বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

এমপি রানা ও তার তিন ভাইসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

আ’লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলা

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা : আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা এবং তার অপর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার সদ্যবিদায়ী মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাকন ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পাসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আওয়ামী লীগ নেতা, সপ্তাহিক মূলস্রোত পত্রিকার সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধ ফারুক আহমদ হত্যা মামলার ও চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম মাহফিজুর রহমান গত বুধবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই চার্জশিট জমা দেন।
এতে বলা হয়েছে ফারুক আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হওয়ায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও তার ভাইয়েরা পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকা- ঘটিয়েছে।
মামলায় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানার চার ভাই ছাড়াও তাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী কবির হোসেন, আনিসুল ইসলাম রাজা, মোহাম্মদ আলী, মো. সমীর, ফরিদ আহমেদ, সংসদ সদস্য রানার দারওয়ান দাঁতভাঙা বাবু, আলমগীর হোসেন চাঁন, নাসির উদ্দিন নুরু, ছানোয়ার হোসেন ছানু এবং সাবেক পৌর কমিশনার মাসুদুর রহমানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া এই মামলায় আগে গ্রেপ্তার হওয়া পৌর কাউন্সিলর সফিকুল হক শামিম, মো. ফজলু ও ফিরোজ আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দানের সুপারিশ করা হয়েছে।  মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত আব্দুল হক প্রতিপক্ষের হামলায় খুন হওয়ায় তাকেও অব্যাহতি দেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির সামনে থেকে ফারুক আহমদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। মামলাটি টাঙ্গাইল সদর থানায় পরিদর্শক আবু ওবায়েদ খানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরে এই মামলাটি টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে দেয়া হয়। জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক অশোক কুমার সিংহ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে সংসদ সদস্য রানার ঘনিষ্ঠ সহযোগী রাজা ও মোহাম্মদ আলীকে গ্রেপ্তার করেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ফারুক আহমেদ হত্যাকা-ের ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এই ঘটনার পর সংসদ সদস্য রানা ও তার ভাইয়েরা আত্মগোপন করেন। এই মামলায় রানার বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার বাদী ও নিহত ফারুক আহমদের স্ত্রী নাহার আহমদ গত বুধবার রাতে ইনকিলাবকে জানান, অভিযোগপত্র দায়ের হওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট। তিনি মামলাটি দ্রুত বিচার আদালতে নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। সেইসাথে সংসদ সদস্য রানাসহ তার ভাইদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম এই মামলার অভিযোগপত্র দাখিল হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, সংসদ সদস্য রানা ও তার ভাইয়েরা এখন আওয়ামী লীগের কেউ নয়। জেলা আওয়ামী লীগ তাদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার।
ঘাটাইলে এমপি রানার গ্রেফতার ও বহিষ্কার দাবি
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা : মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় এমপি রানাসহ চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়ায় পর থেকেই ঘাটাইলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর রাতে এমপি রানার অনুসারী এবং এমপিবিরোধীরা শহরে পাল্টাপাল্টি মিছিল ও ভাঙচুর করে। এমপি রানার অনুসারীরা শহরের বিভিন্ন স্থানে টানানো শহিদুল ইসলাম লেবু ও শহিদুজ্জামান খানের বিলবোর্ড ভাঙচুর করে। এদিকে বিরোধীরা উপজেলার জামুরিয়া মডেল ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এমপি রানার অনুসারী হিসাবে পরিচিত শহিদুল ইসলাম খান হেস্টিংসের বাসায় হামলা চালিয়ে বিভিন্ন আসবাপত্র ভাঙচুর করে। এসব ঘটনায় ঘাটাইলে উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিকালে এমপি রানাসহ চার ভাইয়ের ফাঁসি, গ্রেপ্তার ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের প্রতিবাদে শহিদুল ইসলাম লেবুর নেতৃত্বে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।  
এদিকে আ’লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের আশঙ্কায় বিকাল ৪টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন