উবায়দুর রহমান খান নদভী : মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান। সমধিক পরিচিত ছিলেন মাওলানা এম এ মান্নান নামে। বর্ণাঢ্য জীবন সংগ্রামের অধিকারী একজন সফল মানুষ। অসাধারণ প্রতিভাধর ব্যক্তি। জাতি, ধর্ম, দেশ ও সমাজের প্রতি তিনি জীবনভর কর্তব্য করেছেন। মানুষের জন্য অবদান রেখেছেন নানা অঙ্গনে, নানাভাবে। মানুষ তাকে কোনোদিন ভুলবে না। চাঁদপুর ফরিদগঞ্জের কেরোয়া গ্রামের এক ঐতিহ্যবাহী আধ্যাত্মিক সাধক পরিবারে তার জন্ম ১৯৩৫ সালের ৯ মার্চ। পিতা হযরত শাহ মুহাম্মদ ইয়াসীন (রহ.) ছিলেন আধ্যাত্ম্য জগতের এক স্বনামধন্য সাধক পুরুষ। শিক্ষাজীবন শেষে আলহাজ মাওলানা এম এ মান্নান শিক্ষকতার মহান পেশায় আত্মনিয়োগ করেন। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানের সব শাখায় ছিল তার সুদক্ষ বিচরণ।
বর্ধিত সেবা, অবদান ও বিস্তীর্ণ কর্মস্পৃহার উচ্চাভিলাষ তাঁকে ধীরে ধীরে শিক্ষাঙ্গন থেকে টেনে নেয় জীবনের রাজপথে। জনতার প্রাঙ্গণে। শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষক সমাজের প্রতিষ্ঠা, অবহেলিত পেশাজীবীদের উপায়ন, দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধির জন্য রাজনীতি, সংগঠন-সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, সাহিত্য, সাংবাদিকতা আর সংস্কৃতির ক্ষেত্রে পথ রচনা প্রভৃতি নিয়ে তিনি সফল সংগ্রাম ও সাধনা করে গিয়েছেন। মুসলিম জাতি ও মুসলিম জাহানের ঐক্য-সংহতি উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির জন্য তিনি ছিলেন সহজাত চিন্তাবিদ। বাংলাদেশ পর্যায়ে ধর্ম ও সমাজ নেতৃত্বের পারস্পরিক আদান-প্রদান, সংলাপ ও সংহতির ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন অতুলনীয় দিক-দার্শনিক। বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বের সম্প্রীতির সেতুবন্ধন।
২০০৬-এর ৬ ফেব্রুয়ারি তাঁর চলে যাওয়ার পর থেকে এসব ক্ষেত্রে যে উদাসী শূন্যতা বিরাজ করছে তা সহসা পূরণ হওয়ার নয়। মাওলানার আন্তরিক প্রচেষ্টা ও লক্ষ্যভেদী রাজনীতির ফলে অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবনমানের সন্ধান পাওয়া মাদ্রাসা শিক্ষক সমাজের দৈনন্দিন জীবনানন্দ যেমন মরহুম মাওলানার অবদানের কথা স্মরণে এনে দেয়; ঠিক তেমনি তাঁর এ ধারার অসংখ্য কাজের সুফল ছড়াতে থাকে সুকর্মের অপার সুরভি। মসজিদনগরী ঢাকার মহাখালীতে জমিয়াতুল মোদার্রেছীন ও মসজিদে গাউসুল আজম কমপ্লেক্সের অপূর্ব নির্মাণশৈলী আর নয়নাভিরাম স্থাপত্য যুগ যুগ ধরে ঘোষণা করবে মাওলানা এম এ মান্নান (রহ.)-এর জীবন সাধনার শ্রেষ্ঠত্ব। মাওলানার অন্যতম মানস সন্তান দৈনিক ইনকিলাব যে তিন দশকের অর্জন ও অবদান দিয়ে দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে যাবে নিরন্তর। তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিজ নিজ চিন্তা, মেধা ও যোগ্যতাবলে দেশ, জাতি ও মানবতার জন্য নানামুখী অবদান রেখে তাঁরই স্মৃতিকে ঔজ্জ্বল্য দান করে যাবেন প্রজন্মান্তরে। সুকীর্তি ও শুভ কার্যধারা এভাবেই অমরত্ব লাভ করে থাকে।
মাওলানা এম এ মান্নান ছাত্রজীবনে ভালো ছাত্র ছিলেন। তাঁর জ্ঞানের ভিত্তি ছিল খুব মজবুত। শিক্ষকতা জীবনে তিনি ইসলামী শাস্ত্রসমূহের বড় বড় কিতাব পড়িয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্টে দক্ষতার সাথে পাঠদান করেছেন। যখন শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়েছেন তখনও কিতাবের সাথে তাঁর সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি। বই-কিতাব পড়েছেন। লোক শিক্ষকরূপে মসজিদে বয়ান করেছেন। ইলম তাজা রেখেছেন। মসজিদে গাউসুল আজমে জুমার পূর্বে অথবা অন্যান্য ধর্মীয় বিশেষ দিবস বা রজনীতে বয়ান করেছেন। সেগুলো লিপিবদ্ধ করে পত্রিকায় নিবন্ধ আকারে প্রকাশ পেয়েছে। গ্রন্থাকারে পাঠকের হাতে গেছে। বিষয়বস্তুর চমৎকারিত্ব ও বর্ণনার শৈলী থেকে ধারণাই হতো না যে এটি কোনো রাজনীতিক, সংগঠক ও ব্যস্ততম সমাজনেতার বক্তব্য। মনে হতো এ যেন ষোলআনা পেশাদার একজন শিক্ষক-আলেমের তাজা পড়াশোনার ফসল। একাডেমিক বিষয়বস্তু নিয়েও তিনি আলেম ও তালিবে ইলমের সান্নিধ্যে এমন সব ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন যা থেকে মনে হতো যে, তিনি শিক্ষাঙ্গনেই কর্মরত একজন প্রবীণ শিক্ষাবিদ। তাঁর জীবনের শেষ বয়ানেও শ্রোতারা তাফসীর শাস্ত্রের একটি জটিল বিষয়ের আলোচনার প্রাণবন্ত উপস্থাপনা থেকে উপকৃত হয়েছিলেন। তিনি সেদিন পবিত্র কোরআনের ষোল পারার তিনটি রুকুর তাফসীর বর্ণনা করেন। সাংবাদিকতা, সংবাদসূত্র বা তথ্য অনুসন্ধানের দর্শনের উপর তিনি নবী করীম (সা.)-এর মৌলিক কর্মনীতিও পবিত্র কোরআনের আলোকে বর্ণনা করেছিলেন। সম্ভবত এটি তার জীবনের শেষ সমাবেশ ও শেষ বক্তৃতা ছিল।
মাওলানা আধুনিক আরবী ভাষা সাহিত্য সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতেন। নিজে ভালো আরবী জানতেন। মধ্যপ্রাচ্যের শাসক ও রাষ্ট্রদূতদের সাথে বিশুদ্ধ আরবীতে ভাববিনিময় করতে সক্ষম ছিলেন। দুঃখজনক হলেও এদেশের প্রবীণ আলেম প্রজন্মের মাঝে খুব কম ব্যক্তিত্বের ভেতরই ভাষাগত এ দক্ষতা খুঁজে পাওয়া যায়। মাওলানার সপ্রতিভ উপস্থাপন, হৃদ্যতাপূর্ণ ভাববিনিময়, প্রভাবশালী যোগাযোগ এ কারণে অনেক অগ্রসর ছিল। পাশাপাশি তাঁর মেহমানদারী ও উপঢৌকন ছিল আকর্ষণীয়। তাঁর দিলখোলা আপ্যায়ন ও বিস্তৃত দস্তরখানে যারা শরিক হয়েছেন তারা তাঁর আতিথেয়তা কোনোদিন বিস্মৃত হবেন বলে মনে হয় না।
তিনি তাঁর ভাষাজ্ঞান, ব্যক্তিত্বের আকর্ষণ ও সঙ্গ-সহবতের ভব্যতার গুণে আরব শাসক এবং দায়িত্বশীলদের সাথে ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব স্থাপনে সক্ষম হয়েছিলেন। দেশের স্বার্থে মধ্যপ্রাচ্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিলেন, যা অনেক ক্ষেত্রে তাঁর জন্য সমস্যা ও অনেকের ঈর্ষার কারণ হয়ে দেখা দিত। একজন স্বপ্নচারী অথচ বাস্তববাদী, আধ্যাত্মিকতায় বিশ্বাসী অথচ বিষয়বুদ্ধি ও ব্যবস্থাপনায় অনন্য ব্যক্তিত্ব হিসেবে মরহুম মাওলানা প্রজন্মের উদ্দীপনা।
জাতীয় ঐক্য-সংহতি ও ইসলামী উম্মাহর চেতনা সুরক্ষায় মাওলানা এম এ মান্নান নানা মত ও পথের নেতাদের মাঝে অপূর্ব সমন্বয় সাধনের চৌম্বকীয় ক্ষমতা রাখতেন। বাংলাদেশের আলেম সমাজ নানা বিষয়ে বৃহৎ ঐকমত্যে যতবারই পৌঁছেছেন এর পেছনে মাওলানার ভূমিকা ছিল অপরিসীম। জাতীয় নানা সঙ্কট বা ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আজকের বাংলাদেশ যখন অনেক ক্ষেত্রেই অভিভাবকশূন্য মনে হয় তখন বারবার মনে পড়ে মরহুম মাওলানার কথা। শত বিরোধ ও বিভক্তি নিয়েও বিভিন্ন চিন্তার নেতারা তাঁর ডাকে এক টেবিলে বসতেন। তাঁর যুক্তি ও বুদ্ধিদীপ্ত কথা শুনে সহনশীলতা এবং উদারতার বৃত্তে এক হতেন। এসব যেন আজ শুধুই অতীত স্মৃতি কিংবা হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন। দৈনিক ইনকিলাবের প্রতিষ্ঠাতা, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাওলানা এম এ মান্নান খুব ব্যস্ততার মাঝেও প্রায় সময়ই ইনকিলাব ভবনে তাঁর চেম্বারে বসতেন। অসুস্থতাজনিত কারণে যখন খুব কম আসতেন তখনও একটা রেওয়াজ ছিল, মাঝে-মধ্যেই ইনকিলাব সাংবাদিক ও কর্মকর্তা- কর্মচারীদের নিয়ে বসতেন, আলাপ-আলোচনা ও স্মৃতিচারণ করতেন। সবশেষে হতো বিশেষ দোয়া-মোনাজাত ও খানাপিনা। নিজের পছন্দসই মাছ, গোশত, চাল, ফিরনি, পায়েস সমন্বয়ে খাস খাদেমদের দ্বারা সুস্বাদু খানা তৈরি করিয়ে বনানী থেকে গাড়ি করে মতিঝিল নিয়ে আসতেন। ইনকিলাব ভবন মিলনায়তনে বা এমডি সাহেবের কক্ষে সমাবেশ হতো। ইনকিলাব পরিবারের জন্য এ যেন ছিল অন্যরকম এক রিক্রিয়েশন। ফেলে আসা সে দিনগুলো এখনো অনেককে প্রচ- নাড়া দেয়।
এমনি এক সম্মিলনীতে একদিন মাওলানা হুজুর কথা বলেছেন। প্রসঙ্গক্রমে আমাকে দেখিয়ে মাইকেই বলতে লাগলেন, এরা তো এখনো বাচ্চা মানুষ। অডিয়েন্স তখন হেসে উঠলে হুজুর বললেন, আমাদের বয়স ও অভিজ্ঞতার তুলনায় এসব মাওলানা তো একেবারেই শিশু। সত্যিই এখন ভাবি, মাওলানা হুজুর চলে গেলেন। বড়দের চলে যাওয়ায় আমার মতো ছোটরাও এখন বড় কেবল নয়, বুড়ো হয়ে যাচ্ছে। আমাদের ¯েœহ, মায়া-মমতা ও অভিভাবকত্বের চাদরে ঢেকে রাখার মতো মানুষ যেন প্রতিদিনই কমে চলেছে। হে আল্লাহ, এমন বড় মাপের যে ক’জন এখনো হায়াতে আছেন তাদের তুমি অনেক দীর্ঘায়ু কর।
ধন, জন, জ্ঞান ও প্রতিপত্তিতে লব্ধ, প্রতিষ্ঠ এবং সমূহ সফল জীবনের অধিকারী মাওলানা ছিলেন খুবই নিপুণ ও সতর্ক মনীষার দৃষ্টান্ত। বিশাল হৃদয়ের অধিকারী, উদার, দানশীল, সদালাপী, অমায়িক ও আন্তরিক ব্যক্তি হিসেবে তিনি তার শত্রুর দৃষ্টিতেও ছিলেন ঈর্ষণীয়। মহাকবি রূমীর ভাষায়Ñ “যে গুণটির দরুন শত্রুরাও তোমাকে হিংসা করার সুযোগ পায় না সেটি হচ্ছে তোমার বিনয় ও ন¤্রতা।” তাঁর বিনয় ও সদাচরণ তাঁর বিরোধীদেরও সমানভাবে পরাভূত করতো বন্ধুদের মতোই। একবার মাওলানার চরম দুশমন এক ব্যক্তিকেও চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণ করে তিনি তার মনে কৃতজ্ঞতাবোধ ও নতুন ধারণা জাগ্রত করেন বলে শুনেছি। বিখ্যাত সাবেক ছাত্রনেতা, এমপি ও মন্ত্রী এই নেতা ক্ষেত্র বিশেষে মাওলানার এ বদান্যতার কথা স্বীকারও করে থাকেন।
ইনকিলাব ভবনে একদিন মাওলানাকে দেখেছি রিসিপশনের টেলিফোন সেটটি ঠিক করে রাখতে। রিসিভারটি ক্রাডলে ঠিকমতো বসেনি। তিনি সিঁড়ি বেয়ে নেমে গাড়িতে ওঠার আগে একনজরে এটি দেখে রিসিপশনের টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিপুণ হাতে সেটটি ঠিকঠাক মতো রেখে গেট দিয়ে বের হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলেন। আরেকদিন মাওলানার সাথে আমরা দু’একজন লিফটে উঠেছি মাত্র। বাইরে তখন সবেমাত্র এসে পৌঁছেছেন দুই তরুণ সাংবাদিক। মাওলানা লিফটম্যানকে বললেন একটু দাঁড়াও। এদের তুলে নাও। তিনি এ দুজনকে নিয়েই তবে উপরে উঠলেন। এদের একজন ছিলেন আমাদের মহিলা পাতার দায়িত্বশীল ফাহমিদা আহমদ। এখনও আলাপচারিতায় আমরা মাওলানা হুজুরের এ ধরনের সূক্ষ্ম সৌজন্যবোধ ও ¯েœহপ্রবণতার কথা স্মরণ করে থাকি। আল্লাহ তাঁকে নিজ রহমত ও মাগফিরাতের শীতল ছায়ায় জায়গা করে দিন।
মাওলানা এম এ মান্নানের ভাগ্য বলতে হয় অথবা আমাদের জাতিগত দুর্ভাগ্য যে, গোটা জীবন তিনি যাদের জন্য এত ত্যাগ-তিতিক্ষা ও সংগ্রাম করেছেন তাদের অনেকেই মাওলানাকে দুঃখই দিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাদের পথে তিনি ফুল বিছিয়ে গেছেন তারাই দুঃসময়ে তাকে দিয়েছে কাঁটার মালা। তিনি ও তাঁর পরিবার এবং সহকর্মীরা যাদের দিয়েছে সুরক্ষা, প্রচার, প্রসার ও পরামর্শ, ক্ষমতা ও বিজয়; ক্ষমতার মদমত্তে তারাই মাওলানার প্রতি হেনেছে অন্যায় আঘাত। ইতিহাস সাক্ষী, মাওলানা যখন জীবনঘাতী দীর্ঘ রোগশয্যায় তখন তার প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্র, তাঁর প্রতিষ্ঠিত সফল সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, তাঁর স্বপ্ন বৃহত্তর ইসলামী ঐক্যের গায়ে নির্মম হামলা শুরু হয়। হামলাটা করে কারা? কোনো বিরোধী শক্তি নয়। যাদের সপক্ষে কাজ করে মাওলানা জীবনপাত করে গেছেন, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা তার কষ্ট সংগ্রামের উপকারভোগীÑ তারাই নানা রঙে, নান ফ্রন্টে, নানা কৌশলে মাওলানাকে একটি দুর্বল মুহূর্তে ধ্বংস করে দিতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়ে। এ যেন উপকারীর প্রতি কৃতঘœ জনগোষ্ঠীর সেই আদিম প্রতিদান! এরপর এক সময় আল্লাহ হুজুরকে সসম্মানে তুলে নেন। তিনি চলে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট সবাইকে আল্লাহ অতি অল্প সময়ের মধ্যেই নিজ নিজ নিয়ত, কর্ম ও ভূমিকার যথাযথ বিনিময় দিতে শুরু করেছেন। মাওলানার বিশ্বাস, চেতনা, আদর্শ ও তাঁর প্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর আল্লাহই নেগাহবান। দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণে নিবেদিত জনগোষ্ঠীর সাথে ভবিষ্যতের প্রতিটি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সামনের দিকে এগিয়ে চলায় মাওলানা সবসময়ই সাহসী প্রজন্মের প্রেরণা হয়ে থাকবেন।
মাওলানা ইসলামকে ভালোবাসতেন। মানুষকে ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন মাতৃভূমিকে। যতদিন ইসলাম থাকবে, মাটি ও মানুষ থাকবে, ততদিন তাঁর নীতি, আদর্শ, বিশ্বাস এবং চেতনা আলোকবর্তিকা হয়ে পথ দেখাবে নতুন প্রজন্মকে। পরিবর্তিত প্রতিটি পরিস্থিতিতে ন্যায় ও সুবিচারের সপক্ষে অবস্থান গ্রহণ এবং সব ধরনের শঠতা, বিশ্বাসঘাতকতা ও হীনকৌশল থেকে দূরে থেকে সত্যের সাধনাই মানুষকে সাফল্য এবং মুক্তি দিতে পারে। তাছাড়া, সত্য ও ন্যায়ের কোনো নির্দিষ্ট বলয় নেই। সত্যপন্থার কোনো সংকীর্ণ বৃত্ত বা মনগড়া রিজার্ভেশন নেই। উদার, বৃহৎ, বিস্তৃত সত্যকে অবলম্বন করা যায় কিন্তু বাক্সবন্দি করা যায় না। মরহুম মাওলানার এ কর্মময় আদর্শ ইসলামপন্থী প্রতিটি মানুষকে আগামীদিনের পথচলার শক্তি ও সাহস জোগাবে ইনশাআল্লাহ।
১৯৬২ সালে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে আসেন। একে একে পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি, দূতপুল সদস্য, সংসদ সদস্য, প্রতিমন্ত্রী, গুরুত্বপূর্ণ একাধিক মন্ত্রণালয়ের সফল মন্ত্রী ইত্যাদি হন। সমাজ ও মানুষের জন্য গঠনমূলক নানা অবদান রাখেন। এরপর প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বার্ধক্য, জরা, ব্যাধি যেমন মানুষকে পার্থিবভাবে নিঃশেষ করে দেয়, তিনিও এর শিকার হন। কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে তিনি অক্ষয় হয়ে আছেন। তাঁর কীর্তি স্মৃতি ও অবদানে, তাঁর অব্যাহত পুণ্যকর্মে তিনি অমর হয়ে থাকবেন। রাজধানীর মহাখালীর গাউসুল আজম কমপ্লেক্সে মাওলানার শেষ আরামগাহের সন্নিকটে দাঁড়িয়ে তাঁর বন্ধু, সহকর্মী, ভক্ত, পরিচিত এবং তাঁর দ্বারা নানাভাবে উপকৃতজনেরা যখন জিয়ারত করেন, যখন দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে তাঁর মাগফিরাত ও মর্যাদা বৃদ্ধির দোয়া করেন তখনও বলা যায় যে, ঈমানদার, সৎকর্মশীল, সাহসী বান্দার মৃত্যু নেই। দৈহিক মৃত্যু হলেও আখেরাতে বিশ্বাসী কর্মবীরদের জীবনের শেষ নেই।
লেখক : সহকারী সম্পাদক, দৈনিক ইনকিলাব এবং ইতিহাস, দর্শন, রাষ্ট্র, ধর্ম ও সমাজতত্ত্ববিদ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন