নূরুল ইসলাম : উপরে-নিচে বিস্তর ফারাক। ফ্লাইওভারের উপরে ঝঁকঝঁকে রাস্তা। নিচে খানাখন্দে ভরা রাস্তা সাথে নোংরা দুর্গন্ধময় পরিবেশ। নিচের রাস্তা দিয়ে চলতে গেলে সীমাহীন ভোগান্তি। বর্ষা সেই ভোগান্তির মাত্রা কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও অনেকটা আগের মতোই আছে। কোনো কোনো স্থানে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। ভুক্তভোগিদের মতে, দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন সংস্কারের কাজে অত্যন্ত ধীর গতির কারণে মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ২০১৩ সালে উদ্বোধনের পর এখন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর দিয়ে দ্রুত বেগে গাড়ি ছুটলেও এর নিচের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় ছিল। যা নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই নগরবাসীর। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু বলেন, সবগুলো রাস্তার কাজ শুরু হয়নি। যেগুলো সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল সেগুলোও পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে মানুষকে। তবে এবারই শেষ। আগামী বছর আর এমন ভোগান্তি থাকবে না।
রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো বহু বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী। ২০১৩ সালে ফ্লাইওভারটি উদ্বোধনের অন্ততঃ তিন বছর আগে থেকে খোঁড়াখুড়ির কারণে শনিরআখড়া থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে গুলিস্তান পর্যন্ত রাস্তার বেহাল অবস্থা ছিল। তখন বহু মানুষ দয়াগঞ্জ বা জুরাইন হয়ে বিকল্প রাস্তায় চলাচল করেছে। ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর রাস্তা ঠিক হবে এমন আশাতে ইতোমধ্যে প্রায় তিন বছর কেটে গেছে। কিন্তু ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা সংস্কার না হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। তাতে ভুক্তভোগিরা ধরেই নিয়েছিলেন বর্ষার আগে সব কাজ শেষ হবে। কিন্তু তা হয়নি। বরং এবার বর্ষাতেও মানুষকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্ত থেকে ডেমরা, শনিরআখড়া ও ধোলাইপাড়ের দিকে রাস্তার কোনো কোনো স্থানে দুই ফুট গর্তও আছে। সেখানে যানবাহন আটকে সৃষ্টি হয়েছে যানজট। বেড়েছে ভোগান্তি। আবার কোনো কোনো স্থানে ড্রেনের ময়লা পানি আর রাস্তার পানি একাকার হয়ে পঁচা দুর্গন্ধে ওই সব এলাকা দিয়ে চলাই যায় না। শুস্ক মৌসুমে এসব রাস্তাধুলা বালিতে অন্ধকার হয়ে থাকে। সুস্থ মানুষ ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে দিনে দুই বার চললেই অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। ফ্লাইওভারের নিচেই দেশের পূর্বাঞ্চলের ১৮টি জেলায় সড়কপথে যাতায়াতের একমাত্র টার্মিনাল। এই টার্মিনালের আশেপাশের পরিবেশও নোংরা, ময়লা আবর্জনাযুক্ত। রাস্তাগুলো বেদখল হয়ে যাওয়ায় যেখানে সেখানে দোকান-পাট সাথে আবর্জনার ভাগাড়। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির এক নেতা বলেন, ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলোর দিকে প্রশাসন বা ভিআইপিদের নজর কম। তারা নিচ দিয়ে চলেন না বলে খবরও রাখেন না। অথচ একটু নজর দিলে পুরো টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকার চেহারা অন্যরকম হতে পারে। তখন দেশের পূর্বাঞ্চলের ১৮টি জেলার লাখ লাখ সড়ক পথের যাত্রীর ভোগান্তি কমতো। আমরাও ব্যবসা করে শান্তি পেতাম। সরেজমিনে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে ডেমরা, শনিরআখড়া, ধোলাইপাড়ের রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। ডেমরার দিকে রাস্তাটি ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। রাস্তাটির ৬০ ভাগ গর্ত ও খানাখন্দে চলাচলের অনুপযোগি হওয়ায় ডানদিকের কিছু অংশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। যাত্রাবাড়ী পাইকারী কাঁচাবাজারের সামনের রাস্তাটি দেখলে মনে হবে না এটা কোনো রাস্তা। গর্ত ও খানাখন্দে একাকার হয়ে গেছে। পাইকারী মালামাল ও মাছ বহনকারী ট্রাকের কারণে দিন দিন অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান। আব্দুস সাত্তার নামে এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, এতো বড় একটা পাইকারী বাজারের এই বেহাল দশা। এদিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। বহুদিন ধরেই এই অবস্থা চলছে। যাত্রাবাড়ী থেকে ধোলাইপাড়ের রাস্তাটি দিয়েও যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে আটকে যায়। যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে খুব শিগগিরি রাস্তাগুলোর সংস্কারের কাজ শুরু হবে বলে জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল কালাম অনু। তিনি বলেন, গত মাসের ১৮ তারিখে যাত্রাবাড়ী থেকে ডেমরা, শনিরআখড়া ও ধোলাইপাড়ের রাস্তা নির্মাণের টেন্ডার হয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডার হলেই কাজ শুরু হয়ে যাবে। কাউন্সিলর আনু বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে সায়েদাবাদ হয়ে টিকাটুলি পর্যন্ত বেশিরভাগ রাস্তার ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু কার্পেটিং বাকি। এ ছাড়াও যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে শহীদ ফারুক রোড সংস্কারের কাজও শুরু হবে বলে কাউন্সিলর আনু জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন