মোহাম্মদ খালেদ সাইফুল্লাহ সিদ্দিকী : আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.) কেবল বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন না, বরং কর্মমুখর জীবনে তিনি রেখে গিয়েছেন অনেক অবিস্মরণীয় কীর্তি অবদান। তার প্রাতিষ্ঠানিক অবদানগুলোর মধ্যে মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক অরাজনৈতিক সংগঠন মাদরাসা শিক্ষকদের জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বাংলাদেশ-এর পুনর্জীবন দান এক অন্যান্য সাধারণ সুকীর্তি, যা দেশের উলামা-মোদার্রেছীন মাশায়েখ পীর আউলিয়া এবং লাখ লাখ মাদরাসা ছাত্রের ঐক্যের প্রতীক ও সুদৃঢ় রূপে বিরাজমান। ইসলামবিরোধী যে কোনো শক্তিকে রুখে দিতে তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি সক্ষম। এ সংগঠনের বদৌলতে মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল একদিকে যেমন ছড়িয়ে পড়েছে, তেমিন আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাপ্রাপ্ত আলেম-ছাত্রবৃন্দ দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্জগতে ইসলামী শিক্ষা বিস্তারসহ নানাভাবে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত। তিনি মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে শিক্ষকদের মান উন্নয়নের ধারা প্রবর্তনের প্রয়াস চালিয়েছিলেন এবং স্বতন্ত্র মাদরাসা অধিদফতর স্থাপনের জন্য সচেষ্ট ছিলেন। সরকারিভাবে তার ওইসব এখন স্বীকৃত ও অনুমোদিত এবং মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যও অবসানের পথে। যারা এক সময় এসব মাদরাসার বিরুদ্ধে ছিলেন এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি হিসেবে মাওলানা এম এ মান্নানের সমালোচনা-নিন্দায় ছিল মুখর, তার আন্দোলনের সফলতা দেখে তারা এখন নিশ্চয় ঈর্ষাপরায়ণতায় ভুগছেন। বাংলাদেশে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাসে মাওলানা এম এ মান্নানের নাম তার এ অবদানের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। বিশেষত ভবিষ্যতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র ইতিহাস রচিত হলে এবং মাওলানা মান্নান (রহ.)-এর বিস্তারিত জীবনবৃত্তান্ত লেখা হলে মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন ও মাদরাসা শিক্ষকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে মাওলানা মরহুমের বলিষ্ঠ ভূমিকার সঠিক চিত্র ফুটে উঠবে।
জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের পূর্ণ জীবনদানকারী মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন, শিক্ষা বিস্তার এবং মাদরাসা শিক্ষকদের মান উন্নয়নে তৎপর ছিলেন। এ জন্য তিনি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনও অব্যাহত রেখে তিনি চেয়েছিলেন মাদরাসা শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্মান ও মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন। ধাপে ধাপে কিছু কিছু উন্নতি-অগ্রগতি সাধিত হতে থাকে। তার আমলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আশানুরূপ অর্জিত না হলেও তিনি কাঠামো প্রস্তুত করে যান। তার সুযোগ্য সন্তান এ এম এম বাহাউদ্দীন তাই অনুসরণ করে চলেন। শিক্ষকদের বর্তমান অবস্থান তারই প্রমাণ।
মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দীর্ঘকাল ধরে তাদের মধ্যে দারুণ অসন্তোষ ও ক্ষোভের কারণ হয়ে বিরাজ করছিল। জমিয়াতুল মোদার্রেছীন সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন নীতিগত ও শান্তিপূর্ণভাবে এ বৈষম্য দূর করার নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন এবং সরকারকে বুঝাতে সক্ষম হন যে, শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করা দরকার। এ ব্যাপারে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের দৃঢ় মনোভাব অটুট থাকে। ফলে জমিয়াতের যুক্তিসঙ্গত ও মানবিক দাবি সরকার মানতে বাধ্য হয়। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী জমিয়াতের শোকরিয়া সমাবেশে বলেন যে, সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষক খুব শিগগিরই নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের মতোই মাদরাসা শিক্ষকরাও এই বেতন পাবেন। গত জুলাই থেকেই তা কার্যকর করা হবে। বেতন পাওয়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। এ নিয়ে শিক্ষা সচিব কাজ করছেন। শিক্ষক সংখ্যা বেশি হওয়ায় একটু সময় লাগছে বলে মন্ত্রী জানান। সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন স্কেলে সমতা আনয়নের দাবি ছিল জমিয়াতের। এটি সংগঠনটির আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সুদূরপ্রসারী সাফল্য। মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর স্থাপনের দাবিও ছিল জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের। সুতরাং সরকারি পদক্ষেপের ফলে তিনটি দাবি পূরণ প্রকারান্তরে জমিয়াতেরই সাফল্য, শোকরিয়া সমাবেশের গুরুত্ব ও তাৎপর্য এ দৃষ্টিকোণ থেকেই বিচেনার দাবিদার। এতে মাদরাসা শিক্ষকদের মান-মর্যাদা এবং আরবি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে সরকার অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার।
প্রাসঙ্গিকভাবে এখানে গত ৩০ জানুয়ারি (শনিবার) রাজধানীর গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাদরাসা শিক্ষকদের সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন আয়োজিত শোকরিয়া সমাবেশে এসব বাস্তবতার কথা উঠে এসেছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এ গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশের উদ্দেশ্য ছিল বর্তমান সরকারের সময়ে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর স্থাপন এবং নতুন বেতন স্কেলে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্তর্ভুক্ত করায় শোকরিয়া জ্ঞাপন করা। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং সভাপতিত্ব করেন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী নতুন প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা এমপিওভুক্ত করার বিষয়ে বলেন, যেসব স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা নতুন হয়েছে সেগুলো এমপিওভুক্ত হয়নি। পরবর্তীতে একসঙ্গে এগুলো করা হবে। এবতেদায়ী মাদরাসার সমস্যা সমাধান করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় করেছি, এবতেদায়ীর সমস্যাও সমাধান করা হবে। তবে সময় লাগবে, ধৈর্য ধরতে হবে। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, অপপ্রচার করা হতো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মাদরাসা শিক্ষা বন্ধ হয়ে যাবে। অথচ আমরা ইতোমধ্যে এক হাজার ৩৩০টি নতুন মাদরাসা ভবন নির্মাণ করেছি আরও দেড় হাজার ভবন নির্মাণ করা হবে। আর যারা এই অপপ্রচার ছড়িয়েছিল তাদের সময় একটিও ভবন নির্মাণ করতে পারেনি। তার সময়ে শিক্ষানীতি প্রণয়ন হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা শিক্ষানীতিতে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেছি। কারণ নৈতিক শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো ধর্মীয় শিক্ষা। যারা ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবেন তারা একদিকে যেমন যোগ্য আলেম হবেন, তেমনি ভালো সৎ অফিসারও হবেন।
নৈতিকতা বোধ ধর্মীয় তথা মাদরাসা শিক্ষার একটি অপরিহার্য দিক। এ শিক্ষায় সর্বস্তরে তার প্রতিফলন লক্ষ্য করা যাবে। যারা মাদরাসা শিক্ষাকে বাঁকা চোখে দেখতে চান শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যে তাদের জন্যও এ ব্যাপারে চিন্তার খোরাক রয়েছে। নৈতিকতা মাদরাসা শিক্ষার অলঙ্কার।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের বলিষ্ঠ পদক্ষেপের ফলে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, যার কার্যক্রমও দ্রুততম সময়ে আরম্ভ হয় এবং যাতে ভর্তি পরীক্ষাও ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শত বছরের স্বপ্ন জগৎ থেকে আলোর বাস্তবে দৃশ্যমান হওয়ার ঘটনা বিস্ময়কর বটে, তবে এর পেছনে সক্রিয় ভূমিকা ছিল শিক্ষামন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী এবং জমিয়াত সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও অন্য সংশ্লিষ্টদের। পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল তার বক্তব্যে বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেন :
‘ইসলামের নামে দেশে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়। আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এসব বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা দূর করবে। এটি সত্যিকার ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করবে।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০০৬ সালে শেখ হাসিনা তখন বিরোধী দলে, আমরা তার কাছে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানাই। তিনি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় তা উত্থাপন করতে বলেন। এরপর এটা নিয়ে আমি এবং জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীন কত দিন, কত রাত, কত ঘণ্টা ব্যয় করেছি এটা আমরা জানি। এরপর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় এটা আমি উপস্থাপন করি এবং সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তা সমর্থন করেন। পরবর্তীতে ওই সভায় এ প্রস্তাব পাস হয়।’
পরিকল্পনামন্ত্রী বর্ণিত এ ঘটনা আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একজন মন্ত্রী অপপটে স্বীকার করলেন জমিয়াত সভাপতির ভূমিকা। জনাব বাহাউদ্দীনের আপ্রাণ প্রচেষ্টার সুফল ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়।
সমাবেশে বহু বিশিষ্টজন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন। জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা রুহুল আমীন খান বলেন, হারিয়ে যাওয়া ইসলামের সেই স্বর্ণযুগকে ফিরিয়ে আনার জন্য ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শতবর্ষব্যাপী আন্দোলন। সে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে দাবি পূরণ হয়েছে। এবতেদায়ী মাদরাসার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, এক সময় ২২ হাজার এবতেদায়ী মাদরাসা ছিল। এখন মাত্র এক হাজার ৫০০। এবতেদায়ী মাদরাসা যদি না থাকে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে কী হবে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, এবতেদায়ীতে শিক্ষার্থী না থাকলে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় অর্থহীন হয়ে যাবে। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে সফল করার জন্য তিনি আরও ২৫ হাজার এবতেদায়ী মাদরাসা প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। সবার জানা কথা মাওলানা এম এ মান্নানের আন্দোলনের মধ্যে এবতেদায়ী মাদরাসার উন্নয়ন ছিল অন্যতম দাবি।
ইবতেদায়ী মাদরাসার সংখ্যা কীভাবে হ্রাস পেল সে কারণ জানা না গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যে বৈষম্য নীতির অনুসরণ করা হচ্ছে তার উল্লেখ পাওয়া যায় জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বীর আহমদ মোমতাজীর বক্তব্যে। তিনি বলেন, এবতেদায়ী শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন না, শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পায় না। শিক্ষকরা অনেক কষ্টের মধ্যেও দ্বীনি শিক্ষা ধরে রেখেছেন। এ ছাড়া অনেক মাদরাসা এখনো এমপিওভুক্ত হয়নি। এসব সমস্যা সমাধানে তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের কাছে জোর দাবি জানান।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে টিকিয়ে রাখার জন্য এবতেদায়ী মাদরাসাগুলোকে শক্তিশালী করার গুরুত্ব এখন অনেকেই স্বীকার করেন। মাওলানা এম এ মান্নান তার জীবদ্দশায় এ সুদূরপ্রসারী, দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গিতে এবতেদায়ী মাদরাসার উন্নয়ন প্রয়াসী ছিলেন। এখন সরকারি মহলও তা উপলব্ধি করছেন বলে মনে হয়। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ধর্ম-বিষয়ক মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন বলেন, এবতেদায়ীর কিছু সমস্যা রয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে টিকিয়ে রাখার জন্য অবশ্যই এবতেদায়ী স্তরকে শক্তিশালী করতে হবে। এবতেদায়ী হলো মাদরাসা শিক্ষার ভিত্তি। যার ওপর দিয়ে যেতে হবে ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়কে। আর এ জন্যই শেখ হাসিনা অবশ্যই এবতেদায়ী স্তরের সমস্যার সমাধান করবেন। এ আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি পরামর্শ দেন যে, আপনারা জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি এ এম এম বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকলে আপনাদের দাবি করতে হবে না, সরকার আপনাদের দাবি পূরণের জন্য আপনাদের কাছে আসবে। জনাব বাহাউদ্দীনের নেতৃত্বের প্রতি সরকারি মহল কীরূপ আস্থাশীল তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ এ বক্তব্য।
শোকরিয়া সমাবেশে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি ও দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক আলহাজ এ এম এম বাহাউদ্দীন বাংলাদেশে ইসলামের উজ্জ্ব¡ল ভবিষ্যৎ সম্পর্কে বলেন :
‘সারা দুনিয়ায় মুসলিম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়েও সম্পদ ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে, একটি রাষ্ট্র ভেঙে একাধিক পতাকা ও পরিচয় হচ্ছে। এসব রাষ্ট্রের নেতৃত্বে আসছে তরুণরা। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। শত টানাপোড়নের মধ্যেও বাংলাদেশ ধীরে ধীরে ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ওআইসিভুক্ত মুসলিম উম্মাহর একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং জাতিসংঘেরও সদস্য। এ প্রসঙ্গে সমাবেশে প্রদত্ত পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের এই মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। ইসলাম একদিন সারা বিশ্বে রাজত্ব করবে।’ উল্লিখিত এ উভয় বক্তব্যের মধ্যে সামঞ্জস্য খুঁজে পাওয়া যায়।
শোকরিয়া সমাবেশে উপস্থিত সরকারি সম্মানিত কর্মকর্তা ও সুধীজনদের প্রদত্ত মূল্যবান বক্তব্যগুলো পর্যালোচনা করলে সংক্ষেপে বলা যায়, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় সরকারি মহলসহ সবাই সন্তুষ্ট এবং আরবি শিক্ষার এ সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখতে হলে এবতেদায়ীগুলোকে যেমন শক্তিশালী করতে হবে সেগুলোর বিদ্যমান সমস্যার সমাধানও করতে হবে এবং প্রচলিত মাদরাসাসমূহেরও শিক্ষার যুগোপযোগী উন্নয়ন সাধন করতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের বর্তমান সভাপতির যোগ্য নেতৃত্বে আস্থাশীল থেকে কাজ করতে হবে। সুতরাং এই বাস্তবতা অনস্বীকার্য যে, মরহুম মাওলানা এম এ মান্নান এই ঐতিহাসিক সংগঠনের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। তার শুরু করা বেশ কিছু কাজের সাফল্যের স্মরণে জমিয়াতের এ শোকরিয়া সমাবেশ।
এ প্রসঙ্গে আরও একটি বিষয়ের উল্লেখ করা প্রয়োজন এবং তা হলো অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানো। কোনো কিছু যাচাই-বাছাই না করে, সত্য-অসত্য সম্পর্কে তথ্য না নিয়ে কাল্পনিক বা শোনা কথা প্রচার করা অত্যন্ত দোষণীয় ও ক্ষতিকর। কারও সুনাম বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে কিংবা কারও দুর্নাম রটনার জন্য এরূপ আচরণ প্রদর্শন করতে সমাজে একশ্রেণির লোক রয়েছে, তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার উপদেশ কে মেনে চলে? এর ফলে সমাজে নানা বিবেদ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যার শিকার অনেকেই হয়ে থাকে। অপবাদ-অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর বিরুদ্ধে শিক্ষামন্ত্রী সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন। সমাবেশে তিনি বলেন, অনেকে নানাভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছে। আপনারা কেউ কারও কোনো বিভ্রান্তিতে কান দেবেন না। কেউ বিভ্রান্তি ছড়ালেই বিভ্রান্ত হবেন না। বিভ্রান্তিকর কথা শুনলে তা যাচাই করে দেখবেন। শিক্ষামন্ত্রী মাদরাসা শিক্ষক আলেমদের উদ্দেশেই এসব কথা বলেছেন। সুতরাং বুঝতে অসুবিধার কথা নয় যে, তিনি এসব কথা কেন বলেছেন, কেন সতর্ক বাণী উচ্চারণ করেছেন। কাজেই ধরে নেয়া যায়, মাদরাসা তথা ইসলামী শিক্ষার যারা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে লিপ্ত, মন্ত্রী তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন