দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সরকার করোনা মহামারির সময় আরও বেশি কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠেছে। দেশগুলোতে সরকারের যে কোন সমালোচনা বন্ধে জারি করা হচ্ছে নতুন আইন ও নিয়ম-কানুন। কোভিড-১৯ সংকটকালে সৃষ্ট পরিস্থিতি গোটা অঞ্চলে স্বাধীন সাংবাদিকতার ক্ষেত্রকে সংকুচিত করছে ।
‘কোভিড-১৯ এর সংকটকালে ও তারপরে নেপালের গণমাধ্যমের অবস্থা’- বিষয়ক ওয়েবিনারে বক্তারা এ কথা বলেন। গত মঙ্গলবার বিকেলে আর্টিকেল নাইনটিন ও মিডিয়া এডভোকেসি গ্রুপ নেপাল যৌথভাবে এ অনলাইন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আর্টিকেল নাইনটিন এর দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন নেপালের দৈনিক অন্নপূর্ণা পোস্টের সাবেক সম্পাদক হরি বাহাদুর থাপা, ফেডারেশন অব নেপালি জার্নালিস্টের প্রেসিডেন্ট গোবিন্দ আচারিয়া এবং ইংরেজী দৈনিক হিমালয়ন টাইমসের সদ্য পদত্যাগী সম্পাদক প্রকাশ রিমাল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নেপালের সংবাদ মাধ্যম ‘ঘটনা রো বিচারের’ সম্পাদক ও মিডিয়া এডভোকেসি গ্রুপ নেপালের নির্বাহী পরিচালক ববিতা বাসনেত। বাংলাদেশ ও নেপালের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক, সম্পাদক, মতপ্রকাশকর্মী ও মানবাধিকারকর্মীরা অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে ফারুখ ফয়সল বলেন, করোনা পরিস্থিতি বাংলাদেশ ও নেপালের গণমাধ্যম শিল্পকে অভিন্ন সংকটের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রাথমিকভাবে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম ব্যবস্থপানার সামগ্রিক মূল্যায়ন জরুরী। নতুন স্বাভাবিকে টিকে থাকতে হলে সাংবাদিকতার ডিজিটাল রূপান্তর ও গবেষণাভিত্তিক আধেয় (কন্টেন্ট) তৈরির পাশাপাশি গণমাধ্যমের আয় বাড়ানোর কৌশলের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। অনুষ্ঠানে হরি বাহাদুর থাপা বলেন, নেপালে স্বাধীন সাংবাদিকতার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। এখানকার গণমাধ্যম শিল্প এখনও নবীন। বিনিয়োগকারী ও মালিকদের বেশিরভাগই মূলত বণিক শ্রেণির। নিজেদের ব্যবসার স্বার্থে ও প্রভাব বিস্তার করতে তারা গণমাধ্যমকে অনৈতিকভাবে ব্যবহার করে। বর্তমান সঙ্কটকালে এরাই অন্যায্যভাবে কর্মী ছাঁটাই করছে। তিনি বলেন, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে নেপালের বর্তমান সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠেছে। সরকারের যে কোন সমালোচনা কঠোরভাবে দমন করা হচ্ছে। এটি সাংবাদিকদের মনে ভয় ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে, যার কারণে বর্তমানে নেপালের গণমাধ্যমে সরকারের কোন সমালোচনা হয় না। গোবিন্দ আচারিয়া বলেন, করোনা পরিস্থিতির দরুণ নেপালজুড়ে ৬০০ পত্রিকা ও ৭টি রেডিও স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। দুই হাজারেরও বেশি গণমাধ্যমকর্মী চাকরিচ্যুত হয়েছেন। আর বর্তমানে কর্মরত সাংবাদিকদের অন্তত ৫০ শতাংশ নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। জীবিকার সঙ্কটের পাশাপাশি কর্মরত সাংবাদিকদের করোনা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্ভরযোগ্য ও সঠিক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রেও লড়াই করতে হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন