বিশেষ সংবাদদাতা : ‘জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক জাগরণ’ শীর্ষক যৌথ বৈঠকে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহায়তায় সংস্কৃতি চর্চা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়া হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদসহ বিশিষ্টজনদের মাধ্যমে সমন্বিত এ উদ্যোগ গ্রহণ করবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এবং বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বৈঠক করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ রুখতে দেশের স্কুল-কলেজসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংস্কৃতি চর্চা জোরদারে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি সন্ত্রাসীদের ধারাবাহিক কর্মকা-ে আমরা উদ্বিগ্ন। আর বিলম্ব করা, উদাসীনতা দেখানোর সুযোগ নেই। তৃণমূল পর্যন্ত সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে যেতে আমরা কর্মসূচি নেব। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিল্পকলা একাডেমি, গণগ্রন্থাগার এবং সাংস্কৃতিক কর্মীদের সহায়তা নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব। কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আমরা নবীন প্রজন্মকে প্রকৃত বাঙালি এবং মানুষ হিসেবে গড়ে তুলব।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, সংস্কৃতি মানে শুধু গান-বাজনা নয়, শিক্ষার্থীদের মধ্যে বোধ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কর্মসূচি নেওয়া হবে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে চেতনা জাগাতে চাই, জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় যেন না পায়।
গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আমরা এখন একটা সংকটের মধ্যে আছি। জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় এখন সারাদেশেই আন্দোলন চলছে। আমরা দ্রুত সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করতে চাই। আমরা সমন্বিত কার্যক্রম চালু করব। সংস্কৃতির শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ। সংস্কৃতি শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদরাসায় সংস্কৃতিক চর্চা জোরদার করা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অভিভাবক, স্থানীয় ব্যক্তি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের নিয়ে সভা করবে। সারাদেশের সব কাজের সমন্বয় করা হবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, জঙ্গিবাদের যেন আর উত্থান না ঘটতে পারে, জাতি হিসেবে আমাদের সেই দায়িত্ব রয়েছে। দেশে ৬৫ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিক শিক্ষা দিতে চাই। সব শিক্ষার মধ্যেই কিছু গলদ আছে। বিদ্যালয়ের পাশাপাশি পরিবারকেও ভূমিকা রাখতে হবে।
বৈঠকে জানানো হয়, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ রুখতে স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যুক্ত করা ও বাধ্যতামূলকভাবে পরীক্ষায় নম্বরের ব্যবস্থাসহ স্বেচ্ছাসেবক তৈরি করা হবে।
বৈঠকে বলা হয়, শিক্ষা ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে পাঠ্যসূচিতে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা হবে। প্রতিটি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়ে নম্বরের ব্যবস্থা রাখা হতে পারে। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে সোনার বাংলা গঠনের লক্ষ্যে যুবকদের স্বেচ্ছাশ্রমে উদ্বুদ্ধ করা হবে। এক্ষেত্রে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তরুণদের স্বেচ্ছাশ্রমে উৎসাহিত করতে প্রথাগত বা গতানুগতিক প্রক্রিয়ার বাইরে সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রন্থাগারিকদের দিয়ে সংস্কৃতি চর্চার পরিসর বৃদ্ধি করতে চায় মন্ত্রণালয়। এজন্য জেলায় জেলায় শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এবং সরকারি গণগ্রন্থাগারের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সংস্কৃতি চর্চার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। জেলা-উপজেলার সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকেও সমন্বয় করা হবে। শিক্ষাবিদ, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক, আবৃত্তিকারদের নিয়েও কাজ করবে সরকার।
বৈঠকে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আবুল মোমেন, গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস, হাসান আরিফ, বিশ্বজিৎ রায়, যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দে, চিত্রনায়ক ফারুক আহমেদ, অভিনেতা ড. ইনামুল হক, ড. মুহাম্মদ সামাদ এবং মফিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন