ইনকিলাব ডেস্ক : আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রুপের নেতাকে হত্যা জিহাদিদের জন্য এক বিরাট আঘাত, কিন্তু মার্কিন সমর্থিত ব্যাপক সামরিক অভিযান সত্ত্বেও আইএসকে দমন করা এখনো বহুদূরের ব্যাপার বলে পর্যবেক্ষকরা মত ব্যক্ত করেছেন। আফগানিস্তানে তৎপর রয়েছে তারা। খবর এএফপি।
কাবুলে ১৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা চালানোর পর আফগান বাহিনী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যখন অভিযান শুরু করেছে তখন পেন্টাগন শুক্রবার ঘোষণা করে যে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের তালিবান নেতা হাফিজ সাইদ গত মাসে নানগারহারে এক বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ নিয়ে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক জঙ্গি নেতা নিহত হলেন। এর আগে মে মাসে তালিবান নেতা মোল্লা মনসুর মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হন।
পর্যবেক্ষকদের মতে, হাফিজ সাঈদের মৃত্যু ইসলামিক স্টেটকে ইরাক ও সিরিয়ার বাইরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে সম্প্রসারিত করার উদ্যোগে এক বিপর্যয়। কাবুলভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক হারুন মির এএফপিকে বলেন, মার্কিন বিমান হামলা চালিয়ে হাফিজ সাঈদকে হত্যা গ্রুপটির জন্য এক বড় আঘাত। শক্তিশালী নেতৃত্ব ছাড়া তাদের জন্য কোনো সাফল্য অর্জন করা কঠিন হবে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে আইএসের হুমকি এখনো অনেক দূরে। আইএস গত মাসে কাবুলে শিয়া হাজারা বিক্ষোভকারীদের এক সমাবেশে বোমা হামলা চালায়। ২০০১ সালের পর এটাই ছিল সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ বোমা বিস্ফোরণ। এতে ৮০ জন নিহত হয়। এতদিন আইএসের তৎপরতা শুধু নানগারহার প্রদেশেই সীমাবদ্ধ বলে মনে করা হত। সেখানে শিরñেদসহ তাদের নিষ্ঠুর কর্মকা- চলছে। কিন্তু কাবুলে এ হামলার মধ্য দিয়ে আইএস তাদের কর্মকা- বড় রকম সম্প্রসারিত করার কথাই জানান দেয়।
তবে কর্মকর্তারা এ হামলাকে আইএসের কর্মকা-ে গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা বলে মানতে অস্বীকার করেন। তারা বলেন, প্রচ- মার্কিন বিমান হামলা ও আফগান বাহিনীর স্থল অভিযানের মুখে গ্রুপটি ভীষণ চাপের মধ্যে রয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, আফগানিস্তানে গ্রুপটির নবীন উপস্থিতি এখন ক্ষীয়মাণ। গত জানুয়ারিতে তাদের যোদ্ধারা যেখানে ৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল এখন সেখানে তারা মাত্র তিনটি জেলায় তৎপর। তবে নানগারহারের অধিবাসীরা বলেন, মার্কিন ও আফগান সেনাবাহিনীর অভিযান সত্ত্বেও গ্রুপটি এ অঞ্চলে তাদের দৌরাত্ম্য বজায় রেখেছে।
নানগারহারের তালিবান-পীড়িত অন্যতম জেলা হিসকা মিনার এক উপজাতীয় নেতা বলেন, আইএসবিরোধী অভিযান চলছে এবং সরকার বলছে তারা জয়লাভ করছে। কিন্তু আইএস প্রতিরাতেই হামলা চালাচ্ছে এবং নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছেই, কমেনি।
স্থানীয় উপজাতীয় নেতারা বলেন, আইএসের চেয়ে তালিবান শক্তিশালী। তালিবান এক বছর ধরে প্রচ- লড়াইয়ের পর সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলভাবে লড়াই করতে তাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক জোট গড়েছে।
পাহাড়ি জেলা কোট থেকে গত মাসে সরকারী বাহিনী আইএসকে বিতাড়িত করেছে। সেখানকার এক উপজাতীয় নেতা বলেন, আইএস ও তালিবান পরস্পরের সাথে লড়াই বন্ধ করেছে এবং উভয়ে মিলে সরকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
নানগারহারের এক সেনা কমান্ডার আইএস ও তালিবানের মধ্যকার অনানুষ্ঠানিক জোটের কথা নিশ্চিত করেন। তবে তালিবান আইএসের সাথে হাত মেলানোর কথা অস্বীকার করেছে।
তালিবান প্রকাশ্যে আইএসের নিষ্ঠুরতার নিন্দা করার পাশাপাশি নিজেদের ইসলামী জিহাদের একমাত্র বৈধ গ্রুপ বলে দাবি করে।
আফগানিস্তানে ন্যাটো নেতৃত্বাধীন জোটের ধারণা যে আফগানিস্তানে ১৫০০ আইএস যোদ্ধা রয়েছে। এদের বেশিরভাগই পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দলত্যাগী তালিবান। সে সাথে কিছু উজবেক জঙ্গি ও নানগারহারের স্থানীয়রাও রয়েছে।
আইএস এখন পর্যন্ত হাফিজ সাঈদের পর তাদের নেতার নাম ঘোষণা করেনি। আফগানিস্তান কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের জুলাইতে মার্কিন বিমান হামলায় হাফিজ সাঈদের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তখন তিনি মারা যাননি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন