শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

চট্টগ্রামে কুকুর লেলিয়ে ছাত্র হত্যা পাঁচ আসামির ফাঁসি

প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : কুকুর লেলিয়ে দিয়ে মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রি মজুমদার হিমু হত্যা মামলার রায়ে পাঁচ আসামির সবাইকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল চট্টগ্রাম মহানগর চতুর্থ অতিরিক্ত দায়রা জজ নূরুল ইসলাম জনাকীর্ণ আদালতে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামিরা হলো: সাবেক যুবলীগ নেতা শাহ সেলিম টিপু, তার ছেলে জুনায়েদ আহমেদ রিয়াদ এবং রিয়াদের তিন বন্ধু শাহাদাৎ হোসাইন সাজু, মাহাবুব আলী খান ড্যানি এবং জাহিদুল ইসলাম শাওন।
এদের মধ্যে শাহ সেলিম টিপু, শাহাদাৎ হোসাইন সাজু ও মাহাবুব আলী ড্যানি কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণার সময় তারা আদালতে হাজির ছিলেন। অপর দুই আসামি রিয়াদ শুরু থেকে এবং শাওন জামিনে গিয়ে পলাতক আছে। রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি ও অতিরিক্ত মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট অনুপম চক্রবর্তী জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালত সব আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ-ের আদেশ দিয়েছেন।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হিমাদ্রির পিতা ব্যবসায়ী প্রবীর মজুমদার ও গোপা মুজমদার। তারা দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানিয়ে বলেছেন, হিংস্র কুকুর লেলিয়ে নিরপরাধ একজন তরুণকে যারা হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দেখতে চাই। দুনিয়াতে কেউ যেন কারো সাথে আর এরকম পাশবিক আচরণ করতে না পারে সেজন্য ওই আসামিদের কঠোর সাজা হওয়া উচিত।
রায়ের খবর শুনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন হিমাদ্রির বাবা-মা। হিমাদ্রির খুনীদের ফাঁসির দাবিতে হত্যাকা-ের পর থেকে নানা আন্দোলন করে আসছিল হিমাদ্রির হাতেগড়া মাদকবিরোধী সংগঠন শেকড়। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতে এ সংগঠনের কর্মীরাও উপস্থিত ছিলেন। তারা দ্রুত রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন রায়ে অখুশী দাবি করে বলেন, উচ্চ আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করবেন। সেখানে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন বলেও দাবি করেন। নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার সামারফিল্ড স্কুল এন্ড কলেজের এ-লেভেলে পরীক্ষার্থী ছিল মেধাবী ছাত্র হিমাদ্রি। তার বাসা নগরীর হেমসেন লেইনে। ২০১২ সালের ২৭ এপ্রিল নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ব্যবসায়ী শাহ সেলিম টিপুর বাড়িতে আটকে রেখে হিমাদ্রির উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ব্যাপক মারধর করার পর তার উপর তিনটি বিদেশী হিং¯্র কুকুর লেলিয়ে দেয় আসামিরা। কুকুরের কামড়ে জর্জরিত হওয়ার পর চারতলার ছাদ থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হয় হিমাদ্রিকে। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার একটি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানোর পর বন্ধুদের কাছে তার উপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেয় হিমাদ্রি। ওই বর্ণনা মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে তার বন্ধুরা। এরপর থেকে আর কথা বলতে পারেনি হিমাদ্রি। টানা ২৬ দিন হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণা শেষে ২৩ মে মারা যায় হিমাদ্রি।
হিমাদ্রি খুনের ঘটনায় তার মামা শ্রীপ্রকাশ দাশ বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় পাঁচজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পুলিশ পাঁচজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রায় দেড় বছর পর অভিযোগ গঠনের শুনানি চারবার পিছিয়ে ২০১৪ সালের বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর মামলার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়ে শেষ হয় ১৬ জুলাই। গত বছরের ১৪ অক্টোবর ও এ বছরের ৩০ জুন আদালতে বাজিয়ে শোনানো হয় মৃত্যুর আগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেওয়া হিমুর বক্তব্যের রেকর্ড। রায় ঘোষণাও পেছানো হয় তিনবার। অবশেষে গতকাল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা হল।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন