শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বিএনপি কি সত্যিই ‘সার্কাস পার্টি’?

প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টালিন সরকার : দেশের রাজনীতির জীবন্ত কিংবদন্তি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমেদ ১৯৮৮ সালে কৌতুক করে এরশাদের জাতীয় পার্টির নাম দেন ‘যাত্রা পার্টি’। ‘পুরান চাল ভাতে বাড়ে’ প্রবাদের মতোই ওই প্রবীণ নেতার দেয়া খেতাব যে অমূলক ছিল না জাতীয় পার্টির ৩০ বছরের রাজনীতিতে সে প্রমাণ মেলে। গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল বিএনপিকে সম্প্রতি ‘সার্কাস পার্টি’ খেতাব দিয়েছেন দলের এক অখ্যাত নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া। দলে শত শত ঝানু নেত্রীকে বাদ দিয়ে এই পাপিয়াকে বিগত নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি করা হয়। এই নেত্রী নতুন কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পেয়ে বিএনপিকে শুধু সার্কাস পার্টি হিসেবে অভিহিত করে ছাড়েননি; দলটি মীরজাফর দিয়ে ভর্তি বলেও মন্তব্য করেছেন। পাপিয়াকে নতুন কমিটিতে সহ-মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক পদ দেয়া হয়। তার স্বামী দুইবারের সংসদ সদস্য হারুন অর রশিদকে করা হয় রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক। কয়েক দিন আগে একটি অনলাইন পত্রিকায় সাক্ষাৎকারে পাপিয়া ও তার স্বামী হারুন দেশবাসীকে জানান, বেগম খালেদা জিয়ার উদ্যোগেই তাদের বিয়ে হয়। যে দলের শীর্ষ নেত্রী তার বিয়ের ব্যবস্থা করেছেন; জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনে এমপি করেছেন; স্বামীকে নমিনেশন দিয়ে দুইবার জাতীয় সংসদের এমপি করেছেন; সে নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সার্কাস পার্টির নেতৃত্ব দিচ্ছেন? সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া নিজের ফেসবুকে দেয়া স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘সৎ, যোগ্য, পরীক্ষিত, ঈমানদার, বিশ্বস্ত ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্বের শূন্যতা আজ শহীদ জিয়ার হাতে গড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে সার্কাস পার্টিতে পরিণত করেছে। আপোষহীন নেত্রী ও নিকটতম ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রনায়ক জননেতা তারেক রহমান মাইনাস টু পরিকল্পনার অংশ মাত্র। দল (বিএনপি) মোনাফেক বেঈমান চাটুকার তেলবাজ মীরজাফর দিয়ে ভর্তি।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আশরাফি পাপিয়া দীর্ঘ বক্তব্য তুলে ধরেছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনের আগে দেশে অনেকগুলো জরিপ হয়েছে। ওই সব জরিপে দেশের ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ভোটার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিলে তারা ধানের শীষে ভোট দেবেন। যে দলকে দেশের এই বিপুল সংখ্যক ভোটার ভোট দেয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে প্রশ্ন হলো সেই বিএনপির সত্যিই কি রূপান্তর ঘটেছে সার্কাস পার্টিতে? দলটিতে মোনাফেক, বেঈমান, চাটুকার, তেলবাজ, মীরজাফরে ভরে গেছে? এ অভিযোগ করছেন যাদের স্বামী-স্ত্রী দু’জনকে এমপি করা হয়েছিল এমন ব্যক্তি?
প্রশ্ন শুনেই উত্তরাঞ্চলের বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের একাধিক নেতা জবাব দিলেন। বললেন, জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী বিএনপির সার্কাস পার্টি হওয়ার সুযোগ নেই। তবে দলটি মোনাফেক, বেঈমান, চাটুকার, তেলবাজ, মীরজাফরে ভরে গেছে এটা সত্য। যারা মন্ত্রী-এমপি হয়ে বছরের পর বছর যুগের পর যুগ হালুয়া-রুটি খেয়েছেন তারা এখন কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় দলের বিরুদ্ধে যেভাবে বিষোদগার করছেন তাতে প্রমাণ হয় দলটি মোনাফেক, বেঈমান, চাটুকার, তেলবাজ, মীরজাফরে ভরে গেছে। বেগম খালেদা জিয়া যখন আন্দোলনের ডাক দেন আমরা মাঠে নামি; কিন্তু ওই সুবিধাবাদীরা সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করেন। ’৯২ দিনের লাগাতার অবরোধে সারাদেশ থেকে ঢাকা বিচ্ছিন্ন ছিল। আমরা জেলা-উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পথে ছিলাম, জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছি। কিন্তু সুবিধাবাদীরা রাস্তায় নামেননি। তারা কেউ হাসপাতালে, কেউ বিদেশে পালিয়েছিলেন। কেউ পিঠ বাঁচাতে ‘হারিয়ে গিয়েছিলেন’। কেউ ড. ফেরদৌস কোরেশীর কিংস পার্টিতে যোগদানের জন্য দেনদরবার করেছেন। কাজেই পাপিয়াদের মতো মোনাফেক-চাটুকার তো এখনো দলে রয়েছে। পদ-পদবি পেলে বিএনপি ‘ভালো’ আর না পেলে বিএনপি সার্কাস পার্টি? বেগম জিয়ার উচিত এই সুবিধাবাদী মোনাফেকদের চিহ্নিত করা।
দুই. দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলে (বিএনপি-আওয়ামী লীগ) নেতাকর্মীর ছড়াছড়ি। হাজার হাজার নেতানেত্রী থাকায় নির্বাচনে নমিনেশন দেয়া ও কমিটি গঠনে দুই দলে সমস্যা হবে এটা বাস্তবতা। বর্তমানে বিএনপির প্রায় এক হাজার থেকে ১২শ’ নেতানেত্রী যারা অতীতে ছিলেন এমপি-মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। এর বাইরেও পেশাজীবী, সাবেক আমলাসহ কয়েকশ’ যোগ্য নেতা রয়েছেন যারা সবাই কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিটি বা জেলা কমিটি গঠনে সব যোগ্য নেতাকে কাক্সিক্ষত পদ দেয়া সম্ভব হয় না। এটা বাস্তবতা। বিএনপির যে কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তাতে অনেক যোগ্য নেতা বাদ পড়েছেন। আবার অনাকাক্সিক্ষতভাবে কিছু ব্যক্তি মূল্যায়িত হন। তবে এই কমিটিই শেষ এমন নয়। অতীতে দেখা গেছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্থানীয় কমিটির সদস্যকে বাদ দিয়ে জেলা কমিটির নেতা এমনকি উপজেলা কমিটির নেতাকে দলীয় নমিনেশন দেয়া হয়েছে। তিনি নির্বাচিত হয়ে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। রাজনীতিতে এসবই বাস্তবতা। আর রাজনীতি তো আদর্শ নীতি নৈতিকতা এবং বিশ্বাস। অথচ কিছু নেতা কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পাওয়ায় যেভাবে দল সম্পর্কে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন তাতে ওই সব নেতার রাজনৈতিক বিশ্বাস নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। হয়তো যোগ্য নেতার বদলে কিছু অযোগ্য নেতা পদ-পদবি পেয়েছেন; তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে; শীর্ষ নেত্রীর সঙ্গে কথাবার্তা বলা যেতে পারে। কিন্তু পদ না পেলেই বিএনপি সার্কাস পার্টি, বেঈমান, মীরজাফরের দল হয়ে যায়? পারিবারিকীকরণ, আত্মীয়করণ ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। কিন্তু যে দলের আশীর্বাদে এমপি-মন্ত্রী হয়ে ‘রাজনীতিক’ হয়ে উঠেছেন, পরিচিতি পেয়েছেন, বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন সে দল হঠাৎ করে বেঈমানের দল হয়ে গেল? পাপিয়া গংদের কি আওয়ামী লীগের কাছে কিছু শিক্ষা নেয়ার নেই? বাংলাদেশ গঠনে অসামান্য ভূমিকা রাখা আবদুল জলিল, তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আবদুর রাজ্জাকের মতো জাঁদরেল নেতাদের আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম থেকে বাদ দিয়ে উপদেষ্টা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ওই ঝানু রাজনীতিকদের মন্ত্রিসভায় জায়গা দেননি শেখ হাসিনা। তাই বলে তারা কি আওয়ামী লীগকে সার্কাস পার্টি বলে গালি দিয়েছে? তারা পদ-পদবি ছাড়াই দলকে ভালোবেসে মাটি কামড়ে ধরেছিলেন পরবর্তীতে তারা মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন। বিএনপির পাপিয়া গংরা কি আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমদের চেয়ে বড় রাজনীতিক; সুরঞ্জিতের চেয়ে বড় সংবিধান বিশেষজ্ঞ; আমির হোসেন আমুর চেয়ে বড় সংগঠক?
তিন. দেশের রাজনীতিতে বিএনপির বিকল্প যে বিএনপি সেটা বোঝা যায় মিডিয়াগুলোর অবস্থা দেখে। ক্ষমতাসীন দলের নেতা, সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী, হিল্লিদিল্লিতের তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক ও পেশাজীবীদের গলাবাজিতে তার প্রমাণ মেলে। টিভির টকশো মানেই বিএনপির কমিটি নিয়ে নেতিবাচক বিতর্ক। বিএনপির নতুন কমিটি নিয়ে যেভাবে আলোচনা-সমালোচনা-বিতর্ক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে; তাতে প্রমাণ হয় সত্যিই বিএনপি অনেকের মাথাব্যথার কারণ। গাছে ফল থাকলে সে গাছে দুষ্ট ছেলের দল ঢিল ছুড়বেই। ফলহীন গাছে কেউ ঢিল ছোড়ে না। সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত এরশাদের জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণার পর কেউ প্রশ্ন তোলেনি, উচ্চবাচ্য করেনি। কারণ মৃত্যু ঘোড়ার ক্যারিশমা নিয়ে বিতর্ক করে লাভ নেই। তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির শেখর এত গভীরে যে, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো সব সময় দলটি নিয়ে আতঙ্কে থাকতে বাধ্য হয়। বিএনপি খারাপ কমিটি গঠন করলে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের জন্য তো সুখবর! কিন্তু সেটা নিয়ে এত বিতর্ক কেন? বাস্তবতা হলো বিএনপি নামের দলটি যতই ভুল করুক জনসমর্থন ও সাংগঠনিক কারণে দলটিতে ‘উপেক্ষা’ করার সুযোগ নেই। যার কারণে মন্ত্রী-এমপিদের মুখে ঘুরেফিরে বিএনপি নাম উচ্চারিত হয়। সংসদে এবং সংসদের বাইরে বিএনপিকে নিয়ে খিস্তিখেউর করছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি প্রণিধানযোগ্য বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি পদবঞ্চিত নেতাদের ধৈর্য ধারণ করে আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার এ পরামর্শ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও দলের অভ্যন্তরের এই পারিবারিকীকরণ-স্বজনপ্রীতি-যোগ্য নেতাদের অবমূল্যায়ন নিয়ে ফোরামে তুমুল বিতর্ক করা শ্রেয়। কিন্তু পদ না পেলেই কোটি কোটি সমর্থকের রাজনৈতিক দল শরীর কসরতের সার্কাস পার্টি হয়ে যায়? বেঈমান-মোনাফেক-মীরজাফরের দল হয়ে যায়? বরং দলের তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলের সাবেক কিছু মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে বেঈমান-মোনাফেকির অভিযোগ তুলতে পারেন। কারণ দলীয় চেয়ারপারসন যখনই কর্মসূচি দিয়েছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তৃণমূল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা মাঠে নামার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু দল ক্ষমতায় থাকার সময় যারা এমপি-মন্ত্রী হয়ে অর্থবৃত্তের মালিক হয়েছেন; অথচ আন্দোলনের সময় নীরব ছিলেন তাদের নামের সঙ্গে বেঈমান-মোনাফেক মানানসই।
চার. দেশের প্রভাবশালী একটি দৈনিক পত্রিকায় ১০ আগস্ট বিএনপির নতুন কমিটির পর্যালোচনামূলক উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। শিরোনাম-বিএনপির ‘নামাজি’ কমিটি। তথাকথিত প্রগতিবাদী এবং এনজিও বান্ধব পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি যা-ই হোক বিএনপির নতুন কমিটিকে ‘নামাজি’ হিসেবে অভিহিত করে দেশবাসীকে কি বার্তা দিতে চাইছেন? নেতানেত্রীরা যদি নামাজ পড়েন সেটা কি অপরাধ? নাকি দেশের রাজনীতিতে নামাজ পড়াকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়? নতুন কমিটিতে এনজিওবাজ এবং তথাকথিত প্রগতিশীলতার নামে হিল্লি-দিল্লি তোষণ এবং বিজাতীয় সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্তদের প্রাধান্য না দেয়ায় বিএনপির নেতৃত্বের ওপর চটেছে পত্রিকাটি? নাকি প্রগতিশীল জাহির করতে ওই প্রবন্ধকারের নেহাতই উচ্ছন্নে যাওয়া মানসিকতা? দাড়ি-টুপি দেখলে ক্ষিপ্ত হওয়া এবং পীর-মাশায়েখ-আলেম-ওলামার নাম শুনলেই খিস্তিখেউর করা দেশের কিছু ব্যক্তির ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সামান্যতম ভূমিকা রাখেননি অথচ এখন ‘চেতনা’ বলতেই অজ্ঞান। কারণ ‘চেতনা’য় থাকলে কিছু পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতার বাইরে ছিল তখন অবশ্য এরা ‘হাওয়া-বাতাস’পন্থী ছিলেন। এরা যখন যার তখন তার। দেশের মাটি মানুষের মননের বদলে প্রতিবেশী দেশের শিল্প সংস্কৃতির ধারক-বাহক পত্রিকাটি নারীর অধিকার এবং নারীর স্বাধীনতার নামে আমাদের মা-খালাদের পণ্যে পরিণত করেছে। ওই পত্রিকাটি তাচ্ছিল্যভাবে ‘নামাজি’ শব্দের ব্যবহার করেছে তা চরম ঔদ্ধত্যের নামান্তর। ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশে নিয়মিত নামাজ পড়া কি অপরাধ? আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করেন। তাহলে কি তাকে নামাজি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘উপহাস’ করতে হবে? প্রগতিশীলতা জাহিরে এ কেমন মানসিকতা? অবশ্য ওই প্রবন্ধের প্রথমেই যা বলা হয়েছে তাতে প্রবন্ধকারের ‘মতলব’ প্রকাশ পেয়েছে। বিএনপি তো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের গড়া জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল। সে দল কি চীন-কোরিয়াপন্থী আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার আদর্শে বাম-রামপন্থী আদর্শে পরিচালিত হবে? ওয়ান-ইলেভেনে দুই শীর্ষ নেত্রীকে গ্রেফতারের পর ওই পত্রিকার প্ররোচনায় দলে সংস্কার প্রস্তাব দিয়ে আওয়ামী লীগের র‌্যাটস (চার নেতা) ও বিএনপির আবদুল মান্নান ভূঁইয়া গংরা সংস্কার শব্দটাকে ‘কলঙ্কিত’ করেছেন। একটানা প্রায় ৮ বছর ধরে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায়। এ সময়ের মধ্যে দলটির এমপি-মন্ত্রীরা ইন্তেকাল করায় জাতীয় সংসদের সেসব আসন শূন্য হয়েছে তার কতটি ওই মন্ত্রী-এমপির পরিবারের বাইরে গেছে? দু-একটি ছাড়া সব আসনে ওই এমপি-মন্ত্রীর স্ত্রী-ছেলেকে নৌকা মার্কার প্রার্থী করা হয়েছে। সেটা ওই দলবাজ সাংবাদিকদের চোখে পড়ে না। কিন্তু বিএনপির কিছু নেতার ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীকে কমিটিতে নেয়ায় এটা তাদের কাছে ঠেকছে দৃষ্টিকটু। প্রকৃত অর্থে দুটোই দৃষ্টিকটু। রাজনীতিতে পারিবারিকীকরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হলে সব দলের ব্যাপারে হওয়া উচিত। এখানে একচোখা নীতি বেমানান। কিন্তু ওই সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের কাছে ‘বিবেক বন্ধক রাখায়’ তাদের চোখে ক্ষমতাসীন দলটির সবকিছু ফকফকা দেখায়; আর যত দোষ নন্দঘোষ বিএনপির! বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিনিয়র নেতাদের সন্তানদের পদ-পদবি দেয়া বেমানান। সেটা নিয়ে হয়তো দলের অভ্যন্তরে বিতর্ক হবে। তবে দেশে কি সাংবিধানিকভাবে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সন্তানদের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে? পিতা অপরাধী হলে বা পিতার ফাঁসি হলে পুত্র-কন্যাকে রাজনৈতিক দলে পদ-পদবি দেয়া যাবে না এটা কোন কেতাবে লেখা রয়েছে? বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নতুন কমিটিকে ‘অত্যন্ত ভাইব্র্যান্ট ও ডায়নামিক’ অভিহিত করে বলেছেন, বিএনপির নতুন কমিটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। কিন্তু প্রবন্ধে তাচ্ছিল্য করে বলা হয় ‘দেশের রাজনীতি দূরে থাক, নতুন কমিটি দলের রাজনীতিতে কতটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারবে সেই প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। রাজনীতিতে বিএনপি ইতিবাচক ভূমিকা রাখা নিয়ে সন্দিহান হলেও এই প্রবন্ধকারেরা ৫ জানুয়ারির প্রার্থী ও ভোটারবিহীন নির্বাচনের গণতন্ত্র রক্ষা হয়েছে কি না তা নিয়ে সন্দিহান হন না। কারণ ওরা প্রগতিবাদী। কিন্তু দলের ভেতরে যে বর্ণচোরারা লুকিয়ে রয়েছে সেটা চিন্তার কারণ বটে। প্রবাদে রয়েছে ‘এক মাঘে শীত যায় না’। বিএনপির নতুন কমিটিতে কাক্সিক্ষত পদ না পেয়ে হতাশ বিক্ষুব্ধ নেতাদের উচিত আওয়ামী লীগের জাঁদরেল নেতাদের কাছ থেকে শিক্ষা নেয়া। ‘আগরতলা আর চৌকির তলা’ যেমন এক নয়; তেমনি অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদের উপলব্ধি ও আসিফা আশরাফী পাপিয়ার মূল্যায়ন এক নয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (5)
ওয়াসিম ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:১৭ পিএম says : 0
যদি সে কাঙ্খিত পদ পেতো তাহলে বিএনপি ভালো দল হতো।
Total Reply(0)
harisuddin ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:১৯ পিএম says : 0
thankyou very much for good article 100% currect
Total Reply(0)
আশরাফুল ইসলাম ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:২০ পিএম says : 0
বেগম জিয়ার উচিত এই সুবিধাবাদী মোনাফেকদের চিহ্নিত করা।
Total Reply(0)
Rashid ১১ আগস্ট, ২০১৬, ১:০৪ পিএম says : 0
sob manus ke kokhono khusi kora possible noy
Total Reply(0)
আব্দুল কাইয়ূম চৌধুরী ১১ আগস্ট, ২০১৬, ৬:৪৯ পিএম says : 0
সত্যিকারের নামাজি কমিটি হয়ে থাকলে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের শুকরিয়া। ইসলামিক মূল্যবোধের দলের কমিটি নামাজি হবে এটাই স্বাভাবিক।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন