আশ্বিনের তীব্র খরতাপের পর স্বস্তির বৃষ্টিতে আবারও বিপাকে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলবাসী। আটকানো বাঁধগুলো আবারও ভেঙে যাচ্ছে। পানিতে ছয়লাব হচ্ছে বিস্তৃর্ণ জনপদ। আশ্বিনের সূর্যের কড়া তেজে খুলনায় গরমের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছিল। খটখটে রুক্ষ আবহাওয়ায় ভ্যাপসা গরমে-ঘামে মানুষ হাঁসফাঁস করছিল। অবশেষে গত দু’দিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে খুলনায়। ফলে তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। জনমনে ফিরেছে স্বস্তি।
কিন্তু সে স্বস্তি যেন এখন অভিশাপ আম্পানে বিধ্বস্ত উপক‚লবাসীর জন্য। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত দুর্বল বাঁধ গত দু’দিনের বৃষ্টির পানিতে আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। রাতের ঘুম আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে উপক‚লবাসীর জন্য। যে কোন মুহূর্তে খুলনাঞ্চলীয় উপক‚লের বিস্তৃর্ণ বেড়িবাঁধ ভেঙে আবারও প্লাবিত হতে পারে আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো।
সূত্র মতে, আম্পানের প্রভাবে উপক‚লীয়াঞ্চলের অধিকাংশ বেড়িবাঁধ হুমকির মুখে রয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে রয়েছেন উপক‚লবাসী। ঘুমের মধ্যেও তারা আতকে ওঠেন, এই বুঝি বাঁধ ভেঙে গেল। বেড়িবাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দুই থেকে তিন ফুট চওড়া মাটির বাঁধ রয়েছে। তাও আবার বৃষ্টিতে ধুয়ে নরম হয়ে গেছে। বাঁধের অনেক দুর্বল জায়গা ভেঙে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। যেকোনো সময় জীর্ণশীর্ণ বেড়িবাঁধ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। আর সেই আশঙ্কা নিয়েই চলতি দুর্যোগ মৌসুমে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে খুলনা জেলার কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি ও বাগেরহাট উপক‚লের লাখ লাখ মানুষ।
এদিকে গতকাল বৃষ্টিতে কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা পাউবোর বাঁধ ভেঙে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা পান্নার নেতৃত্বে হরিণখোলা গ্রামের ২৫-৩০ জন বাঁধ আটকাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে। খুলনা জেলার সুন্দরবন সংলগ্ন দাকোপ ও কয়রা উপজেলার চতুর্দিক নদীবেষ্টিত। এ দুই উপক‚লীয় এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংস্কার করা হলেও সেগুলো দীর্ঘমেয়াদি হয়নি। সর্বশেষ আম্পানের তান্ডবে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধগুলো। বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়া বিরূপ হলে পানির চাপে দুর্বল বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে।
অন্যদিকে শ্যামনগর উপজেলার নদীবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরায় ফের ভয়াবহ নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত রোববার ভোর ৪টার দিকে ইউনিয়নের গাবুরায় সরকারি দৃষ্টিনন্দন প্রকল্প সংলগ্ন ট্রলার ঘাটটি খোলপেটুয়া নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। খুলনাঞ্চলের দশ লাখ মানুষের জীবন জীবিকা অরক্ষিত ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। সিডরের পরও বার বার হানা দিয়েছে আইলা, নার্গিস, আম্পানসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এসব দুর্যোগ ছাড়াও সারা বছরই নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কায় ভুগছেন নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন