বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ডান হাতের আঙ্গুল নাড়াচ্ছেন ওয়াহিদা

যুবলীগের সভাপতিসহ আরো ৩ জন আটক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০৪ এএম

ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের শরীরের ডান পাশের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি হাতের আঙ্গুল নাড়ানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। গতকাল মুখের সেলাই খোলা হয়েছে এবং আগামী শনিবার মাথার সেলাই খোলার পর মেডিক্যাল বোর্ড মিটিংয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ওয়াহিদা খানমের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহেদ হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, তিনি আগের চেয়ে আরেকটু ভালো আছেন। বলা যায় অনেকখানি ইমপ্রæভ করেছেন। ডান হাতের আঙ্গুলগুলো নাড়াচ্ছেন, যদিও এখনও পুরো হাত নয়। তার মানে আমরা বলতে পারি, হাতের আঙ্গুল নাড়াচ্ছেন মানে ইমপ্রæভমেন্ট আসছে। আগে যে হাত প্যারালাইজড ছিল, তিনি সেই ডান হাতের আঙ্গুল নাড়াচ্ছেন-এটা একটা গ্রেট নিউজ। তাই আমরা আরেকটু আশাবাদী হচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, আরও আগে থেকেই তার জ্ঞানের মাত্রা ভালো ছিল। স্বামীকে চিনতে পেরেছেন। কথা বলছিলেন ধীরে ধীরে। হালকা খাবারও খাচ্ছিলেন। এখনও এইচডিইউতে (হাই-ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে) আছেন নাকি কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে- জানতে চাইলে অধ্যাপক ডা. জাহেদ হোসেন বলেন, কেবিনে স্থানান্তর করিনি। কারণ অনেক দর্শনার্থীর একটা বিষয় রয়েছে। তাই কেবিনে একটু ধীরে সুস্থে নিতে চাচ্ছি আমরা। এর আগে, গত ৭ সেপ্টেম্বর অবস্থার উন্নতি হওয়ায় ওয়াহিদাকে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে স্থানান্তর করা হয়। তবে আপাতত তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হচ্ছে না বলে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ইউএনও ও তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তারপর ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় দুই ঘন্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষেই তাকে ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর হাই ডিফেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউত) স্থানান্তর করা হয় তাকে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন।

এদিকে দিনাজপুর অফিস জানায়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার পিতার উপর হামলা ক্লু বা আটক সর্ম্পকে কোন তথ্যই পুলিশ প্রশাসন থেকে দেয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যে গত তিন দিনে ঘোড়াঘাট যুবলীগের ইউনিয়ন সভাপতি মমিনুল মাষ্টার ও পৌর আহবায়ক নান্নুসহ আরো তিনজনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মমিনুল মাষ্টারকে পুলিশ কর্তৃক আটকের সত্যতা পাওয়া গেলেও অন্যান্যদের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। ফলে হামলা-মামলা নিয়ে এক প্রকার ধু¤্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। তবে পুলিশের দাবী অতি দ্রæত মুল ঘটনা উৎঘাটন ও প্রকৃত দোষীদের আটক করে গনমাধ্যমের মাধ্যমে তুলে ধরা হবে। তবে হামলাটি যে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইউএনও’র বাবার নামে ১৮০ শতক জমি দান করা দলিল থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত ৪ মার্চ ৭২৯ নম্বরের ঐ দলিল আরো অনেক কিছু তদন্তকারীদের চোখে ধরা পড়েছে বলে জানা গেছে। জমি দানকারী দুই ভাই ফারুক সিদ্দিকি ও মমিন সিদ্দিকি রক্তের কোন সম্পর্ক না থাকলেও কেন ২০ লাখ টাকার মুল্যের জমি দান করেছেন ইউএনও’র বাবাকে তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আবার ফারুক ও মমিনের দানকৃত জমি প্রাপ্তির বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ বলে বিভিন্ন সুত্র দাবী করেছে।

গত ২ আগষ্ট ভোররাতে ইউএনও’র উপর উপর হামলা ঘটনার পর তিন আসামীকে আদালতে সোপর্দ করে ৭ দিন করে রিমান্ড নেয়া হয়েছে। এই মধ্যে সান্টু ও রকিবুলের রিমান্ড ১২ এবং আসাদুলের রিমান্ড শেষ হওয়ার কথা ১৩ আগষ্টে। মূল ঘটনা উৎঘাটনে তদন্তের দায়িত্বে থাকা ডিবি পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা কাজ করছে। আর স্থানীয় পর্যায়ে রংপুরের ডিআইজি দেবাসীষ ভট্টাচার্য ও দিনাজপুর পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছেন। প্রয়োজন হলেই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন। তবে ঘটনা যে নিছক চুরি নয় এটা এখন স্পষ্ট। এরমধ্যে জমি ক্রয় ও ভোগদখল অন্যতম। উল্লেখ্য স্বাধীনতা পূর্ববর্তী দানকৃত জমির মালিক ছিলেন আজগর আলী। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে আজগর আলীকে আর পাওয়া যায়নি বলে নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় স্থায়ী অধিবাসীরা। এছাড়া উল্লেখিত জমিসহ আরো জমি সেনাবাহিনীর সদস্যদের মাঝে ৯০ বছর মেয়াদী লীজ প্রদান করা হয়। অথচ এই জমি ফারুক ও মমিন কিভাবে ক্রয় করলেন এবং ক্রয়ের পর স্বার্থ ছাড়াই ইউএনও ওয়াহিদা খানমের বাবাকে দান করলেন। জমি সম্পাদনকারীর সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নিয়ম না থাকলেও দান দলিলে সাধারণত কোন উপকার বা ঋন ইত্যাদি কারণ উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ইউএনও’র বাবা ওমর ফারুকের নামে দান করা সম্পত্তিতে কোন কারণই উল্লেখ করা হয়নি। তাই সম্পত্তি হামলার কারণ হওয়ার ব্যাপারে পরিস্কার হয়ে আসছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা বিভাগের সদস্যরা ইতিমধ্যেই ঘোড়াঘাট রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে দলিলের কপি সংগ্রহ করেছে।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন