সহসাই অনুমোদন পাচ্ছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। তবে কমিটি নিয়ে দেখা দিয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত জেলা কমিটি পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত এ কমিটির তালিকা নিয়ে জল্পনা কল্পনা এখন ব্যাপক। বলয় কেন্দ্রিক নেতাদের নামের নিরঙ্কুশ আধিক্য রয়েছে এ তালিকায়। সে কারণে বাদ পড়তে যাচ্ছেন দলের অনেক ত্যাগী ও সিনিয়র পদপ্রত্যাশি নেতারা। এতে বিরাজ করছে চাপা অসন্তোষ।
জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদনে থাকবে রাজনীতির চমক। নতুবা বলয় কেন্দ্রিক নেতৃত্বের দাপটে দলীয় লক্ষ্য উদ্দেশ্য ও প্রভাব ক্ষুন্ন হবে এমন আশঙ্কা করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা। এদিকে ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশনা থাকলেও এখন ৯ মাসে গড়াচ্ছে। অবশেষে দলের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদকের কঠোর নির্দেশনার পর গত ১৪ সেপ্টেম্বর জেলার পূর্নাঙ্গ কমিটির প্রস্তাবিত তালিকা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। তালিকায় সহ-সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে সর্বশেষ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছকে। শফিকুর রহমান চৌধুরী কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে সমাদৃত।
অপরদিকে, করেনাকালীন পরিস্থিতিতে নিজ এলাকায় অবস্থান করে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে আলোচিত হন এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। ইতোবাচক তৎপরতায় কুড়িয়েছেন ব্যাপক প্রশংসাও। জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি লুৎফুর রহমান বয়সের ভারে কাহিল। পড়ন্ত বেলায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের বিবেচনায় তিনি পেয়েছেন মূল্যায়ন, কিন্তু বয়স খুবই প্রতিক‚ল তার জন্য। সেকারণে মাঠ রাজনীতি থেকে অনেক অনেক দূরে তিনি। তাই জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানই এখন সাংগঠনিকভাবে নীতি নির্ধারকের একচ্ছত্র অধিকারী। সেকারণে প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির স্বচ্ছতা বা দল উপযোগী নেতৃত্ব গঠনের ব্যর্থতার দায় তার উপর চাপবে বলে মনে করছেন সাধারণ নেতাকর্মীরা।
দলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত কমিটিতে স্থান হয়নি আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত সিনিয়র অনেক নেতাদের। এদের অনেকেই বিগত কমিটিতে গ্রহণ যোগ্য কাজ দেখিয়েছেন। এছাড়া তারা দলে পরীক্ষিত সাধারণ কর্মীদের নিকট ভরসাপূর্ণ। কেবল মাত্র বলয় রাজনীতির প্রতিহিংসা ও নতুন কমিটিতে আধিপত্য বিঘ্ন হতে পারে বলেই নেতৃত্বহীন করার পায়তারা করা হয়েছে তাদের। অথচ বিতর্কিত ও জুনিয়র অনেকেই প্রস্তাবিত কমিটির গুরুত্ব্পূর্ণ পদে স্থান করে নিয়েছেন। বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে রয়েছে মুস্তাক আহমদ পলাশের নাম। পারিবারিক রাজনীতি তার বিতর্কিত। এছাড়া পাথর খেকো হিসেবে দুর্ণাম রয়েছে তার। লোভাছড়া পাথর কোয়ারী কেন্দ্রিক লোপাট ও পরিবেশ বিরোধী কর্মকান্ডে দুদকসহ বিভিন্ন দফতরে রয়েছে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ। অবৈধ অর্থের দাপটে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় ছড়ি ঘুরান প্রশাসনেও। সেকারণে তার অবস্থান আরো শক্তিশালী করতে জেলা আওয়ামী লীগের পদ বাগিয়ে নিতে চান তিনি। এমনকি দলীয় স্বার্থ তথা ভাবমূর্তির চেয়ে পলাশের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলেই এ পদে তার নাম জুড়ে দেয়া হয়েছে রহস্যজনক কারণে, এমন সর্তক অভিমত দলের নেতাকর্মীদের। প্রস্তাবিত তালিকা সুচারুভাবে কেন্দ্র বিবেচনায় নিলে অনেকের অতীত ও বর্তমান আমলনামাসহ পদবী নেয়ার মতলব উঠে আসবে বলে দলের নিবেদিত নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটির যুব ক্রীড়া সম্পাদক ও বর্তমান প্রস্তাবিত কমিটির (সাংগঠনিক সম্পাদক-৩) তালিকায় রয়েছেন অ্যাডভোকেট রনজিত সরকারের। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত কমিটি একপেশে ও বলয় নির্ভর। কমিটির সভাপতি লুৎফুর রহমান অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান একান্ত তার খেয়াল খুশিতে এ কমিটি তৈরী করে প্রস্তাবিত কমিটি হিসেবে জমা দিয়েছেন। এখানে দলের রাজনীতিক স্বার্থ ও বলয় ভিত্তিক রাজনীতির ভারসাম্যে অস্বীকার করা হয়েছে। এতে করে চাপা অসন্তোষ দৃড় হচ্ছে। তাই সিলেটের আওয়ামী লীগ রাজনীতির ঐতিহ্য রক্ষায় সিনিয়র ও ত্যাগীদের যথাযথ মূল্যায়ন জরুরী। ব্যতয় হলে দলীয় রাজনীতির বিকাশ ও ইমেজ লুন্ঠিত হবে। বিষয়টি বিবেচনায় নিতে দলের হাইকমান্ড তথা দলীয় সভানেত্রীর একান্ত হস্তেক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন