশত পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক ও পিকআপ এবং ২০টির মতো অন্যন্য কাঁচাপণ্যবাহী যানবাহন গত ৩/৪ দিন ধরে আটকে থেকে কয়েক কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হতে চলেছে।
৩নং ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায় সাধারণ যাত্রীদের প্রচ- ভিড়। অনেকক্ষণ পরপর একেকটি ফেরি আসামাত্রই তাতে যাত্রীরা উঠে পড়ছেন। যাত্রীদের ভিড়ে ২/৪টি ব্যক্তিগত গাড়ি তোলা সম্ভব হলেও অন্য গাড়ি একেবারেই তোলা যাচ্ছে না। এখানে কথা হয় যাত্রী আ. রহমানের সাথে। তিনি জানান, মাদারীপুর হতে দূরপাল্লার একটি বাসে এসেছি। ফেরিতে পাড় হওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে ঘাটেই নামিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আলাদা টিকিট কেটে তিনি ফেরিতে নদী পাড় হচ্ছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন