কূটনৈতিক সংবাদদাতা : গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। তিনি বলেন, আমরা আমাদের (মার্কিন) দেশের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে আসতে উদ্বুদ্ধ করছি। এখানে ব্যবসা ধারাবাহিক করতে বলছি। মার্কিন দূতাবাসও তাদের সবধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এসব কথা বলেন। রাজধানীর কাওরান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, সহ-সভাপতি ফারুক হাসান, মোহাম্মদ নাছির, মাহমুদ হাসান, ফেরদৌস পারভেজ প্রমুখ।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বড় জঙ্গি হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে। তবে বলেনি যে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, ভ্রমণ কোরো না। আমরা মনে করি না যে বাংলাদেশে সব ধরনের ভ্রমণ বাতিলের প্রয়োজন আছে। সরকার বিদেশি ব্যবসায়ীসহ অন্যদের নিরাপত্তা দেয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের নেয়া নানা পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট বলেও জানান তিনি। এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, তারপরও অনেকে বৈঠক করতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের অন্য দেশে ডেকে নিয়ে যাচ্ছেন। এটি খুবই স্বাভাবিক ঘটনা।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি তৈরি পোশাক রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বৃদ্ধি করেছে, এ কথা উল্লেখ করে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, মার্কিন ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে পোশাকের ব্যবসা বাড়িয়েছেন। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) মতো সম্ভাবনাময় খাতেও মার্কিন ব্যবসায়ীরা ব্যবসা বাড়াতে চান বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বার্নিকাট সাংবাদিকদের বলেন, তবে বাংলাদেশের আরও অনেক কাজ করতে হবে। আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি তাদের কাজের বিষয়ে স্বচ্ছ থাকতে বলেছি। কারণ এতে করে নানা বিষয়ে পর্যালোচনা করতে পারবো।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ রয়েছে। শ্রমিকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি এখাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটাও গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে। যাতে করে স্বাচ্ছন্দ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এদেশে চলাফেরা করতে পারে।
নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রসঙ্গ টেনে রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বলেন, আমরা সবসময় বলে আসছি শ্রমিকদের অধিকার অক্ষুণœ রাখতে। সেইসঙ্গে এখানে নিরাপত্তা ইস্যুটিও জড়িত। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদ যুক্তরাষ্ট্র প্রশ্রয় দেয় না। তাই জঙ্গিবাদ দমনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
তাছাড়া বাংলাদেশের কারখানাগুলো সংস্কারের জন্য আর্থিক সুবিধার বিষয়েও দেশটির রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা কীভাবে ব্যবসায়ীরা পেতে পারেন সেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বিজিএমইএ বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। এই বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- পোশাক কারখানার ডাটাবেজ তৈরি, প্রত্যেকটি কারখানার নিরাপত্তা বিধানে কমিটি গঠনসহ পোশাক খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপত্তা ইস্যু।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন