স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ জাল মুদ্রা ও জাল মুদ্রা তৈরির উপকরণসহ ১০ জনকে আটক করেছে র্যাব-২ এর সদস্যরা। এদের মধ্যে ৯ জন বিদেশি রয়েছেন। রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ।
আটককৃতরা হলেনÑ আবদু নাসারা (৩৫), জিয়ান ক্লডি (৪০), গোনু ডিসায়ার (৩৭), কাম্বিয়া ডিউ নিদোর্ত (৪৩), তিয়াদিউ বার্নার্ড (৩৪), মোগুয়েম সোলো (৪২), জঙ্গা দিয়াদোনামা মার্লিন (৪১), মুতম্ব জালি ইউসুফ (৪৪), মিম্বা সার্গেস (৩৭) এবং বাংলাদেশি নারীর নাম মেরি ময়না পরী (২৬)। র্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ জানান, চক্রটি দেশি-বিদেশি জাল মুদ্রা তৈরি করে আসছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করেছে র্যাব। আগারগাঁওয়ে র্যাব-২ এর অফিস কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-২ এর সিও লে. ক. মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, আটককৃতদের মধ্যে সাতজন ক্যামেরুন, দুইজন কঙ্গোর ও একজন বাংলাদেশি। তারা জাল ডলার দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল। তিনি আরও জানান, চক্রটি প্রথমে মেইলে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর তারা ডলারের ব্যবসা করার প্রস্তাব দেয়। আগে থেকেই তারা কিছু আসল ডলারের ওপর বিশেষ কালো রং করে রাখে। বাংলাদেশিরা আগ্রহ নিয়ে যখন যায় তাতে কেমিক্যাল দিয়ে ঘষে উঠিয়ে দেখায়, এরপর বোঝায় কালো ডলার কিভাবে সাদা করবেন। তখন বাংলাদেশিরা তা কেনার জন্য আগ্রহ দেখায়। এরপর বাংলাদেশিরা যখন কিনে তখন তাদের কালো রং করা নকল ডলার দিয়ে দেয়। এভাবে প্রতারণা করে। এছাড়া তাদের কারও ভিসার মেয়াদ নেই। সবার কাছে অবৈধ রেজিস্ট্রার সিম।
র্যাব জানায়, কালো নোট। এর ওপর কেমিক্যাল- জাতীয় সাদা পাউডার মেশানো থাকত। একটি পাত্রে এই নোট রেখে তার সঙ্গে কেমিক্যাল- জাতীয় তরল পদার্থ মিশিয়ে হাত দিয়ে ঘষা দেয়া হয়। এভাবে নোটের কালো রং মুছে বেরিয়ে আসে আসল মার্কিন ডলারের নোট। এটি কোনো জাদু নয়, একধরনের প্রতারণা।
আসল ডলারের কয়েকটি নোটে কালো রং লাগিয়ে প্রলোভন দেখানো হতো। এই ফাঁদে যারা পা দিত, তাদের কাছে প্যাকেট করা কালো নোটের বান্ডিল ও পাউডার বিক্রি করা হতো। কিন্তু পরে দেখা যেত, ঘষা দিলেও মিলত না ডলারের আসল নোট। বরং বের হতো সাদা কাগজ।
এধরনের প্রতারণার অভিযোগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নয়জন নাগরিক ও একজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে র্যাব। গত রোববার বিকেলে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র্যাব-২-এর একটি দল তাদের আটক করে। এভাবে প্রতারণার অভিযোগে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নয়জন নাগরিক ও একজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে র্যাব-২ এর একটি দল তাদের আটক করে।
আটক বিদেশিদের মধ্যে ছয়জন ক্যামেরুন, দু’জন লেসেথো ও একজন কঙ্গোর নাগরিক রয়েছেন। এদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি জাল নোট, জাল নোট তৈরির কেমিক্যাল, সরঞ্জাম, ইয়াবা, মোবাইল ফোন ও মোবাইলের সিম জব্দ করা হয়।
ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, আটক আফ্রিকানরা জাল নোট তৈরির আন্তর্জাতিক চক্রের সদস্য। এই চক্রটি বিভিন্ন লোককে মোবাইল মেসেজ ও ই-মেইল করত। এতে বলা হতো, তাদের কাছে প্রচুর অব্যবহৃত মার্কিন ডলার রয়েছে। বাংলাদেশে এই ডলার তারা বিনিয়োগ করতে চায়। এই ডলারের নোট কালো রং করে এ দেশে আনা হয়েছে। এভাবে প্রতারক চক্রটি বেশ কয়েকজনের সঙ্গে চুক্তি করেছে। তারা ডলারের কালো নোট, জাল ডলার ও কেমিক্যাল বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত। এ ছাড়া মাদক ব্যবসায়ও এই চক্রটি জড়িত ছিল।
আটক বিদেশিদের কাছে পাসপোর্ট ছিল না জানিয়ে লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আটক বিদেশিদের মধ্যে অনেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। এখানে এসে এরা বাংলাদেশিদের বিয়ে করে বসবাস করছেন। আটক আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন