আইয়ুব আলী : হল্যান্ডের প্রাইমারী স্কুল শিক্ষিকা সুলতানা ৩৭ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া স্বজনের খোঁজে বাংলাদেশে এসেছেন। হল্যান্ডে স্বামী, পুত্র নিয়ে সুখে থাকলেও এত দীর্ঘ সময় স্বজনদের অনুপস্থিতিতে তিনি চরম শূন্যতা অনুভব করছেন। ১৯৭৫ সালে তৎকালীন বৃহত্তর পটিয়ার দোহাজারীতে জন্মগ্রহণ করা সুলতানাকে মাত্র ৫ বছর বয়সে দাদি রহিমা খাতুন জনৈক মোসলেম আলী খাঁনের মাধ্যমে তুলে দেন এক ডাচ দম্পতির হাতে। ১৯৭৯ সালে সুলতানা সুতানা পরিচয়ে হল্যান্ডে দত্তক গ্রহণকারী পরিবারে স্থানান্তরিত হয় এবং সেখানেই বেড়ে ওঠে। দীর্ঘ ৩৭ বছর পর নাড়ির টানে গত ১ ফেব্রুয়ারী সেøাব বাংলাদেশ নামে একটি বিদেশী এনজিও সংস্থার মাধ্যমে স্বজনের খোঁজে সে ডাচ স্বামী ইউরি জ্যাকব, শিশু পুত্র নোয়া আবেদ নাবিন জ্যাকবসহ ১১ দিনের ভিসা নিয়ে আসেন জন্মভূমি বাংলাদেশে।
সেøাব বাংলাদেশের পক্ষে গতকাল চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মোসলেম আলী নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে সুলতানকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থিয়া ও ক্রিস দম্পতির কাছে তুলে দেয়া হয় তাকে। তাদের পরিবারে আপন মেয়ের মতোই বড় হয়েছেন সুলতানা। পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে করেছেন ডিজাইনার ইউরি জ্যাকবকে। রয়েছে ১০ বছরের এক পুত্র সন্তান।
স্বামী সংসার নিয়ে সুখেই আছেন। তবুও মনের মধ্যে শূন্যতা অনুভব করেন সুলতানা। কোথায় যেন ভিন্নতা খুঁজে পান হল্যান্ডের বাসিন্দা আর তার মধ্যে। এ শূন্যতা অনুভব থেকেই বাংলাদেশে আসার প্রবল ইচ্ছা জাগে। সুলতানার বিশ্বাস বাড়িতে তার স্বজনরা রয়েছেন। তাদের সাথে মিলিত হতে চান। কিন্তু চট্টগ্রামের দোহাজারীতে জন্মভূমি, এর বেশি কিছু জানেন না। তবে তার বিশ্বাস স্বজনদের খুঁজে পাবেন। সংবাদ সম্মেলনে স্বজনদের পাওয়ার আকুতি তুলে ধরেন সুলতানা। বাবা-মা অথবা আত্মীয়-স্বজন এমনকি বাড়ির নাম ঠিকানাও জানা নেই সুলতানার। তবে মনে আছে দোহাজারী রেলস্টেশন সংলগ্ন বাজারের কথা।
সুলতানা বলেন, ছোটকালের কোন স্মৃতি আমার মনে নেই। কেবল দোহাজারী রেলস্টেশন ও বাজারের কথা মনে আছে। আমার বাবা-মা কে? তাও জানি না। কিন্তু স্বজনদের ফিরে পাওয়ার প্রবল টানে বাংলাদেশে এসেছি। তাদের খুঁজে বের করবো। এসময় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন সুলতানা। স্বজনদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব পালন করছেন সেøাবের ঢাকা অফিসের ইসমাইল শরীফ ও চট্টগ্রামে দায়িত্বপ্রাপ্ত তার বন্ধু শরীফ মো. ওমর আলী।
শরীফ মো. ওমর আলী ইনকিলাবকে জানান, মানবিক কারণে সুলতানার স্বজনদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব নিয়েছি। ইতোমধ্যে চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও দোহাজারী ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে আলাপ করেছি। তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে সুলতানা এবং তার সহযোগিরা গতকাল বিকেলে দোহাজারীতে যান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে স্বজনদের খোঁজে ব্যস্ত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন