বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, যে দুঃশাসন চলছে তার মধ্যেও গণতন্ত্র উদ্ধারের আন্দোলন চলবে। এই ভয়ঙ্কর নাৎসীবাহিনীর শাসনের মধ্যে গণতন্ত্র প্রসারণের জন্য যেখানে আমরা যতটুকু সুযোগ পাব সেটা ব্যবহার করব। সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে নানাকিছু করতে পারে। আমাদের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা হচ্ছে জনগণ। আমরা জনগণের শক্তির ওপর ভর করে এই উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করব। গতকাল নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে উপনির্বাচনের মনোনয়ন ফরম জমা নেয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, এর আগেও দেখেছি, নির্বাচন, নির্বাচন কমিশন ও ভোট এগুলোকে জাদুঘরে পাঠানোর জন্য সরকার সকল আয়োজন সম্পন্ন করেছে। আমরা ১২ বছর নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করছি গণতন্ত্র ফেরানোর জন্য। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ নেতা থেকে তৃণমূলের নেতা কেউ ৫০ থেকে ২৫০-৩০০ মামলা নিয়ে এই সংগ্রামে অংশ নিচ্ছে। আমরা এসব উপনির্বাচনকে সংগ্রামের অংশ হিসেবে নিয়েছি।
তিনি বলেন, যদিও ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে জনগণের ওপর অত্যাচার করে তাদের হয়ত সাময়িক লাভ হতে পারে। তবে সবশেষ জনগণের শক্তিরই চ‚ড়ান্ত বিজয় হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা এগুচ্ছি, ইনশাল্লাহ এসব উপনির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হবে।
করোনা মহামারির মধ্যেও সকাল থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে সরব হয়ে উঠেছে নয়া পল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, নওগাঁ-৬ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সকাল থেকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়। চার আসনের জন্য মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে ২৯টি। এরমধ্যে ঢাকা-১৮ আসনের জন্য মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ঢাকা-৫ আসনে, মহানগর দক্ষিণের সহসভাপতি নবী উল্লাহ নবীসহ ১২ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী তাদের ফরম জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্রের মূল্যমান ১০ হাজার টাকা। ২৫ হাজার টাকা জমানতসহ প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম জমা দিচ্ছেন।
সকাল ৯টা থেকে ধানের শীষ, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি নিয়ে কর্মী-সমর্থকরা মিছিল নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেত হয়। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
ঢাকা-১৮ আসনের (উত্তরা) মনোনয়ন প্রত্যাশী যুবদলের জাহাঙ্গীর বলেন, এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৯১ সালে এই আসন থেকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এখানে যত উন্নয়ন হয়েছে সব বিএনপি সময়ে হয়েছে। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে ইনশাল্লাহ এই আসনে ধানের শীষ বিজয় করব। আমি বিশ্বাস করি দলের মনোনয়ন পেলে নেতা-কর্মী-সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব এবং আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।
তিনি বলেন, যতই ষড়যন্ত্র করুক, তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে আমরা ইনশাল্লাহ বিজয় ছিনিয়ে আনতে পারব। ঢাকা-১৮ আসনে এমন ফলাফল হবে, যে ফলাফলে সারা বাংলাদেশে নেতা-কর্মীরা উজ্জীবিত হবে।
নওগাঁ-৬ আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়া আনোয়ার হোসেন বুলু বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি, বাংলাদেশের স্বাধীনতায় অবদান আছে আমার। আশা করি এই উপনির্বাচনে আত্রাই-রানীনগর থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিজয়ের সংগ্রাম শুরু হবে। আগামী নির্বাচনে আমার বিজয়ের মধ্য দিয়েই আমাদের জয়যাত্রা শুরু হবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে নির্বাচনের পরে ২টি থানা, ১৬টি ইউনিয়ন, ১৪৪টি ওয়ার্ড, ৪৫০টি গ্রামে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল ও ছাত্র দলের শক্তিশালী সংগঠন আছে এবং এই সংগঠনের নেতৃত্ব আমি দিয়েছি। ইনশাল্লাহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে আগামী দিনে নওগাঁ-৬ আসন আমি উপহার দিতে পারব।
ঢাকা-৫ আসনের জন্য আলহাজ্ব সালাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, নবী উল্লাহ নবী, মো. জুম্মন মিয়া ও আকবর হোসেন নান্টু এবং ঢাকা-১৮ আসনের জন্য এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, এম কফিল উদ্দিন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ইসমাইল হোসেন, বাহাউদ্দিন সাদি, মোস্তফা জামান সেগুন, মো. আখতার হোসেন, আব্বাস উদ্দিন, নওগাঁ-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন বুলু, আবদুস শুকুর, এম এম ফারুক জেমস, মাহমুদুল আরেফিন স্বপন, ইসহাক আলী, আতিকুর রহমান রতন মোল্লা, শেখ মো. রেজাউল ইসলাম, মো. শফিকুল ইসলাম, আবু সাঈদ রফিকুল আলম রফিক এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএ্ম তাহজিবুল ইসলাম, নাজমুল হাসান তালুকদার রানা ও রবিউল হাসান মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা ১০ হাজার টাকা মূল্যমানে ফরম সংগ্রহ করে ২৫ হাজার টাকা জামানতসহ ফরম জমা দেন। আজ বিকাল ৫টায় গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রার্থীদের সাক্ষাতকার নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে ১৭ অক্টোবর। ঢাকা-১৮ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনেরে উপ-নির্বাচনের তফসিল কমিশন এখনো ঘোষণা করেনি।
আওয়ামী লীগের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে ঢাকা-৫, ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে নওগাঁ-৬, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১ এবং সাহারা খাতুনের মৃৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন