শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

আখাউড়া-আগরতলা রেললাইন হচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া জংশন থেকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী আগরতলার মধ্যে নতুন একটি রেলরুট তৈরি হতে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠক। এটিসহ মোট ১ হাজার ৯৫ কোটি টাকার ৬টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে অনুষ্ঠিত একনেকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯৫ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৬৭৪ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ৪২০ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকা যোগান দেয়া হবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৫ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মাণে ব্যয় হবে হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ১০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণে ব্যয় হবে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছর এ রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু হবে। ২০১৯ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ভারত থেকে ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অনুদান পাওয়া যাবে। ব্রডগেজ ও মিটার গেজ দুই মাধ্যমেই দুই দেশের মধ্যে রেললাইনটি নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশের দিকে প্রথম স্টেশন হবে গঙ্গাসাগর। গঙ্গাসাগর থেকে আখাউড়ার মধ্যে বর্তমান স্টেশনের পাশ দিয়ে তৈরি হবে নতুন রেল লাইন। এছাড়া ত্রিপুরা রাজ্যের দিকে ৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করবে ভারত। আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে নিশ্চিন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে এ রেলপথ। নিশ্চিন্তপুরে হবে সীমান্ত স্টেশন ও রেল ইয়ার্ড।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় আগরতলা-আখাউড়া রেল সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে অনুলিপি চূড়ান্ত হয়েছিল। ভারতের পক্ষে এতে সই করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। গত বছরের জুনে ঢাকা সফরকালে এই প্রকল্পে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ত্রিপুরার রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ দুই দেশের যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তাছাড়া এটি হলে বিদ্যমান আগরতলা-কলকাতা রেলপথ ব্যবহার করেই আখাউড়া থেকে কলকাতা পর্যন্ত যাওয়া যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শক্তিশালী দেশগুলোর অধিকাংশই মন্দা অতিক্রম করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি খারাপ যাচ্ছে। চায়না, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার প্রবৃদ্ধিও খুব একটা ভাল যাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে আমাদের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি অর্জনসহ টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রান্তিক জনগোগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মুলস্রোতধারায় স¤পৃক্ত করতে হবে । এ জন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধিকহারে ছোট ছোট প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে ।
তিনি বলেন, শাহপরীর দ্বীপ বাঁধ নির্মাণের সময় বাঁধের পাড় মজবুত করে বেঁধে গাছ লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, এখন থেকে গৃহ নির্মাণের বড় প্রকল্পের পাশাপাশি ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। বর্তমানে ১২০০ থেকে প্রকল্পের সংখ্যা ১৫০০ হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষদের অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে এসব ছোট প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। যাতে প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
তিনি বলেন, কামার, কুমার, বেদে, জেলে, নাপিত, কাঠমিস্ত্রি, মিষ্টির কারিগর ও বাঁশ বেতের যারা কাজ করে তাদের জন্য প্রকল্প নেওয়া হবে।
একনেকের সভায় অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে, ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ টাকা। কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলার শাহপরীর দ্বীপে পোল্ডার নং-৬৮ এর সী-ডাইক অংশে বাঁধ পুনঃনির্মাণ ও প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা। চট্টগ্রাম জেলার বাপাউবোর আওতায় উপকূলীয় অঞ্চলের পোল্ডার নং ৬১/১ (সীতাকুন্ড), ৬১/২ (মীরসরাই) ও ৭২ (সন্দ্বীপ) এর বিভিন্ন অবকাঠামোসমূহের ভাঙ্গন প্রতিরোধ, নিষ্কাশন এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য পুনর্বাসন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা। নগরভিত্তিক প্রান্তিক মহিলা উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ঢাকার শেরেবাংলা নগরস্থ বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন সচিবালয় কমপ্লেক্স নির্মাণ (৮ থেকে ১১তলা) (৩য় পর্ব) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনা সচিব তারিক উল ইসলাম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. শামসুল আলম, খুরশেদ আলম চৌধুরী, জুয়েনা আজিজ, আব্দুল মান্নান, এ এন সামসুদ্দিন আজাদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন