২০১৯ সালে গ্যাস লিকেজ থেকে এক হাজারের অধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর উত্তরায় হাউজবিল্ডিং এলাকায় কমপক্ষে ৪ বার এমআরটি প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গ্যাস পাইপলাইন। শেওড়াপাড়া, ফার্মগেট, ডেমরায় মূল সড়কে গ্যাস পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনেও রয়েছে কখনো ওয়াসার লাইন, কখনো বা মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ, কখনো বা অন্যান্য উন্নয়ন কাজের ফলে হয়েছে। সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জের পশ্চিম তল্লা এলাকার বায়তুস সালাত মসজিদে গ্যাস লাইন বিস্ফোরণে ৩৪ জন মুসল্লি মৃত্যুবরণ করেন। এই বিস্ফোরণ ও আগুনের জন্য দায়ী তিতাসের গ্যাস পাইপলাইনের লিকেজ। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে নয়টার দিকে নামাজ পড়ার সময় মসজিদে গ্যাস জমে থাকায় হঠাৎ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ হন ৩৭ জন সাধারণ মুসল্লি। পরে ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩৪ জনের মৃত্যু হয়। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিকেজজনিত দুর্ঘটনা ঠেকাতে তিতাসের লাইন সার্ভের কোনো বিকল্প নেই। সচেতন না হলে যে কোন সময় গ্যাস লিকেজ থেকে রাজধানীতে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। যেহেতু কোন ডিজিটাল ম্যাপিং নেই, কোন ব্যবস্থা নেই পাইপলাইনগুলো চিহ্নিত করা যায়, তাই অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে ৩০-৪০ বছরের পুরোনো লাইন বদলে ফেলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
ফায়ার সার্ভিসের তথ্য মতে, ২০১৯ সালে প্রায় ১ হাজারটি দুর্ঘটনার পেছনে দায়ী গ্যাস লিকেজ। গত ২০১৯ সাল থেকে ২৫টির বেশি বড় ধরণের গ্যাস লিকেজ হয়েছে অন্য সংস্থাগুলোর কাজের কারণে। এর বাইরে এ রকম ছোটোখাটো ঘটনা আছে শতাধিক। সেবা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে বারবার দুর্ঘটনা ঠেকাতে আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ম্যাপিং এর পরামর্শ নগর পরিকল্পনাবিদদের।
নগর পরিকল্পনাবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, জিপিএস লাইডার সিস্টেম বলে টেকনোলজি রয়েছে যার মাধ্যমে সংস্থাগুলো নিজেদের ম্যাপিং করতে পারবে। রয়েছে মুদ্রার উল্টো পিঠও। তিতাসের গাফিলতিতেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্যাস পাইপলাইন। নারায়ণগঞ্জ বিস্ফোরণ যার সবশেষ উদাহরণ।
ফায়ার সার্ভিসের এডি (অপারেশন) মো. আব্দুল হালিম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গ্যাস লাইন লিকেজ ও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। রাস্তায় বা অন্য যেসব স্থানে তিতাসের গ্যাস লাইন রয়েছে, সেখানে কাজ করার সময় ম্যাপ দেখে সমন্বয় করে কাজ করা জরুরী। এছাড়া পুরাতন কিছু গ্যাস লাইনে লিকেজ রয়েছে; সেগুলো মেরামত না করে পরিবর্তন করলেই গ্যাস লাইনে অগ্নিকান্ডের ঘটনা কমে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিতাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জে হয়তো বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরেই ধারাবাহিকভাবে গ্যাসের কারণে অগ্নিকান্ড ঘটেই চলেছে। বড় একটি ধাক্কা না খেলে আমরা শিখি না। গ্যাস বিতরণ লাইনে ত্রুটিগুলো সময় মতো ঠিক করা হলে এ ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না।
তিতাসের পরিচালক (অপারেশন) রানা আকবর হায়দারি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে লিকেজের তালিকা করেছি। তালিকা অনুযায়ী জোন ভাগ করে সেই জোনের ডিএমডি এবং জিএমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন