অর্থনৈতিক রিপোর্টার : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ভাত-ডাল রান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার পুরোপুরি অপচয়। রান্নার বিকল্প রয়েছে। আন্দোলন বা চিৎকার করে কোনো লাভ হবে না। কোনোভাবেই পাবেন না। রান্নায় গ্যাসের ব্যবহার চলবে না। তিনি বলেন, গ্যাসটা এত মূল্যবান সম্পদ যে, এটা দিয়ে ভাত-তরকারি রান্নার কোনো মানে হয় না।
আর তাই সরকার নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহার নিরুৎসাহিত করছে। বাসা-বাড়িতে পাইপলাইনের গ্যাস সংযোগ আর না দেয়ার পাশাপাশি সিলিন্ডারে এলপিজি আমদানি উৎসাহিত করছে। গতকাল পেট্রোবাংলায় জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে অর্থমন্ত্রী গৃহস্থালিতে গ্যাস ব্যবহারের বিপক্ষে নিজের অবস্থান আবার তুলে ধরে এই ধারা থেকে সরকার বেরিয়ে আসছে বলে উল্লেখ করেছেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের দেশে প্রচুর গ্যাস রয়েছে। তাই ডমেস্টিক কনজাম্পশনে (গৃহস্থালিতে ব্যবহার) গ্যাস সরবরাহ করেছিলাম। ‘এখন আমরা যা দেখছি, আমাদের কাছে গ্যাস যা আছে, তা একেবারেই যৎসামান্য। এটা এত মূল্যবান যে, এটা দিয়ে ভাত, ডাল রান্না করা একেবারেই অপচয়। এটা আমাদের নিজেদের বোঝা উচিৎ, অন্যদের বোঝানো উচিৎ যে, রান্না-বান্নায় গ্যাসের ব্যবহার চলবে না।
বিকল্প হিসেবে এলএনজি ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানালেও এক্ষেত্রে সাধারণ ক্রেতারা ভোগান্তির স্বীকার হচ্ছেন বলে স্বীকার করেন মুহিত। এ সমস্যা দূর করতে সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও জানান তিনি। এছাড়া বিকল্প আছে লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস বা এলএনজি যা উৎপাদনের জন্য আমি যথেষ্ট সুযোগও দিয়েছি এই ইন্ডাস্ট্রিকে। সুযোগ কেউ কেউ নিয়েছেন কিন্তুতারা আবার খুব অন্যায় কাজ করছেন। তারা খোলাখুলি স্টাইলে কাজ করতে চাচ্ছেন। পুরো ব্যাপারটাকে মনোপলির জায়গায় নিয়ে গেছেন। অর্থমন্ত্রী বলেন, আমরা সিলিন্ডার আমদানি আরও সহজ করে দেব, যাতে করে যারা ডোমেস্টিক পারপাসে সিলিন্ডার ব্যবহার করেন, তারা যেন ভোগান্তির শিকার না হন। এলএনজি আমদানি কাজ আরও জোরদারের কথাও বলেন মুহিত।
গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়টিতেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান তিনি।
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন ঘর-বাড়ি অন্ধকারে ছিল। দারুণ চ্যালেঞ্জ ছিল, অন্ধকার দূর করা। সেই কাজটি সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করেছি। বিদ্যুৎ ছাড়া উন্নয়ন একেবারেই সম্ভব নয়।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহি চৌধুরী বলেন, আমরা পাহাড় অতিক্রম করেছি। সামনে এখন পর্বতমালা এ জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে উদ্ভাবনী চিন্তার মাধ্যমে। তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী বিদেশে গ্যাসফিল্ড কেনার বিষয়ে মনোযোগী হওয়ারও আহ্বান জানান।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আগামী ২ বছরের মধ্যে জ্বালানি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন হবে। এক্ষেত্রে আমাদের একটি বড় চ্যালেঞ্জ অর্থ। একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা গড়ে তুলতে আমাদের প্রয়োজন ১৫ বিলিয়ন ডলার। এই অর্থ জোগাড়ে পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো মার্কেটে নিয়ে যাওয়া, ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল বন্ড ছাড়া ইত্যাদি পরিকল্পনা আমাদের আছে।
সেমিনারে জ্বালানি বিভাগের সচিব নাজিমউদ্দিন চৌধুরী সভাপতির বক্তব্যে বলেন, রান্নার কাজে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা প্রয়োজন। গ্যাসের ব্যবহার করছেন নগরকেন্দ্রিক কিছু লোকজন। এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা নগর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য রাখতে পারি না। তিনি বলেন, এক সময় বাসা-বাড়িতে গ্যাস দেয়া হয়েছিল। তখন সেটিই বাস্তবতা ছিল। কিন্তু এখন বাস্তবতা হচ্ছে, কোনোভাবেই বাসা-বাড়িতে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ সম্ভব নয়। অনুষ্ঠানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির উপদেষ্টা তাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন