শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

নেত্রকোনার ঐহিত্যবাহী বালিশ মিষ্টি

স্যারদের ‘ম্যানেজ’ করতেও এর জুড়ি নেই

এ কে এম আব্দুল্লাহ, নেত্রকোনা থেকে | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:১৭ এএম

‘মিষ্টি-গোল্লা পেয়ে শ্বশুর/করলো চটে নালিশ/ কথা ছিল আনবে জামাই/নেত্রকোনার ঐহিত্যবাহী বালিশ’। জ্বি না, এটি তুলা দিয়ে তৈরী ঘুমানোর জন্য কোন তুলতুলে বালিশ নয়। রসনা বিলাসীদের তৃপ্তির বালিশ। নেত্রকোনার ঐহিত্যবাহী খাওয়ার মিষ্টি বালিশ। নেত্রকোনার বহুল প্রচলিত লোকজ ছড়াটি যুগ যুগ ধরে বহন করে চলেছে এই বালিশের ঐতিহ্য। 

বালিশ মিষ্টির কারিগর হলেন নেত্রকোনা শহরের বারহাট্টা রোডের গয়ানাথ ঘোষ। প্রায় শত বছর আগে তিনি শখের বসে বালিশ মিষ্টি তৈরী করেন। পরবর্তীতে ‘গয়ানাথ মিষ্টান্ন ভাÐার’ নামে নিজেই একটি মিষ্টির দোকান দেন।

মিষ্টির আকার অনেকটা কোল বালিশের মতো। তাই এর নাম রাখেন বালিশ মিষ্টি। স্বাদে অতুলনীয় হওয়ায় অল্পদিনেই বালিশ মিষ্টির সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সাথে এই মিষ্টির মূল কারিগর গয়ানাথ ঘোষও ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। তাই এক সময় তার মিষ্টির সঙ্গে নিজের নামটিও জড়িয়ে যায়। লোকমুখে বালিশ মিষ্টির নাম হয়ে ওঠে ‘গয়ানাথের বালিশ’।

গয়ানাথ ঘোষ ১৯৬৯ সালে ভারতে চলে যাওয়ার আগে অন্যান্য কারিগরকে বালিশ মিষ্টি তৈরীর নিয়ম কানুন শিখিয়ে যান। সেই থেকে নেত্রকোনার প্রতিটি মিষ্টির দোকানে বালিশ মিষ্টি তৈরী করা হয়। বিশেষ করে খান মিষ্টান্ন ভাÐার, মাতৃছায়া, শ্রীকৃষ্ণ মিষ্টান্ন ভাÐার, দূর্গা কেবিন, মুক্তি মিষ্টান্ন ভাÐার, মিষ্টিঘর, মধুবন, জ্ঞানদা মিষ্টান্ন ভাÐার, উত্তরা সুইটস দোকানে নিয়মিত বালিশ মিষ্টি তৈরী করা হয়।

এসব দোকানের বালিশ মিষ্টি এখন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার অভিজাত মিষ্টির দোকানে সরবরাহ করা হয়। তবে ঐতিহ্যবাহী বালিশ মিষ্টি বিক্রি হয় পিস হিসাবে। এর সাধারণ সাইজ তিনটি। যার দাম ২৫ টাকা, ৫০ টাকা ও ১০০ টাকা। তবে অর্ডার দিলে ২০০ বা ৫০০ টাকার বালিশও কিনতে পাওয়া যায়। এখানে বলে রাখা ভাল, যেনতেন খাদকরা এত বড় বালিশ খেতে পারেন না।

বালিশ মিষ্টি তৈরি হয় দুধ-ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। প্রথমে দুধের ছানার সঙ্গে সামান্য ময়দা মিশিয়ে মÐ তৈরি করা হয়। মÐ দিয়ে বানানো হয় বিভিন্ন সাইজের বালিশ। পরে তা ভাজা হয় চিনির গরম রসে।
এরপর ঠান্ডা করেও চিনির রসে ডুবিয়ে রাখা হয় অনেকক্ষণ। এক সময় তা রসে টুইটম্বুর হয়ে যায়। বিক্রির সময় বালিশের ওপর দেয়া হয় ক্ষীরের প্রলেপ বা দুধের মালাই। এছাড়াও বালিশ মিষ্টি তৈরীর প্রক্রিয়া সম্পর্কে কারিগররা ব্যবসায়ীক স্বার্থে কিছুটা গোপনীয়তা রক্ষা করে চলেন।

নেত্রকোনায় যে কোন অনুষ্ঠান হলে সবার আগে চলে আসে বালিশ মিষ্টির নাম। বিশেষ করে জন্মদিন কিংবা বিয়ে হলে তো কোনো কথাই নেই। বালিশ মিষ্টি অবশ্যই থাকতে হবে। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে এই মিষ্টির ছড়াছড়ি থাকে।
অন্যান্য সামাজিক বা অফিস-আদালতের অনুষ্ঠানেও প্রাধান্য পায় বালিশ মিষ্টি। আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও অনেকে সঙ্গে করে নিয়ে যান বালিশ। বন্ধুদের বাজিতেও ওঠে আসে বালিশের নাম। অফিসের বড় কর্তা বা স্যারদের ‘ম্যানেজ’ করতেও বালিশ মিষ্টির জুড়ি নেই।

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, আর পাহাড়ের কোল ঘেষে কল কল করে বয়ে চলা স্বচ্ছ নীলাভ পানি। চীনা মাটির খনি, সিলিকন বালি, হাওর বাওরে মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি নেত্রকোনা। আর হ্যা যদি নেত্রকোনায় বেড়াতে আসেন অবশ্যই বালিশ মিষ্টির রস আস্বাদন করতে ভুলবেন না।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Ahm Islam ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫০ এএম says : 0
এখন অার সেই কোয়ালিটি নেই।
Total Reply(0)
Sabirun Nahar Mila ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫০ এএম says : 0
আমাদের ঐতিহ্য
Total Reply(0)
Atik Haider ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫০ এএম says : 0
অনেক খেয়েছি
Total Reply(0)
Amin Mia ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫১ এএম says : 0
তবে আগের মতো আছে কি
Total Reply(0)
Md Tariqul Islam ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫১ এএম says : 0
টাংগাইলের মিষ্টির উপরে কোন মিষ্টি নাই।সেটা বালিশ হোক, আর গোল্লা হোক।টাংগাইলের পোড়াবাড়ীর মিষ্টি বিশ্ববিখ্যাত।
Total Reply(0)
Sk Rupon ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫১ এএম says : 0
অনেক খাইছি বালিশ মিষ্টি
Total Reply(0)
Shoaib Ahmad ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৫১ এএম says : 0
Eta ekhon namei chole,ager shad ar nei
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন