নয়া সংকটে নিপতিত হয়েছে জম্মু-কাশ্মির। এ সংকটের মূল হচ্ছে রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা পুনরুদ্ধার। এ দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে। গত ১৬ অক্টোবর রাজ্যটির সক্রিয় প্রায় সব ছোট-বড় দল মিলে নতুন জোট গঠন করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘পিপলস অ্যালায়েন্স ফর গুপকার ডিক্লারেশন’ (পিএজিডি)। এই জোটে রয়েছে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি), ন্যাশনাল কনফারেন্স, পিপলস কনফারেন্স, পিপলস মুভমেন্ট, সিপিএম ও অন্যান্য ছোট দল। পিএজিডি’র প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্সের প্রধান ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডা. ফারুক আব্দুল্লাহ। জোট প্রতিষ্ঠার পর ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এই জোট কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা ফেরানোর চেষ্টা করবে। জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদার জন্য আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। জম্মু-কাশ্মিরের সমস্যা রাজনৈতিক। কারাগারে এখনও অনেক লোক রয়েছেন যাদের মুক্তি দেওয়া উচিত।’ এর আগের দিন ফারুক আবদুল্লাহর বাড়িতে নয়া জোট গঠন নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিপি) প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতি, পিপলস কনফারেন্সের চেয়ারম্যান সাজ্জাদ লোন, পিপলস মুভমেন্টের নেতা জাভেদ মির ও সিপিএমের মহম্মদ ইউসুফ তারিগামি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জম্মু-কাশ্মির কংগ্রেস প্রধান গুলাম মির শারীরিক অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। এই বৈঠকেই জোট গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরবর্তীতে এই জোটের নেত্রী ও সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এক সংবাদ সম্মেলনে জম্মু-কাশ্মির নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের বিরুদ্ধে নতুন করে সংগ্রামের ডাক দিয়ে বলেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরের পতাকা ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত তিনি ভারতের জাতীয় পতাকা তুলবেন না। জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত তিনি নির্বাচনেও লড়বেন না।’ অপরদিকে, পিএজিডিকে ‘পাকিস্তানের হাতের পুতুল’ বলে অভিহিত করেছে বিজেপি সরকার। আইনমন্ত্রী রবি শংকর প্রসাদ বলেছেন, ‘জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।’ মেহবুবার মন্তব্যের পর তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ তুলে তাঁকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি করেছে জম্মু-কাশ্মিরের বিজেপির সভাপতি রবীন্দ্র রায়না।
অন্যদিকে, গত ১৩ অক্টোবর চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাঁও লিজিয়ান বলেছেন, ‘প্রথমেই আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, চীন লাদাখকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। এখানে এবং অরুণাচল প্রদেশকে ভারত অবৈধভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমরা সামরিক উদ্দেশ্যে সীমান্তে অবকাঠামোগত উন্নয়নের বিরোধী।’ চীনের এই মন্তব্যের প্রতুত্তরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘লাদাখ নিয়ে চীনের কিছু বলারই অধিকার নেই। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখ ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।’ এই লাদাখ নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধের দামামা বাজছে কয়েক মাস যাবত। উভয় দেশই ভূ-পৃষ্ঠ থেকে কয়েক হাজার মিটার উঁচু বরফাচ্ছাদিত অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক সেনা ও সামরিক অস্ত্র মোতায়েন করেছে। ছোট-খাট যুদ্ধও হয়েছে। তাতে জান-মালের ক্ষতি হয়েছে। লাদাখ থেকে সেনা সরানোর জন্য উভয় দেশের মধ্যে সামরিক ও বেসামরিক বৈঠক হয়েছে বহুবার। এ নিয়ে রাশিয়াও মধ্যস্থতা করেছে। তবুও লাদাখ সংকট নিরসন হয়নি। উভয় দেশের বিপুল সেনা মুখোমুখি হয়েই আছে। এই অঞ্চল নিয়ে ১৯৬২ সালে দু’দেশের মধ্যে প্রচন্ড যুদ্ধ হয় এবং তাতে চীন বিশাল এলাকা দখল করে নেয় এবং তা এখনও বহাল রেখেছে।
২০১৯ সালের ৫ আগস্ট জম্মু-কাশ্মিরের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন ওই রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা (সংবিধানের ৩৭০ ধারা) বাতিল করে জম্মু-কাশ্মির ও লাদাখ দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করে দেয়ার আইন পাশ হয় ভারতের সংসদে। পরবর্তীতে বিষয়টি রাজ্যসভায়ও অনুমোদিত হয় এবং রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আইনে পরিণত হয়। উপরন্তু দু’টি অঞ্চলে দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হয়। অথচ সংবিধানের এই ৩৭০ ধারা বলেই কাশ্মির ভারতের অন্তর্ভুক্ত হয়। তাই জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় রাজ্যটির রাজনীতিবিদরা চরম ক্ষুব্ধ হন। পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির মতে, ‘১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে যোগ না দেওয়া ভুল ছিল।’ রাজ্য সভায় বিরোধী দলীয় নেতা গুলাম নবী আজাদ বলনে, ‘ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিকভাবে কাশ্মিরের যে অনন্য চরিত্র, কলমের এক খোঁচায় বিজেপি সেটা বরবাদ করে দিতে চাইছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, জম্মু-কাশ্মির এমন একটি রাজ্য, যার সংস্কৃতি, ইতিহাস, ভূগোল, রাজনীতি সবই বাকি দেশের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এই রাজ্যের লাদাখে বৌদ্ধ ও মুসলিমরা থাকেন, কাশ্মিরে থাকেন মুসলিম, পন্ডিত ও শিখরা, আর জম্মুতে জনসংখ্যার ৬০% হিন্দু, বাকি ৪০% মুসলমান। এমন একটি রাজ্যকে যদি কেউ এক সূত্রে বেঁধে রাখতে পারে, সেটা হচ্ছে সংবিধানের ৩৭০ ধারা।’ তার এই বক্তব্যকে বিরোধী এমপিরা ব্যাপকভাবে টেবিল চাপড়িয়ে সমর্থন করেন। রাজ্যের সাধারণ মানুষও বিজেপি সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন। বিক্ষুব্ধ জনতাকে স্তব্ধ করার জন্য রাজ্যব্যাপী কারফিউ জারি, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ এবং নতুন করে ৫ লাখ সেনা মোতায়েন করা হয়। রাজ্যবাসীর সুরক্ষার স্বার্থ দেখিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লা, ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিকে প্রথমে গৃহবন্দি এবং পরবর্তীতে আটক করে বন্দি শিবিরে রাখা হয়। বর্ষীয়ান নেতা ফারুক আবদুল্লা অবশ্য গৃহবন্দিই ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয় জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ)। এছাড়া, বিভিন্ন দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়। সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যটির জনজীবন স্থবির হয়ে পড়ে। জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পরিপ্রেক্ষিতে অন্য যেসব রাজ্যে বিশেষ মর্যাদা আছে, তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের প্রচন্ড বিরোধিতা করে। সমগ্র ভারতের মুসলমানরাও সরকারের এই হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রচন্ড বিরোধিতা করে। কংগ্রেস এবং বাম দলগুলোও সরকারের এ সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করে। তবুও সরকার তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। উপরন্তু জম্মু-কাশ্মিরে হিন্দু পন্ডিতদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং বিনিয়োগের নানা সুবিধা প্রদান করে। সর্বোপরি সরকার বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বছরপূর্তির দিকে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দেন। তথাপিও রাজ্যটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়নি। তারা চরম ক্ষুব্ধ হয়েই আছে। সব কিছু অচল হয়ে থাকায় রাজ্যটির অর্থনীতিও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় রাজ্যটিতে চলছে ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। গত ২৯ অক্টোবর দক্ষিণ কাশ্মিরের কুলগামে তিন বিজেপি কর্মীকে গুলি করে খুন করে অজ্ঞাত জঙ্গিরা। এর আগে গত জুলাই মাসে সন্ত্রাসবাদীদের বুলেটে ঝাঁজরা হয়েছে রাজ্যটির প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি ওয়াসিম বারির শরীর। বাড়ির সামনে মৃত্যু হয় তাঁর বাবা ও ভাইয়েরও। অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মিরের শান্তি ও উন্নতি তিরোহিত হয়েছে। এভাবে ভূস্বর্গ বলে খ্যাত কাশ্মির নরকে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত ভারতের ‘পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ইনডেক্স-২০২০ মতে, ‘কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে সুশাসনের দিক দিয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে আন্দামান, জম্মু ও কাশ্মির এবং নিকোবর।’ জম্মু-কাশ্মিরের সাংবাদিক ও মিডিয়া পর্যন্ত চরম নিপীড়নের শিকার হয়েছে। রাজ্যটিতে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা ৮০ লাখের বেশি।
এই অবস্থায়ও ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার আইন পরিবর্তন করে জম্মু-কাশ্মিরে সব ভারতীয়কে জমি কেনার অধিকার দিয়েছে সম্প্রতি। এর প্রতিবাদে পিডিপি নেতা-কর্মীরা ব্যাপক বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পুলিশ বেশ কিছু পিডিপি নেতা-কর্মীকে আটক করেছে। আটক ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা ওই আইনকে ‘কালো আইন’ বলে অভিহিত করেছেন। পিএজিডি’র পক্ষ থেকেও ভূমি আইন সংশোধনের নিন্দা করা হয়েছে এবং এর মোকাবিলায় সমস্ত ফ্রন্টে আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়েছে। এ ব্যাপারে কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক বলেছেন, ‘ভারতের ১১টি রাজ্য আছে যেখানে জায়গা কেনা যায় না।কেবলমাত্র কাশ্মিরের ক্ষেত্রে এটা (নয়া ভূমি আইন) করা হচ্ছে। তার কারণ হচ্ছে, কাশ্মিরের জনবিন্যাস পাল্টে দেওয়া এবং সেখানে ভোটে জেতার চেষ্টা করা।’ উল্লেখ্য যে, ভারতের সংবিধানের ৩৫-এ অনুচ্ছেদ মোতাবেক শুধুমাত্র ‘স্থায়ী বাসিন্দা’রাই জম্মু-কাশ্মিরে স্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারতেন।’
যা’হোক, ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিরুদ্ধে ব্যাপক সোচ্চার হয়েছে পাকিস্তান। এ ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। স¤প্রতি তিনি ভারতের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি আলোচনার জন্য প্রস্তুত কিন্তু এর জন্য যেভাবে কাশ্মিরকে সামরিকভাবে দখল করে রেখেছেন তার অবসান ঘটানো প্রয়োজন। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিষয়টি হলো জাতিসংঘ প্রস্তাবনা অনুযায়ী কাশ্মিরের মানুষের স্বাধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে আপনাদের। পাকিস্তান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের বিষয়টি উত্থাপন করে। এ ক্ষেত্রে পূর্ণ সহায়তা করেছে চীন। বিশ্বের মুসলমানরাও চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন ভারতের এ সিদ্ধান্তে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সোচ্চার আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতে। এ নিয়ে ভারত তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়।তবুও এরদোয়ান একটুও সুর নরম করেননি। জম্মু-কাশ্মিরের মানুষের আকাক্সক্ষার পক্ষে জোরালো ভূমিকা পালন অব্যাহত রেখেছেন। মালয়েশিয়াও এ ব্যাপারে ব্যাপক সোচ্চার হয়েছে।তবে ওআইসি এবং আরব লীগ মোটামুটি নীরব ভূমিকা পালন করেছে।সংস্থাটির প্রধান দেশগুলো ভারতের সাথে সম্পর্ক খারাপ করে বিশাল বাজার হারানোর ঝুঁকি গ্রহণ করেনি। তারা জাতিগত বিষয়ের চেয়ে নিজেদেরে আর্থিক সুবিধাকেই প্রাধান্য দিয়েছে বেশি।
অবস্থার এই পটভূমিতে জম্মু-কাশ্মিরের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো জোট গঠন করে রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা পুনরুদ্ধারের ডাক দিয়েছে। আর সরকার তাদের সে দাবী প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে সরকার রাজনৈতিক দলগুলো মুখোমুখি অবস্থানে উপনীত হয়েছে। এতে শামিল হতে পারে চীন। কারণ, দেশটি লাদাখকে ভারতের অংশ মনে করে না। আর ভারত লাদাখকে দেশটির অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে। তাই লাদাখ নিয়ে চীন-ভারত সংকট আরও তীব্রতর হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পাশে থাকতে পারে। কারণ, সম্প্রতি দু’টি দেশের মধ্যে সামরিক চুক্তি হয়েছে। চীনের সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থান ঠেকানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শক্ত অবস্থান গড়ে তোলার চেষ্টা করছে ভায়া ভারত। দেশটির ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দ ঘনঘন এ ফঞ্চল সফর করছেন। কিন্তু তাতে তেমন সাড়া পাচ্ছে না। কারণ, এ অঞ্চলের মানুষ সামরিক শক্তি বৃদ্ধির চেয়ে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে বেশি। আর তাতে পূর্ণাঙ্গ সহায়তা করছে চীন। অর্থাৎ ভারত ছাড়া এ অঞ্চলের কোন দেশই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ফাঁদে পা দিচ্ছে না।এমনকি কোয়াডেও অংশগ্রহণ করছে না, যা অত্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্ত বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। জম্মু-কাশ্মিরের ব্যাপারে পাকিস্তানীরা মরণপণ যুদ্ধ করতেও প্রস্তুত। সেভাবে কথা-বার্তাও বলে সার্বক্ষণিক। অন্যদিকে, নেপালও পাকিস্তানের পর এবার সৌদি আরব ম্যাপ পরিবর্তন করেছে। ভারতের ম্যাপ থেকে জম্মু ও কাশ্মির এবং লাদাখ বাদ দিয়েছে। এ বছর জি-২০ বৈঠকের আয়োজক দেশ সৌদি আরব। সে উপলক্ষে দেশের মানিটারি অথরিটি একটি ব্যাঙ্ক নোট তৈরি করেছে। যেখানে জি-২০ সদস্য দেশ হিসেবে ভারতের ম্যাপ দেয়া হয়েছে। সেই ম্যাপে জম্মু-কাশ্মির এবং লাদাখকে বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। গত ২৪ অক্টোবর ওই নোটটি প্রকাশিত হয়েছে। ভারত সরকার এর তীব্র প্রতিবাদ করেছে এবং সৌদি আরবকে দ্রুত ভুল সংশোধনের আবেদনও জানিয়েছে। সব মিলে জম্মু-কাশ্মিরে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে চলেছে। সে অবস্থায় রাজ্যটি পূর্ণ স্বাধীনতাও ঘোষণা করতে পারে। এটা হলে জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত-গণভোটের মাধ্যমে সংকট নিরসন জোরদার হতে পারে বিশ্ববাসীর কাছে। স্মরণীয় যে, ১৯৪৭ সালে কাশ্মিরের মহারাজা হরি সিং ভারতের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ভারত সেনা অভিযান চালিয়ে কাশ্মির দখল করে নেয়।এর পর পাকিস্তান আক্রমণ চালিয়ে আজাদ কাশ্মির দখল করে নেয়। এ নিয়ে দু’দেশের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ বেধে যায়। পাকিস্তান জম্মু-কাশ্মিরও দখল করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সেনা প্রধান তাতে আপত্তি জানান। সে সময় দেশটির সেনা প্রধান ছিলেন একজন বৃটিশ। ভারত বিষয়টি জাতি সংঘে উত্থাপন করে। এই অবস্থায় ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘ কাশ্মির প্রশ্নে একটি প্রস্তাব পাশ করে।তাতে বলা হয়, ‘জম্মু ও কাশ্মিরের সাধারণ মানুষ গণভোটের মাধ্যমে কাশ্মিরের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।’ কিন্তু ভারত সে সিদ্ধান্ত কখনো বাস্তবায়ন করেনি। বরং ১৯৭২ সালে সিমলা চুক্তির বলে কাশ্মির সংকটকে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে পরিণত করেছে ভারত। আর এই কাশ্মিরই হচ্ছে পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী ভারত-পাকিস্তানের চির বৈরিতার প্রধান কারণ। লাদাখ নিয়ে ভারতের বৈরিতার কারণ চীনের সাথে। এ অবস্থায় জার্মানির সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন ‘ডের স্পিগেল’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, ভারতে এখন উপমহাদেশের সবচেয়ে চরমপন্থী ও বর্ণবাদী সরকার রয়েছে। তাই এ অঞ্চলকে হটস্পট উল্লেখ করে যেকোনো সময় সেখানে বিশৃঙ্খলা হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তিনি।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন