শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

শৃংখলা পরিপন্থীর অভিযোগ চাকরিচ্যুত চার বিচারক

প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মালেক মল্লিক : বিচার বিভাগের শৃংখলা পরিপন্থী কর্মকা-ের অভিযোগে চার জেলার চারজন বিচারককে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। গত বুধবার সুপ্রিমকোর্টের এক সভায় তাদের চাকরিচ্যুতির অনুমোদন দেয়া হয় হয়েছে বলে জানা যায়।
আর বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওই সভার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন। চার বিচারক হলেন- কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা এস এম আমিনুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের সাবেক জেলা জজ বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন খোন্দকার, জামালপুরের সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম এবং খুলনার সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত কর্মকর্তা মঈনুল হক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এইসব বিষয়ে কোন কিছুই বলা যাবে না। এইসব বিষয়টি এখনো শতভাগ সম্পন্ন হয়নি। অনেক গোপনীয় বিষয়, তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সূত্র জানায়, গত ১০ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির উপস্থিতিতে ফুলকোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। ১১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি ফুলকোর্ট সভার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন। পরে সভার সিদ্ধান্তটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় বলে জানা যায়।
জেলা জজ আমিনুল ইসলাম : জানা গেছে, কুমিল্লার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এসএম আমিনুল ইসলাম ২০১১ সালে ঢাকা জেলা জজ আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারকের দায়িত্ব পালনকালে একাধিক মামলায় গুরুতর অনিয়ম ও দুর্নীতি করেন। তিনি রাজধানীর হাজারীবাগ থানার চাঞ্চল্যকর নাদিয়া হত্যা মামলায় আসামি মো. শিকদার শফিকুর রহমানকে জামিন দেন। এই আসামি স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নিজ গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় শাহবাগ এলাকায় হাতেনাতে ধরা পড়েন। পরবর্তীতে তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন। বিষয়টিকে সে সময় চাঞ্চল্যকর উল্লেখ করে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় রিপোর্টও প্রকাশিত হয়। শফিকুরের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ার পরও হত্যাজনিত কোনো বিষয় না উল্লেখ করেই ওই বিচারক জামিন দিয়ে দেন। এই অভিযোগের তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া যায়। এরপর সুপ্রিমকোর্টের জিএ (জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কমিটি চূড়ান্তভাবে বরখাস্তের সুপারিশ করেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত ফুলকোর্ট সভায় তাকে বরখাস্তের চূড়ান্ত প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
জেলা জজ রুহুল আমিন : ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা ও দায়রা জজের দায়িত্ব পালনকালে বিচারক মো. রুহুল আমিন খোন্দকারের বিরুদ্ধে জামিন, চাকরি, জমির ইজারা প্রদানসহ বেশ কিছু বিষয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। স্ত্রী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আসামি ২০০৮ সালের ২৪ জুলাই ওই বিচারকের আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে অন্তর্র্বতীকালীন জামিন না দিয়ে ছেড়ে দেন এবং উৎকোচের বিনিময়ে একই বছরের ১৩ আগস্ট জামিন প্রদান করেন। ২০০৭ সালে দুদক আইনে করা একটি মামলা জরুরি বিধিমালা অনুযায়ী জামিন অযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও উৎকোচ গ্রহণ করে জামিন প্রদান করেন। ২০০৮ সালের একটি হত্যা মামলার আসামিদের জামিন শুনানি মুলতবি রেখে যেদিন তিনি কর্মভার অর্পণ করে বিদায় নেন, সেদিন আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যার সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও উৎকোচ গ্রহণ করে জামিন দিয়ে যান। অভিযোগের তদন্ত করে প্রমাণ পায় তদন্ত কর্মকর্তা।
মঈনুল হক : ২০০৮ সালে খুলনার ১ম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারকের দায়িত্ব পালনকালে মঈনুল হকের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ওই সময় খুলনার জেলা জজ তদন্ত করে দেখতে পান, ৬৫টি ক্রিমিনাল আপিল, ১২টি ক্রিমিনাল রিভিশন, ৬৪টি সিভিল আপিলসহ মোট ১৪১টি মামলা শুনানি করে রায়ের জন্য স্তুপাকারে রেখে দেন। এই বিপুল পরিমাণ নথি রায়ের জন্য ফেলে রেখে দেয়ায় তার সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। খুলনা বার সমিতির ৬৮ জন আইনজীবী মঈনুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তদন্তে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়।
অতিরিক্ত জেলা জজ সিরাজুল ইসলাম : ২০০৯ সালে জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা জজের দায়িত্ব পালনকালে এই বিচারকের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনজীবী সমিতি, মামলায় সম্পৃক্ত আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীরা একাধিক অভিযোগ তোলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলায় ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ ওঠে। এজলাস কক্ষে বিচার চলাকালে একটি মামলার বাদিনী মালা রাউথ প্রতিপক্ষের আইনজীবী ও অতিরিক্ত পিপি সুদীপ দে মিঠুকে বিচারকের প্রচ্ছন্ন ছত্রছায়ায় চড় মেরে অপদস্থ করেন। গৃহপরিচারিকার সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক এবং তার স্বামী একটি মামলায় জামিনে থাকা সত্ত্বেও পুলিশি হয়রানি করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ ওঠে এই বিচারকের বিরুদ্ধে, যা পরবর্তীতে তদন্তে প্রমাণিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন