শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিদের মাস্টারমাইন্ড - জিয়া-তামিম-মারজান ঢাকায়

প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ৭:২৪ এএম, ১৩ আগস্ট, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জঙ্গি কর্মকান্ডের মাস্টারমাইন্ড জিয়াউল হক, তামিম চৌধুরী ও মারজান। এরা তিনজনই ঢাকাতেই অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। জিয়া ও তামিমকে ধরিয়ে দিতে চলতি মাসের শুরুতে ২০ লাখ টাকা করে পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। আর মারজানের বিষয়ে পুলিশ বলছে, গুলশানের আর্টিজানে হামলাকারীরা ওই রেস্টুরেন্টে বসে যে আইডিতে ছবি ও তথ্য পাঠিয়েছিল সেসব মারজান রিসিভ করেছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের ধারণা, তারা ঢাকাতেই আছেন। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছিলেন, জিয়া ও তামিমসহ জঙ্গি হামলায় সংশ্লিষ্ট আরও অনেকেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক গত ২ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তামিম ও জিয়াকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করেন। সেদিন তিনি বলেন, তদন্ত করতে গিয়ে আমরা যা পেয়েছি, এখানে মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী। জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। এই তামিম চৌধুরীর পর যারা দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রধান তাদেরকেও আমরা চিহ্নিত করেছি। তাদেরকে আমরা গ্রেফতারের চেষ্টা করছি। বরখাস্ত মেজর সৈয়দ মোঃ জিয়াউল হককে ২০১২ সালে সেনাবাহিনীতে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিকল্পনাকারী বলছে পুলিশ। তিনি জঙ্গি দল আনসার আল ইসলামের হয়ে কাজ করছেন বলে এর আগে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম রয়টার্সকে জানিয়েছিলেন। আর কানাডার পাসপোর্টধারী বাংলাদেশী নাগরিক তামিম চৌধুরীকে ‘আইএস এর বাংলাদেশ শাখার সমন্বয়ক’ বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আরেকটা গ্রুপ আছে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। তদন্তে আমাদের ধারণা হয়েছে, তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া। কানাডার উইন্ডসরের বাসিন্দা তামিম ২০১৩ সালের অক্টোবরে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে আসার পর থেকে নিখোঁজ বলে গত ২ অক্টোবর জানিয়েছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল। তখন তাকে গ্রেফতার করা হয়নি কেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তখন তার জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি জানা যায়নি। তদন্তে ২০১৫ সালে তার নাম বেরিয়ে আসে। আর জিয়ার বিষয়ে মনিরুল সেদিন বলেন, তার নাম আসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিভিন্ন সময় গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের আদালতে দেয়া জবানবন্দি থেকে। সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা জিয়া ও তামিম চৌধুরী ইতোমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন এমন গুজব সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বিষয়টি নাকচ করে দেন। বরং এই দুইজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয় মূলত ঢাকার দারুস সালাম এলাকা থেকে জেএমবির পাঁচ সদস্যকে বিস্ফোরকসহ গ্রেফতারের বিষয়ে তথ্য জানাতে। এ প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতার সৃষ্টি করতেই আটক ৫ জেএমবি সদস্যকে ঢাকায় আনা হয়। তিনি বলেন, আটক পাঁচজন নিউ জেএমবি’র সদস্য। তাদের সুইসাইড অ্যাটাকের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। অভিযানের সময় পাঁচজনকে ধরা গেলেও আরো চারজন পালিয়ে যায় বলে গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানিয়েছে। মনিরুল ইসলাম বলেন, কল্যাণপুরের ঘটনায় নয়জন নিহত হওয়ার পর ঢাকায় জেএমবির কর্মী সঙ্কট দেখা দেয়। তাই এদেরকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় আনা হয়। মূলত প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত করতে তাদের ঢাকায় আনা হয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে। অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, গুলশানের ঘটনার পর কল্যাণপুর ছাড়াও বিভিন্ন স্থানের অন্তত দশটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। গুলশান ঘটনার দিন জঙ্গিরা ভেতর থেকে বাইরে যে ছবি ও মেসেজ পাঠিয়েছিল, তা মারজান (সাংগঠনিক নাম) নামের এক তরুণ ছড়িয়ে দেয় বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। তিনি বলেন, সে ঢাকায় অবস্থান করছে। সে শিক্ষিত ছেলে বলে মনে হয়েছে। তার একটি ছবি গোয়েন্দা সদস্যদের হাতে রয়েছে। জঙ্গি হামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ মারজানের বিস্তারিত পরিচয় জানা না গেলেও সে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান বলে পুলিশ ধারণা করছে।
গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দিবাগত রাতে রাজধানীর দারুস সালাম থানার টেকনিক্যাল মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে এরা ‘নিউ জেএমবি’র সদস্য। এরা হলো, আতিকুর রহমান ওরফে আইটি আতিক, মো: আব্দুল করিম বুলবুল ওরফে ডাক্তার বুলবুল, আবুল কালাম আজাদ, মতিউর রহমান, শাহিনুর রহমান হিমেল ওরফে তারেক। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২৫টি ডিটোনেটর ও ৮৭৫ গ্রাম বোমা তৈরির জেল উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, রাজধানীর গুলশান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলার পর গত ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের এক বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বহিনীর বিশেষ অভিযানে নয় জঙ্গি নিহত হয়। তারাও জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশের দাবি। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এতে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২২ জন নিহত হয়। সেনাবাহিনীর অপারেশন থান্ডারবোল্টে ৬ জঙ্গি নিহত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Imran ১৩ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৪৭ এএম says : 0
druto ader dhorar babostha korun
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ