নাছিম উল আলম : পাটের সুদিন কিছুটা ফিরে এসেছে। একারণে আশান্বিত কৃষককূল এবার দেশে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১লাখ হেক্টর অতিরিক্ত জমিতে পাটের আবাদ করায় স্মরণকালের সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত হতে যাচ্ছে। চলতি মওশুমে দেশে ৭ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে ৭৫ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮ লাখ ১৬ হাজারর হেক্টরে আবাদ হয়েছে। ফলে উৎপাদনও ৭৫ লাখ বেলের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে প্রায় ১ কোটি বেলের কাছাকাছি পৌঁছবে বলে আশাবাদী কৃষি মন্ত্রণালয় ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। যা স্বাধীনতা পরবর্তীকালে রেকর্ড বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদরা। তবে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে অতি সাম্প্রতিক বন্যার কারণে কিছু কিছু এলাকার জাগ দেয়া পাট ভেসে গেছে। আবার গত কয়েকদিনে দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে প্রবল বর্ষণে জাগ দেয়া পাট শুকানো নিয়েও কিছুটা সংকট সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ সংকট খুব সহসাই কেটে যাবে বলে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীলরা।
সারা দেশের মত বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে এবার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছেন এ অঞ্চলের পাট চাষিরা। দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলায় চলতি মওশুমে প্রায় ২ লাখ হেক্টরে পাট আবাদ লক্ষমাত্রার বিপরীতে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টরে আবাদ করে কৃষকগণ। ফলে উৎপাদনও লক্ষ্যমাত্রা ২১ লাখ ৫০ হাজার বেল ছাড়িয়ে ২২ লাখ বেল অতিক্রম করবে বলে আশাবাদী ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
মূলত ২০১০-এর পরে দর পতনের কারণে দেশে সোনালী আঁশ পাটের আবাদ ও উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জিত হয়নি। গতবছরও দেশে ৭ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন ছিল ৮০ লাখ বেলের কম। গত কয়েক বছর ধরে পাটের দর ৮শ’ টাকা থেকে ১২শ’ টাকার মধ্যে থাকায় কৃষকরা চরম হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। এ দর পতনে পাটের উৎপাদন ব্যায়ও উঠছিল না। ফলে আবাদ ও উৎপাদন যথেষ্ঠ হ্রাস পায়।
তবে গত বছরের শেষভাগ থেকে দেশে পলিথিন বস্তা ব্যবহার বন্ধে সরকার কিছুটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় পাটের চাহিদা বেড়েছে। চালসহ বেশ কিছু পণ্য বাজারজাত করণে পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কৃত্রিম তন্তুর পরিবর্তে পাটের বস্তা ও ব্যাগ ব্যবহারে সরকারি নির্দেশনা পালনে কিছুটা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করায় এর চাহিদাও যথেষ্ঠ বেড়েছে। ফলে চলতি মওশুমে পাট আবাদে যথেষ্ঠ আগ্রহী হয়ে ওঠে কৃষকগণ। কাঁচা পাটের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে।
চলতি মওশুমে আবাদকৃত ৮ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমির পাটের মধ্যে গতকাল পর্যন্ত অন্তত ৬৩ ভাগই কর্তন সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে সারা দেশে পাট বিক্রি হচ্ছে মন প্রতি ১৬শ’ থেকে ১৮শ’ টাকা দরে। যা গতবছরের চেয়ে প্রতিমনে গড়ে প্রায় ৭শ’ টাকা বেশী। ডিএই’র দায়িত্বশীল মহলের মতে, চলতি মওশুমে ৮.১৬ লাখ হেক্টর জমিতে ৯০ লাখ থেকে ৯৫ লাখ বেল পাট উৎপাদনের ব্যাপারে আশাবাদী তারা। আর এ আবাদ ও উৎপাদন সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে বলেই আশাবাদী তারা। এতে পাটের রপ্তানীও বাড়বে বলে আশাবাদী সরকারি দায়িত্বশীল মহল। ফলে পাট দেশের কৃষি অর্থনীতিতেও আরো ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।
ইতোপূর্বে ভারতীয় চালকল মালিকরা বাংলাদেশী কমদামী পাটের বস্তায় চাল মজুদ ও বাজারজাত করতেন। ফলে ভারতে বাংলাদেশী পাটের একটি বড় বাজার থাকলেও গতবছরের শেষভাগ থেকে সে দেশে বাংলাদেশী পাটের প্রবেশে নতুন করে কিছু বিবিধ নিষেধ আরোপ করা হয়। ফলে অতি নিকটের এ রপ্তানী বাজার নিয়ে দুঃশ্চিন্তা রয়েছে বাংলাদেশী পাট ব্যবসায়ী ও রপ্তানীকারকদের মধ্যে।
পাটের ভাল বাজার সৃষ্টির সাথে এর আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রণোদনা প্রদানের আবেদন করেছেন চাষিরা। পাশাপাশি দেশে পাটের ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগেরও আবেদন জানিয়েছেন তারা। এতেকরে রপ্তানীর পাশাপাশি দেশেও পাটের ভাল বাজার সৃষ্টির সম্ভবনার রয়েছে। পাশাপাশি দেশী পাটকলগুলোও পূর্ণমাত্রায় উৎপাদনে আসবে। কয়েক লাখ বেকার পাটকল শ্রমিকের রুটি-রুজির বিষয়টিও নিশ্চিত হতে পারে পাটের ভাল বাজারের মাধ্যমেই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন