শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

পাপিয়া দম্পতির ২০ বছরের কারাদন্ড

পাপিয়া ও তার স্বামীর মতো রাজনৈতিক কর্মী জাতির জন্য অকল্যাণকর -রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০২০, ১২:০২ এএম

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিস্কৃৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে করা মামলায় ২০বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অস্ত্র আইনের আরেক ধারায় তাদের সাত বছরের কারাদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার কারাদন্ড একই সঙ্গে চলবে বলে আদেশে উল্লেখ করেন বিচারক। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ এ রায় ঘোষণা করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এই দম্পতির বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত যে ৫টি মামলা হয়েছে, তার মধ্যে অস্ত্র আইনের এই মামলাতেই সবার আগে রায় এল। এর মধ্যে অস্ত্র আইনের ১৯ এর ‘এ’ ধরায় অবৈধ অস্ত্র রাখার দায়ে পাপিয়া ও সুমনকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। আর ১৯ এর ‘এফ’ ধারায় অবৈধভাবে গুলি রাখার দায়ে দেয়া হয়েছে ৭ বছরের কারাদন্ড। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে কার্যকর হবে বলে এই দম্পতিকে মোট ২০ বছরের সাজাই খাটতে হবে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত : নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নিজ বাসায় অস্ত্র-গুলি বা এত বিপুল পরিমাণ টাকা রাখা একজন রাজনৈতিক কর্মীর কাজ না। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মী দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েশ পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।

পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী সুমন ছিলেন রাজনৈতিক কর্মী। মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালোচনা করলে তাদেরকে রাজনৈতিক কর্মী বলা যায় না। কারণ একজন রাজনৈতিক কর্মীর বাসায় অস্ত্র, গুলি এবং ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা পাওয়া যাওয়ার ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের রাজনৈতিক কর্মী দেশ ও জাতির জন্য অকল্যাণকর।

আদালত আরও বলেন, তারা রাজনীতিবিদ হলেও রাজনীতির ছদ্মাবরণে তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছেন। তারা দেশের কল্যাণে কিছু করেননি। এ ধরনের রাজনীতিকের কাছে অস্ত্র থাকার কোনো ভালো উদ্দেশ্য থাকে না। তারা বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য বিদেশি অস্ত্র রাখেন। অস্ত্রের সঙ্গে ২০টি গুলি থাকাই সেটা প্রমাণ করে। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ও ১৯ (চ) ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। তবে আসামি পাপিয়া নারী হওয়ায় এই আইনের ১৯(ক) ধারায় সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন থাকলেও ২০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হলো। এছাড়া একই আইনের ১৯(চ) ধারায় সাতবছর কারাদন্ড দেয়া হলো। দুটি সাজাই একত্রে চলবে। রায় ঘোষণার সময় পাপিয়া ও তার স্বামী আদালতের কাঠগড়ায় স্বাভাবিকই ছিলেন।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর মামলার বিচার কার্য শেষে রায়ের এই দিন ধার্য করেছিলেন একই আদালত। গত ২৪ আগস্ট একই আদালত এই মামলার অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর আদালতে তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের এসআই আরিফুজ্জামানের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই মামলার সাক্ষ্য শেষ হয়। অর্থাৎ সাক্ষ্য শুরু হওয়ার দেড় মাসেরও কম সময়ের মধ্যে মামলাটির রায় হয়েছে।

গত ২২ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে পাপিয়াসহ চারজনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ২৩ ফেব্রæয়ারি পাপিয়ার ইন্দিরা রোডের বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, ৫ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, ৫টি পাসপোর্ট, ৩টি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় পাপিয়া ও তার স্বামীর বিরুদ্ধে পৃথক পাঁচটি মামলা করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অস্ত্র মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলো হলো শের-ই-বাংলা নগর থানার মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা, গুলশান থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা, বিমানবন্দর থানার বিশেষ ক্ষমতা আইনে (জাল টাকার) মামলা এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলা। এ মামলাগুলো বর্তমানে তদন্তাধীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Helal nirob ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০০ এএম says : 0
বাংলা সিনেমার মতো চোখের পলকে বাহির হয়ে না গেলে হয়
Total Reply(0)
Said khan ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
এভাবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা হোক এটাই কাম্য ।
Total Reply(0)
Habib ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০২ এএম says : 0
‘চরিত্রহীনা নারী চরিত্রহীন পুরুষের যোগ্য আর চরিত্রহীন পুরুষ চরিত্রহীনা নারীর যোগ্য। চরিত্রবতী নারী চরিত্রবান পুরুষের যোগ্য আর চরিত্রবান পুরুষ চরিত্রবতী নারীর যোগ্য। কোন মিথ্যা অপবাদই চরিত্রবানদের কলঙ্কিত করতে পারে না। এদের জন্যে রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবনোপকরণ।’ (সূরা নূর ২৬)
Total Reply(0)
Kader sheikh ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০৩ এএম says : 0
পাপিয়া তৈরির কারিগররা আড়ালেই থেকে যায়।লীগ নামক কারখানাতো খোলাই আছে!!
Total Reply(0)
Habib ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০৪ এএম says : 0
ভেতরে তাদের সুন্দর করে থাকার ব্যাবস্থা করতে হবে, সকল সুযোগ সুবিধা দিতে হবে, তাদের সকল কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করার সুযোগ দেওয়ার জোর দাবি জানাই....
Total Reply(0)
Farida ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০৪ এএম says : 0
এই বিচারের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানাই। এমন পাপিয়া হাজার হাজার আছে।তাদের কী পরিণতি হয় তা দেখার অপেক্ষায়।
Total Reply(0)
Jaker ali ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০৫ এএম says : 0
এইভাবে প্রতিটি অপকর্মের বিচার যেন সঠিক ভাবে হয়
Total Reply(0)
Hujjatollah ১৩ অক্টোবর, ২০২০, ৪:০৬ এএম says : 0
খবরে পাপিয়াকে দেখে মনে হল সে পার্লার থেকে বাইর হইতেছে,কি সাজ আর হাটার কি ইস্টাল,খুব ভালো আছে সে ওখানে।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন