বুধবার, ০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

পোশাক শিল্পে চক্রান্ত মোকাবেলা করেছি : প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০০ এএম, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : সরকার পোশাক শিল্প নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শুধু জাতীয় পর্যায় থেকে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও এ ধরনের চক্রান্ত হচ্ছিলো। যেটা আমরা মোকাবেলা করেছি।
গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ নেতাদের সাক্ষাৎকালে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফেকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসাসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সংগঠনের নবনির্বাচিত কর্মকর্তারা সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি টিপু মুন্সী এমপি ও আতিকুল ইসলাম এ সময় বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেটাকে বড় করে দেখানো বা সেটার সূত্র ধরে আমাদের পোশাক শিল্প রপ্তানিতে বাধা দেওয়ার নানা রকম চেষ্টা হয়েছিলো। শুধু জাতীয় পর্যায় থেকে নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও এ ধরনের একটা চক্রান্ত হচ্ছিলো। যেটা আমরা মোকাবেলা করেছি। ব্যবসায়ীরা যেমন এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকেও যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই তারা আর সফল হতে পারেনি।
তিনি বলেন, পোশাক শিল্প নিয়ে অনেক কিছু ঘটে গেছে। রানা প্লাজা, তাজরিন ফ্যাশনসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এগুলো মোকাবেলার জন্য যা যা করা দরকার সেগুলো আমরা করছি।
দেশে তৈরি পোশাক শিল্পের আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে গজারিয়ায় গার্মেন্ট পল্লীর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারি প্রয়াসের সহযোগিতা দেয়ার জন্য গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান। তিনি বলেন, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় একটি গার্মেন্ট পল্লী স্থাপনের লক্ষ্যে আমাদের সরকার ভূমি বরাদ্দ দিয়েছে। এই পল্লী গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাজ চলছে। আপনারা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ এবং অর্থ ব্যয় করলে এটি দ্রুত সম্পন্ন করা যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি মনে করি আপনারা কৃপণতা দেখিয়েছেন ও টাকা বাঁচিয়েছেন। সেটাই সমস্যা।
শেখ হাসিনা বলেন, গার্মেন্ট পল্লী প্রতিষ্ঠার জন্য গ্যাস সরবরাহ থেকে শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে। আপনারা অর্থ ব্যয় এবং আপনাদের কারখানাগুলো স্থানান্তর করতে শুরু করলে এই পল্লীতে কোন সমস্যা হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানী আরো বৃদ্ধি এবং অর্থনীতি জোরদার করার লক্ষ্যে বিদেশে নতুন নতুন বাজার খুঁজে বের করার জন্য গার্মেন্ট ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারকে ব্যবসায় বান্ধব সরকার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তার সরকার কখনও ব্যবসায় করতে চায় না, বরং এ সরকার দেশের অর্থনীতিকে একটি দৃঢ় ভিত্তি দেয়ার জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
তিনি বলেন, ব্যবসা করার জন্য আমরা সরকার গঠন করিনি, বরং আমরা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকারের দায়িত্বে রয়েছি যাতে ব্যবসায়ীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ব্যবসা করতে পারেন এবং আমরা ইতোমধ্যে সে পরিবেশ নিশ্চিত করেছি।
ব্যাংকের উচ্চ সুদের হার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী এই ধরনের পরিস্থিতির অবসান ঘটানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য বেসরকারি ব্যাংকগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, জাতীয়করণকৃত ব্যাংকগুলো অপেক্ষাকৃত কম সুদে ঋণ প্রদান করছে।
তৈরি পোশাক খাতের আরো উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই খাতে বিপুলসংখ্যক নারী-পুরুষ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা দেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে ব্যাপক অবদান রাখছে।
নারী গার্মেন্ট শ্রমিকদের অবদানের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশের অর্থনীতি জোরদার করতে অবদান রাখছে এবং বাড়তি সময় কাজ করে বায়ারদের রপ্তানী চাহিদা পূরণ করছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের আরো কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য গার্মেন্ট শিল্প মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান। কারণ, তারা হচ্ছে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মূল চালিকা শক্তি।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের যুগান্তকারী সাফল্যের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, আমরা যে কোন সময় কমপক্ষে ১২ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম।
তিনি বলেন, তার সরকার গত সাত বছরে গ্যাস উৎপাদনও বাড়াতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া, গ্যাস উৎপাদন আরো বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বিজএমইএ নেতৃবৃন্দ দেশ পরিচালনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নেতৃত্বের অধীনে বিভিন্ন খাতে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে।
বাংলাদেশ-কানাডা সরাসরি ফ্লাইট চালুতে গুরুত্বারোপ
বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, দুই দেশের মানুষের সুবিধার জন্য এটা প্রয়োজন। গতকাল রোববার সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে কানাডার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বেনোইত-পিয়েরে লারামি সৌজন্য সাক্ষাতে এলে এ কথা বলেন তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ বিষয়ে ব্রিফ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী কানাডায় বসবাস করেন। তারা দুই দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। কানাডার নবনির্বাচিত সরকারকে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন পিয়েরে জেম্স ট্রুডো’র নেতৃত্বাধীন সময়ে বাংলাদেশ ও কানাডার সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকা-ে কানাডা সরকারের অবদানের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রত্যাশিত উন্নয়ন অর্জনে সরকার শিক্ষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে বেসরকারি ও স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষায় তদারকি করতে সরকারের পরিদর্শক নিয়োগের কথা তুলে ধরেন।
গ্রামীণ ও শহুরে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যবধান কমে আসছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামে কর্মসংস্থান হচ্ছে। কাজের জন্য গ্রামের মানুষের শহরে আসা কমছে। সমবায় পদ্ধতির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে উৎসাহিত করছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কানাডা সরকারের অবদানের কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের তাক লাগানো সাফল্যের প্রশংসা করে কানাডার নবনিযুক্ত হাইকমিশনার বেনোইত-পিয়েরে লারামি বলেন, বাংলাদেশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। নবনির্বাচিত কানাডার প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী বলেও জানান নতুন হাইকমিশনার। তিনি বলেন, লিঙ্গসমতা, স্বাস্থ্য খাতের মতো বিষয়গুলোতেও কাজ করতে আগ্রহী কানাডা।
বাংলাদেশকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় শীর্ষ নেতৃত্বস্থানীয় দেশ হিসেবে উল্লেখ করে কানাডার হাইকমিশনার বলেন, তার দেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে গুরুত্ব দেয়।
বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি গোটা বিশ্বের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে বলেও উল্লেখ করেন বেনোইত-পিয়েরে লারামি। কূটনৈতিক এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রশংসা করেন তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন