করোনাভাইরাসে বিশ্বের কাঁপন এখনো বন্ধ হয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, শীতে করোনার বিস্তার ঘটবে। এই সতর্কতা শীত আসার আগেই সবার মাঝে করোনা সংক্রমণের শঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছে। পঞ্জিকার হিসাবে শীতের আগমন ঘটতে এখনো দুই মাস দেরি। করোনার দ্বিতীয় থাবার জন্যই কি এবার অনেক আগেই দরজায় শীত কড়া নাড়তে শুরু করেছে? এ প্রশ্ন উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওবাসীদের।
আজ শুক্রবার সূর্য পশ্চিম আকাশে অস্ত যাওয়ার সাথে সাথে বিদায় নিচ্ছে শরৎকাল। কাল শনিবার হেমন্ত ঋতুর যাত্রা শুরু। দুই মাস পর প্রবেশ করবে শীত। কিন্তু আবহাওয়ার পরিবর্তন প্রকৃতির রূপ পাল্টে দিচ্ছে। দুই মাস পর নয় শরতের বিদায় এবং হেমন্তের শুরুতে শীত তার আগমনের খবর দিতে শুরু করেছে। হেমন্তের সূচনায় শীতের ছবি বলছে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করে এ সাধ্য করোই নেই।
দেশের উওরের জেলা ঠাকুরগাঁও এক সময় ‘নিশ্চিন্তপুর’ নামে পরিচিত ছিল। এই নামটি মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নিশ্চিন্তে বসবাসের উপযোগী কোনো গ্রাম অথবা জনপদের ছবি। কিংবা মনে পড়ে যায় বিভ‚তিভ‚ষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী উপন্যাসের ‘নিশ্চিন্দিপুর’ গ্রামের কথা। কিন্তু কখনো মনে পড়ে না উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের কথা।
কেননা অনেকদিন আগেই চাপা পড়ে গেছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই ‘নিশ্চিন্তপুর’ নামটি। জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইড বলছে, কয়েকজন বিত্তশালী মানুষের খোয়ালী ইচ্ছাকে পূরণ করতে সাধারণের প্রিয় জনপদ নিশ্চিন্তপুরকে পাল্টে করা হয় ঠাকুরগাঁও। আর এ ইতিহাস অজানা রয়েছে বলে নিশ্চিন্তপুর শব্দটি উচ্চারিত হলে কখনো ঠাকুরগাঁওয়ের কথা মনে হয় না। তবে ইতিহাস সচেতন মানুষ আজো আবেগ শিহরিত হৃদয়ে ঠাকুরগাঁওয়ের সঙ্গে নিশ্চিন্তপুরের কথা মনে করেন।
সেই ঠাকুরগাঁও জেলা এখন মধ্যরাতের পর থেকে হালকাভাবে কাঁপতে শুরু করেছে। তবে পূর্বদিকে লাল আভা দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর হালকা কাঁপন থেমে যায়। হালকা ঠান্ডার সাথে ভোরবেলা পড়তে শুরু করেছে হালকা কুয়াশা। প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঠাকুরগাঁও জেলায় শীতের আগমন ঘটলেও এবার কার্তিকেও আগাম বাজিয়ে দিয়েছে ঘণ্টাধ্বনি।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে দেখা যায়, হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা রয়েছে রাস্তঘাট। সড়কে-মহাসড়কে বাস-ট্রাক চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ভোরে ও সকালে অনেকেই নিজ নিজ গন্তব্যের পথে বের হয়েছেন হালকা গরম কাপড় গায়ে মুড়িয়ে। শিশিরবিন্দু জমে থাকা ধানের শীষ ও ঘাসের ডগায় সকালের রোদ পড়লে মুক্তোর মত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা বলছেন, গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টির কারণে চলতি বছর আগাম শীত অনুভব হচ্ছে। দিনের বেলা কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশায় আস্তে আস্তে দৃষ্টিসীমা কমে আসতে থাকে। রাতভর হালকা বৃষ্টির মত টুপটাপ করে কুয়াশা ঝরতে থাকে। বিশেষ করে ঘাসের ডগা ও ধানের শীষে জমতে দেখা যাচ্ছে বিন্দু বিন্দু শিশির কণা।
শহর ও শহরতলী ছাড়িয়ে গ্রামগুলোতে দেখা গেছে, পুরনো কাঁথা নতুন করে সেলাই কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন নারীরা। বাড়ির পাশে গাছের নিচে বসে নানা রঙের সুতো দিয়ে তারা তৈরি করছেন শীতের কাঁথা।
সবজি চাষি কাসেম জানালেন, অসময়ে হালকা শীতের কারণে ফসলে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস আক্রমণ শুরু করেছে। ফসল রক্ষায় এখন কীটনাশক প্রয়োগ ছাড়া বিকল্প পথ নেই। সাধারণত কার্তিক মাসে এমনটি হয় না। কীটনাশকের জন্য এখন উৎপাদন খরচও বেড়ে যাবে।
ঠাকুরগাঁও পৌর এলাকার আবদুল ওয়াহাব বলেন, গত কয়েকদিনের অবিরাম বৃষ্টির কারণে এবার অনেক আগেই শীত অনুভব হচ্ছে। দিনে কিছুটা গরম থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর থেকেই কুয়াশা পড়তে শুরু করে। বাস চালক আইনালের সাথে কথা বললে তিনি জানান, গত বছর এমন সময় কোনো কুয়াশা দেখা যায়নি। গত দু’দিন ধরে সকালে বাস নিয়ে বের হবার সময় হেডলাইড জ্বালিয়ে রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে।
শীত নিয়ে চিন্তিত মোহাম্মদপুর গ্রামের বয়স্ক খলিলুর রহমান ও খয়রুন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ‘এবার হামার যে কি হবে। করোনা আইচ্ছে, আবার শীত হামরা খামো কি পড়িমো কি হে আল্লাহ হামারতি দেখ।’
ঠাকুরগাঁও কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে উঁচু-নিচু জমিতে পানি জমেছে। সবজি চাষে বৃষ্টির পানি ও শীতের কারণে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দেখা দিতে পারে। কৃষি বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মীরা কৃষকদের কারিগরি সহায়তাসহ বিভিন্ন রকমের পরামর্শ দিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার রকিবুল আলম ইনকিলাবকে জানান, স্বাস্থ্য নিয়ে সবাইকে সচেতন করার কাজ চলছে। হাসপাতালে শীতের জন্য আরো ৫০টি বেড বৃদ্ধিসহ স্টাফদের যথাযথ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কারণ শীতে করোনা সংক্রমণের ভয় রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন