স্টাফ রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের আল ফুরআন জামে মসজিদের বাংলাদেশী ইমাম মাও. আলাউদ্দিন আকুঞ্জি ও তার সহযোগী তারা মিয়াকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা এ ঘটনার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচরণাকে দায়ী করেছেন। নেতৃবৃন্দ ঘটনার জন্য দায়ীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। নেতৃবৃন্দ মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, একজন নিরাপরাধ ইমাম হত্যার পরও পশ্চিমা বিশ্বের নিরবতার তীব্র নিন্দা করেছেন।
ইসলামী ঐক্যজোট
ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আব্দুর রকীব এ্যাডভোকেট, মহাসচিব অধ্যপক মাও. আব্দুল করিম খান ও যুগ্ম মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাও. মো. শওকত আমীন পীর সাহেব বি’বাড়ীয়া বলেন, এই ঘটনা মুসলিম বিশ্বকে মর্মাহত করেছে এবং এটা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ কিছু কা-জ্ঞানহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীনদের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণার ফল। এসব হচ্ছে পাশ্চাত্য দুনিয়ার সন্ত্রাসী তৎপরতার উদাহরণ। তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
তাহফিজে হারামাইন পরিষদ
তাহফিজে হারামাইন পরিষদ বাংলাদেশ-এর সভাপতি মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী ইমাম ও তার সহযোগী হত্যা ঘটনার জন্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণাই দায়ী।
তিনি বলেন, এ হত্যার ঘটনায় মুসলিম বিশ্ব বিক্ষুব্ধ। মার্কিন প্রশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। তিনি অবিলম্বে প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
নেজামে ইসলাম পার্টি
বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী এক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নিউইর্য়কে ইমাম হত্যার ঘটনা রীতিমতো মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা। এতে মুসলিমবিরোধী খ্রিষ্টবাদী চক্রান্তের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।
মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী আরো বলেন, বাংলাদেশে কোনো একজন পুরোহিত কোনো কারণে মারা গেলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে ও ইহুদি-নির্ভর মার্কিন প্রশাসন ও স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা প্রতিবাদের ঝড় তোলেন। বাংলাদেশে হিন্দুদের সুরক্ষার জন্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের সচেতনভাবে চলাচলের পরামর্শ দেন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের দুজন আলেমকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলেও তারা এখন কুলুপ এঁটে দিয়েছেন। একমাত্র বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের দায়সারা বিবৃতি ছাড়া আর কারো প্রতিক্রিয় জানা যায়নি।
নিউইয়র্কে ইমাম হত্যার প্রতিবাদ
জমিয়তে উলমায়ে ইসলাম বাংলাদেশ
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা শায়েখ আব্দুল মুমিন ইমামবাড়ী ও মহাসচিব আল্লামা নূর হোছাইন কাসেমী এক বিবৃতিতে বলেছেন, নিউইয়র্কের ওজন পার্কে দুর্বৃত্তের গুলিতে বাংলাদেশী ইমাম আলাউদ্দীন আকন্ধি ও তার সহযোগীকে নিহত হওয়ার তিব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়ে নেতৃদ্বয় বলেন, হত্যার প্রকৃত হত্যাকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য দূতাবাসের মাধ্যমে আমেরিকা সরকারকে চাপে রাখতে বাংলাদেশ সরকারকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ যুক্তরাষ্ট্রের কুইন্সে বাংলাদেশী ইমাম হত্যাকে স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। এ হত্যাকা-ের পেছনে ইসলামবিদ্বেষী শক্তির হাত থাকতে পারে। তিনি বলেন, যে কারণেই হত্যা করুক তার আসল রহস্য যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্ঘাটন করতেই হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারকে এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ নিয়ে হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, ইমামসহ অপর সহযোগী পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।
যুক্তরাষ্ট্রে মাওলানা আখঞ্জি হত্যার ঘটনায় আল ইসলাহ’র নিন্দা ও শোক
বাংলাদেশ আনজুমানে আল ইসলাহ হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিউ ইয়র্কের ওজনপার্ক মসজিদ আল ফুরকানের ইমাম মাওলানা আলাউদ্দীন আখঞ্জি’র নৃশংস হত্যাকা-ের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন আন্জুমানে আল ইসলাহ’র মুহতারাম কেন্দ্রীয় সভাপতি আল্লামা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী ও মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা একে.এম মনোওর আলী। হযরত আল্লাম ফুলতলী ছাহেবে’র (র.)-এর একজন একনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন দীনি কাজে তিনি অত্যন্ত বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন। সারা জীবন তিনি মানুষকে সঠিক আকীদা ও আমলের পথে আহ্বান করে গেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেনÑ দিন-দুপুরে প্রকাশ্যে একজন ইমামকে গুলি করে হত্যা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ হত্যাকা-ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন ও মর্মাহত। আমরা এ নির্মম হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করার জন্য মার্কিন প্রশাসনকে আহ্বান জানাই। নেতৃবৃন্দ শহীদ আখঞ্জি’র শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও গভীর সমবেদনা জানান। তারা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মরহুমের রুহের মাগফিরাত ও জান্নাতের উচ্চ মাকাম প্রদানের দু’আ করেন।
তাহফিজে হারামাইন পরিষদ
প্রেস বিজ্ঞপ্তি : তাহফিজে হারামাইন পরিষদ বাংলাদেশ-এর সভাপতি ও ভাটারা জামিয়া মদীনাতুল উলূম-এর মুহতামিম মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী এক বিবৃতিতে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী একজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ইমাম মাওলানা আলাউদ্দিন আকুনজি ও তাঁর সহকারী মুয়াজ্জিন তারা মিয়াকে গুলি করে হত্যা করার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুসলিমবিদ্বেষী প্রচারণা এ মর্মান্তিক হত্যাকা-ের জন্য দায়ী।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে হত্যার ঘটনায় মুসলিম বিশ্ব বিক্ষুব্ধ। মার্কিন প্রশাসনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ হত্যাকা-ের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে। তিনি অবিলম্বে প্রকৃত হত্যাকারীকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবী জানান।
মাওলানা সাদেক আহমদ সিদ্দিকী আরো বলেন, বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার কৃতী সন্তান মাওলানা আলাউদ্দিন আকুনজি ছিলেন একজন প্রসিদ্ধ আলেম ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় নিরহঙ্কার ব্যক্তিত্ব। কারো সাথে তাঁর কোন বিরোধ ছিল না। আমরা নিহত ইমাম ও মুয়াজ্জিনের রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন