শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় ১৮ দিন জেল খাটল আপন দুই ভাই!

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা সংবাদদাতা : ২০১২ সালের ঢাকার দক্ষিণ খান থানার একটি মাদকদ্রব্য মামলার কাগজপত্রকে জালিয়াতি করে ডাকাতি ও খুনের মামলা দেখিয়ে জারিকৃত ভুয়া গ্রেফতারি পরোয়ানায় আটক হয়ে ১৮ দিন বিনা দোষে জেল খাটতে হয়েছে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আপন দুই ভাইকে। প্রতারক চক্র গ্রেফতারি পরোয়ানাতে বিচারকের স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতি করেছে। ঘটনার শিকার আপন দুই ভাই হলেন উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের আবুল বসার মজুমদারের পুত্র আতিকুল ইসলাম মজুমদার (৫৪) ও শহিদুল ইসলাম মজুমদার (৪৫)। জামিনে মুক্তি পেয়ে তারা ন্যায় বিচার চেয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকার দক্ষিণ খান থানায় ২০১২ সালে মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় (নং-১৮(১১)১২) পিরোজপুরের জনৈক এক ব্যক্তি আসামি ছিলেন। ওই মামলায় দুই ভাইয়ের নাম নেই। কিন্তু প্রতারক চক্র ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭-এর বিচারকের স্বাক্ষর ও সিল জালিয়াতির মাধ্যমে ২০১৫ সালের ১৫ মার্চের তারিখ দেখিয়ে (পি-৪০৩/১৫ নং) একটি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। ওই পরোয়ানায় দ-বিধির ৩৯৫/৩৯৬/১০৯নং ধারা উল্লেখ করা হয়, যা ডাকাতি ও খুনের ধারা বলে আইনজীবীরা জানান। এ গ্রেফতারি পরোয়ানার আলোকে গত ২৩ জুলাই শনিবার রাতে চৌদ্দগ্রাম থানার এএসআই কৃষ্ণ সরকার ও এএসআই মনির আহাম্মদের নেতৃত্বে পুলিশ দুই ভাইকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। পরদিন ২৪ জুলাই রোববার তাদেরকে আদালতে পাঠায়। বিজ্ঞ আদালত দুই ভাইয়ের জামিন না মঞ্জুর করে কুমিল্লা জেলহাজতে পাঠায় এবং সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলার কাগজপত্র প্রেরণের আদেশ দেয়। কিন্তু কুমিল্লা কোর্ট থেকে ওইদিন কাগজপত্র না পাঠিয়ে ২ আগস্ট পাঠানো হয়। ৪ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এ কাগজপত্র পৌঁছে। পরে সেখানে নথিপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, উক্ত মামলাটি একটি মাদকের মামলা। মামলায় আটককৃত দুই ভাইয়ের কোনো নাম নেই। ঢাকার বিজ্ঞ আদালত-৭-এ গত ৭ আগস্ট রোববার দুই ভাইয়ের পক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করলে আদালত জামিন (স্মারক নং-বিঃ জঃ আঃ ৭/ঢাকা/১২৬০) মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে ৯ আগস্ট মঙ্গলবার শহিদুল ইসলাম মজুমদার ও ১০ আগস্ট বুধবার আতিকুল ইসলাম মজুমদার কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান।
দুই ভাইয়ের পক্ষের আইনজীবী ইসরাত জাহান ইমু জানান, ‘ঢাকার দক্ষিণ খান থানার মামলাটি মাদকদ্রব্য আইনের মামলা। সেখানে পিরোজপুরের জনৈক এক ব্যক্তি আসামী। ওই মামলায় আমার মক্কেলরা আসামী নয়। শুধু তাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে ঢাকার কোন থানায় মামলা নেই। তাদের যে পরোয়ানায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, সে পরোয়ানায় জালিয়াতির মাধ্যমে বিচারকের স্বাক্ষর ও সিল ব্যবহার করা হয়েছে। আদালত সেটি বুঝতে পেরেই মক্কেলদের জামিন দিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে চৌদ্দগ্রাম কোর্টের জিআরও মোশারফ হোসেন দলিলপত্র দেরি করে পাঠানোর বিষয়ে নিজের সম্পৃক্ত নেই দাবি করে বলেন, ‘অনেকে তো কাজ করে, নেজারত শাখা থেকে কাগজপত্র পাঠাতে দেরি হয়েছে।’
স্থানীয় শ্রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ শাহজালাল মজুমদার জানান, ‘আমার জানামতে তারা ভালো লোক। এ ধরনের ঘটনার সাথে তারা জড়িত নেই। দুই ভাই ষড়যন্ত্রের শিকার।’
জেলখাটা দুই ভাই কান্নাজড়িত কণ্ঠে অভিযোগ করেন, ‘প্রতিবেশী এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সাথে দীর্ঘদিন ধরে জায়গা নিয়ে বিরোধ চলছিল। ওই ব্যক্তিই হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছিলÑআমাদেরকে দেখে ছাড়বে।’ আমাদের ধারণা ওই প্রভাবশালী ব্যক্তির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে ভুয়া মামলায় জেল খাটতে হয়েছে। তবে এভাবে যেন আর কাউকে হয়রানীর শিকার হতে না হয় সেজন্য তারা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন