বিশেষ সংবাদদাতা : বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ভেঙে নতুন কোম্পানিকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার সুরাহা ছাড়াই দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক শেষ হয়েছে। সমস্যার সমাধান করতে বিদ্যুৎ বিভাগে আলোচনায় বসেছিল প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ও ইউনিয়নের নেতারা। উভয় পক্ষ তাদের অবস্থানে অনড় থাকায় সমঝোতা ভেস্তে যায়।
আলোচনার টেবিলে সরকার পক্ষ বলেছে, পিডিবিকে ‘কোম্পানি’ করা হবেই। আর ইউনিয়ন নেতাদের সাফ জবাব ‘না’। তবে আলোচনার একপর্যায়ে উভয় পক্ষ কিছু জায়গাতে ছাড় দিয়ে সিদ্ধান্তে আসার একটা উদ্যোগ নিলেও শেষ পর্যন্ত তাও হয়নি।
আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনেই সব হচ্ছে। আলোচনা চলছে। আশা করছি আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে এই সমস্যার সমাধান হবে।
গতকাল (রোববার) সচিবালয়ে প্রতিমন্ত্রীর কক্ষে এই আলোচনা হয়। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেও কোনো মীমাংসা না হওয়ায় ইউনিয়ন নেতারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন বলে জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী জানান। জহিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আলোচনা চলবে। কিন্তু আমাদের দাবি না মানলে আন্দোলন চলতে থাকবে। কোনোভাবেই পিডিবিকে কোম্পানি করতে দেয়া হবে না। আর কোম্পানি হলেও এখন বিদ্যুতের যেসব কোম্পানি আছে তা-সহ নতুন সব কোম্পানি পিডিবির অধীনে রাখতে হবে। সকল কোম্পানি পিডিবির অধীনে থাকলে তা মেনে নেয়া হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করে প্রতিমন্ত্রী আবার তাদের সাথে আলোচনা করবেন বলে তিনি জানান।
সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রীর সাথে ইউনিয়ন নেতাদের বৈঠকে বেশ কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, নতুন যে তিনটি কোম্পানি করা হচ্ছে তা পিডিবির অধীনেই রাখা হবে। কিন্তু ইউনিয়ন নেতারা চাইছেন, এর আগেও যে কোম্পানি হয়েছে তাও পিডিবির অধীনে নিতে।
সরকার বলছে, কেউ চাকরি হারাবে না। আগের চেয়ে সকলে বেশি বেতন পাবে। ইচ্ছে করলে যে কেউ পিডিবিতেও থেকে যেতে পারেন। পিডিবিতে থেকে ইচ্ছে করলে লিয়েনে গিয়ে কোম্পানিতে চাকরি করতে পারবেন।
আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর এক সাংবাদিকদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের শ্রমিকরা ধর্মঘট করেননি। তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। আমরা তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি।
তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে পিডিবিকে হোল্ডিং কোম্পানি করার। অথবা আইন পরিবর্তন করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) আদলে কোম্পানি করার। তবে শ্রমিকরা কোনও প্রস্তাবই মানেননি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের পূর্বেই সিদ্ধান্ত ছিল পিডিবিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর এবং পরিকল্পিতভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা সহজীকরণের লক্ষ্যে পিডিবিকে ভেঙে কোম্পানিতে রূপান্তরিত করব। বিশেষ করে রাজশাহী জোন ডিস্ট্রিবিউশনকে কোম্পানিতে রূপান্তরিত করব, সেন্ট্রাল জোন হবে একটা এবং ইস্ট জোন, সাউথ জোন করা হবে। বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে এটা পরিচালিত হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, সরকারের চিন্তা-ভাবনা আছে পিডিবিকে একটা সিঙ্গেল বায়ার হিসেবে রাখার। যেসব কোম্পানি হয়েছে এবং পরবর্তীতে হবে সেগুলোকে একটি হোল্ডিং কোম্পানির আওতায় নিয়ে আসা। যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করা যায়। অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা আরো কঠোর আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ খাতের সংস্কারের অংশ হিসেবে পিডিবির রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ১৬টি জেলার বিদ্যুৎ বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (নওপাডিকো) গঠন করা হয়। ২০০৩ সালে কোম্পানি গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও সরকার এখন তা বাস্তবায়ন করছে। সর্বশেষ ১ আগস্ট পিডিবির বোর্ড সভায় রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলের ১৬টি জেলার পিডিবির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ নওপাডিকোর কাছে হস্তান্তরের অনুমোদন হয়। এরপর থেকেই এর বিরোধিতা করে কঠোর কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ পিডিবি শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা ঐক্যপরিষদ। আন্দোলনকে ঘিরে ২ আগস্ট থেকে পিডিবিতে কোনো দাফতরিক কাজ হয়নি। অচল হয়ে পড়েছে পিডিবির কার্যক্রম।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে শ্রমিক নেতা নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি কোম্পানির কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন